চট্টগ্রাম বন্দরমুখী টোল সড়ক এক ঘণ্টা বন্ধ রেখে শ্রমিকদের অবস্থান
Published: 26th, November 2025 GMT
চট্টগ্রাম বন্দরমুখী টোল সড়ক এক ঘণ্টা বন্ধ রেখে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সড়কটি অবরোধ করেন তাঁরা। সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে বন্দরকে যুক্ত করেছে। এটি বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম নগরের ভেতর দিয়েই কনটেইনারবাহী যানবাহন চলাচল করছে।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের এছহাক ডিপো–সংলগ্ন টোল প্লাজার অদূরে শতাধিক শ্রমিক সড়কে অবস্থান করছেন। এ সময় টোল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের আশ্বাসে এক ঘণ্টা পর সোয়া ১১টার দিকে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
বন্দর অঞ্চলের উপপুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকেরা বন্দর এলাকার বাইরে টোল সড়কে অবরোধ করেছেন। তাঁদের বোঝানো হয়েছে বন্দর সচল রাখতে। পরে তাঁরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার চুক্তির প্রতিবাদে এবং লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনালে বিদেশি অপারেটরদের ইজারার চুক্তি বাতিলের দাবিতে আজ বন্দরমুখী সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে স্কপ। গত শনিবার স্কপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঘোষণা অনুযায়ী, নগরের তিন মোড়ে অবরোধের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল হওয়ারও কথা রয়েছে। শ্রমিক নেতারা বলছেন, বন্দরের এনসিটি একটি লাভজনক টার্মিনাল। এটি বিদেশিদের ইজারা দিতে তড়িঘড়ি করছে সরকার। অন্যদিকে লালদিয়া চুক্তির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হয়েছে। বন্দর জনগণের সম্পদ। জনগণের আড়াল করে চুক্তির বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল ১০টা থেকে নগরের হালিশহরের বড়পুল এলাকায়ও প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করে স্কপ। এতে সমর্থন জানায় পরিবহনশ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা। কর্মসূচির শুরুতে সমাবেশ করেন তাঁরা। সেখানে কর্মসূচির সমর্থনে বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতারা।
সমাবেশে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস কে খোদা তোতন বলেন, ‘আমরা চাইলেই বন্দর অচল করে দিতে পারি। কিন্তু আমরা সময় দিচ্ছি। বিদেশিদের টার্মিনাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন।’ শ্রম অধিকারকর্মী ফজলুল কবির বলেন, ‘বন্দর কোনোভাবেই বিদেশিদের হাতে দেওয়া যাবে না।’
আদালতের রায় ৪ ডিসেম্বরএদিকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিট আবেদনের রায় আগামী ৪ ডিসেম্বর দেবেন হাইকোর্ট। ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এই চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের এ দিন ধার্য করেন।
নিউমুরিং টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে, মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগে। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের বেশির ভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন করা হয়। এটি পরিচালনা করছিল সাইফ পাওয়ারটেক। তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ৬ জুলাই। এরপর নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড এটি পরিচালনার দায়িত্ব পায়।
এই টার্মিনাল পরিচালনায় ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক হয়েছিল। এখন বিদেশি এই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ এগিয়ে নিতে চাইলে তার বৈধতার প্রশ্নে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
অন্যদিকে লালদিয়া ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে সম্প্রতি। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। এ ছাড়া ২২ বছরের জন্য পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম বন্দরমুখী টোল সড়ক এক ঘণ্টা বন্ধ রেখে শ্রমিকদের অবস্থান
চট্টগ্রাম বন্দরমুখী টোল সড়ক এক ঘণ্টা বন্ধ রেখে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে সড়কটি অবরোধ করেন তাঁরা। সড়কটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে বন্দরকে যুক্ত করেছে। এটি বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম নগরের ভেতর দিয়েই কনটেইনারবাহী যানবাহন চলাচল করছে।
সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের এছহাক ডিপো–সংলগ্ন টোল প্লাজার অদূরে শতাধিক শ্রমিক সড়কে অবস্থান করছেন। এ সময় টোল সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাঁদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের আশ্বাসে এক ঘণ্টা পর সোয়া ১১টার দিকে সড়ক ছেড়ে দেন আন্দোলনকারীরা।
বন্দর অঞ্চলের উপপুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকেরা বন্দর এলাকার বাইরে টোল সড়কে অবরোধ করেছেন। তাঁদের বোঝানো হয়েছে বন্দর সচল রাখতে। পরে তাঁরা সড়ক ছেড়ে দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার চুক্তির প্রতিবাদে এবং লালদিয়ার চর ও পানগাঁও টার্মিনালে বিদেশি অপারেটরদের ইজারার চুক্তি বাতিলের দাবিতে আজ বন্দরমুখী সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে স্কপ। গত শনিবার স্কপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঘোষণা অনুযায়ী, নগরের তিন মোড়ে অবরোধের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল হওয়ারও কথা রয়েছে। শ্রমিক নেতারা বলছেন, বন্দরের এনসিটি একটি লাভজনক টার্মিনাল। এটি বিদেশিদের ইজারা দিতে তড়িঘড়ি করছে সরকার। অন্যদিকে লালদিয়া চুক্তির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হয়েছে। বন্দর জনগণের সম্পদ। জনগণের আড়াল করে চুক্তির বিষয়টি রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সকাল ১০টা থেকে নগরের হালিশহরের বড়পুল এলাকায়ও প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করে স্কপ। এতে সমর্থন জানায় পরিবহনশ্রমিকদের কয়েকটি সংগঠন ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতা-কর্মীরা। কর্মসূচির শুরুতে সমাবেশ করেন তাঁরা। সেখানে কর্মসূচির সমর্থনে বক্তব্য দেন শ্রমিক নেতারা।
সমাবেশে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস কে খোদা তোতন বলেন, ‘আমরা চাইলেই বন্দর অচল করে দিতে পারি। কিন্তু আমরা সময় দিচ্ছি। বিদেশিদের টার্মিনাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন।’ শ্রম অধিকারকর্মী ফজলুল কবির বলেন, ‘বন্দর কোনোভাবেই বিদেশিদের হাতে দেওয়া যাবে না।’
আদালতের রায় ৪ ডিসেম্বরএদিকে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া নিয়ে করা রিট আবেদনের রায় আগামী ৪ ডিসেম্বর দেবেন হাইকোর্ট। ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এই চুক্তি-সম্পর্কিত প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুলের ওপর শুনানি শেষে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের এ দিন ধার্য করেন।
নিউমুরিং টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে, মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগে। চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের বেশির ভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন করা হয়। এটি পরিচালনা করছিল সাইফ পাওয়ারটেক। তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ৬ জুলাই। এরপর নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড এটি পরিচালনার দায়িত্ব পায়।
এই টার্মিনাল পরিচালনায় ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারক হয়েছিল। এখন বিদেশি এই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষ এগিয়ে নিতে চাইলে তার বৈধতার প্রশ্নে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
অন্যদিকে লালদিয়া ও কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার জন্য দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে সম্প্রতি। লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে ডেনমার্কের এপি মোলার মায়ের্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। এ ছাড়া ২২ বছরের জন্য পানগাঁও নৌ টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান মেডলগ এসএ।