ই-কমার্স ও এফ-কমার্সসহ ডিজিটাল ব্যবসার নিবন্ধনে ভোগান্তি
Published: 26th, November 2025 GMT
ডিজিটাল ব্যবসার ক্ষেত্রে ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (ডিবিআইডি) বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই সেবা পেতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ই–কমার্স, এফ–কমার্সসহ এ খাতের ব্যবসায়ীরা। ডিবিআইডি নিবন্ধন সেবা দেয় যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর বা আরজেএসসি। সরকারি এই সংস্থা বলছে, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন প্রকল্প এসপায়ার টু ইনোভেটের (এটুআই) অসহযোগিতার কারণে তারা ভালোভাবে এই সেবা দিতে পারছে না। এ কারণে প্রতিদিন ডিবিআইডির আবেদন জমা পড়লেও সেগুলোর নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
আরজেএসসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কারিগরি সমস্যা, অর্থের সংকট ও লোকবলের অভাবে এ সেবা দিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত দপ্তর আরজেএসসি ১১ মাস ধরে এ সমস্যা সমাধানের অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা চিঠি পাঠিয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়, ডিবিআইডি ব্যবস্থা সচল রাখা ও রক্ষণাবেক্ষণে যথেষ্ট বাজেট নেই আরজেএসসির। তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) জানা পর্যাপ্ত জনবল ও আইটি অবকাঠামোরও ঘাটতি রয়েছে। আরজেএসসি বলছে, ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর ডিবিআইডি সিস্টেম চালু ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বাজেট চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে এ খাতে কোনো বাজেট বরাদ্দ দেয়নি সরকার। ডিবিআইডি নিবন্ধন সেবাটি আরজেএসসির অতিরিক্ত দায়িত্ব।
জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এ নিয়ে একটা বৈঠক করেছি। আশা করছি, শিগগির সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে।’
জমে আছে ১২ হাজার আবেদন
২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ডিবিআইডি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত ডিবিআইডি নিয়েছে ১ হাজার ৮৭০টি প্রতিষ্ঠান। আর নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আবেদন ঝুলে আছে প্রায় ১২ হাজার।
আরজেএসসি থেকে ডিবিআইডি পাওয়া কুইক পে বিডির স্বত্বাধিকারী রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৩ সাল থেকে অন্তত চার বার চেষ্টা করার পর তাঁর আবেদন অনুমোদিত হয়েছে এবং দুই মাস আগে ডিবিআইডি পেয়েছেন তিনি। দুই বছরের বেশি সময় ঝুলন্ত অবস্থায় থেকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন বলে জানান।
আরজেএসসির সামনে দেখা হওয়া আরিফ মোহাম্মদ নামের একজন জানান, এক বছর আগে ডিবিআইডির জন্য অনলাইনে আবেদন করলেও তা অনুমোদিত হয়নি। তাই তিনি সরাসরি কথা বলতে এসেছেন। কিন্তু অফিসে ঢুকতে কর্মচারীরা বাধা দিচ্ছেন।
* ডিবিআইডি ছাড়া ই–কমার্স বা এফ–কমার্স ব্যবসা করা যায় না।* ঝুলে আছে ১২ হাজার ডিবিআইডির আবেদন।
* এখন পর্যন্ত ডিবিআইডি নিয়েছে ১ হাজার ৮৭০টি প্রতিষ্ঠান।
* প্রতিদিন ২০-২৫ জন নিবন্ধন করতে না পেরে আরজেএসসিতে অভিযোগ করছে।
ডিবিআইডি–সংক্রান্ত নির্দেশিকা অনুযায়ী, ওয়েবসাইট বা সোশ্যাল মিডিয়া, যেখানেই ব্যবসা পরিচালনা করা হোক না কেন, সেখানেই ডিবিআইডি বাধ্যতামূলক। ডিবিআইডির আবেদনের সঙ্গে আবেদনকারী, প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, পরিচালক ও বাড়ির মালিকের জাতীয় পরিচয়পত্র, ট্রেড লাইসেন্স, কোম্পানির নিবন্ধন নম্বর, ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর, আয়কর নিবন্ধন নম্বর ও অফিস যদি ভাড়ায় থাকে, সে ক্ষেত্রে বাড়ির মালিকের সঙ্গে ভাড়ার চুক্তি ইত্যাদি জমা দিতে হয়।
আরজেএসসি সূত্রগুলো বলছে, ডিবিআইডি সেবাটি তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের আওতাধীন প্রকল্প এসপায়ার টু ইনোভেটের (এটুআই) ‘মাই গভ’ প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত। অর্থাৎ আরজেএসসি কতটা ডিবিআইডি সেবা দিতে পারছে, তা পুরোপুরি নির্ভর করে মাই গভের কার্যকারিতার ওপর। অথচ এই মাই গভ টিমের অসহযোগিতার জন্য অনলাইনে এখন আবেদন করতে ব্যর্থ হচ্ছেন সেবাগ্রহীতারা। সেবা না পেয়ে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন সেবাগ্রহীতা এ বিষয়ে অভিযোগ দাখিল করছেন আরজেএসসিতে।
আরজেএসসির নিবন্ধক এ কে এম নূরুন্নবী কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিবিআইডি সেবাটি ভালোভাবে দিতে আরজেএসসির সমস্যা হচ্ছে। সমস্যার কারণগুলো আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এটুআইকে জানিয়েছি এবং সমাধানের অপেক্ষায় আছি।’
বাড়ছে গ্রাহক ভোগান্তি
আরজেএসসি নিবন্ধক সম্প্রতি বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমানকে দেওয়া এক চিঠিতে বলেছেন, কোনো ধরনের নোটিশ বা পূর্বানুমতি ছাড়া ডিবিআইডির লাইভ সিস্টেম একাধিকবার ডাউন করা হয়েছে। এ বিষয়ে এটুআইয়ের নির্দিষ্ট কোনো ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা নেই। ফলে আরজেএসসিকে এ বিষয়ে যোগাযোগ করতে হয় এটুআইয়ের নিয়োগ করা তৃতীয় পক্ষের দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
ডিবিআইডি প্ল্যাটফর্ম তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য রকমারি আইটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান মাইসফট হ্যাভেন (বিডি) লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করেছিল সরকার। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ২০২৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত মেয়াদে ৯৮ লাখ টাকার চুক্তি করা হয়। অন্যদিকে সেন্ট্রাল কমপ্লেইন্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যাটফর্মের জন্য থ্রিডেভস আইটি লিমিটেড নামের আরেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা হয় ৫১ লাখ টাকায় চুক্তি। ভেন্ডরদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। কিন্তু প্ল্যাটফর্ম দুটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনো বুঝে পায়নি।
জনগণের কাছে নিরবচ্ছিন্ন ও নির্ভরযোগ্য ডিবিআইডি সেবা দেওয়ার জন্য দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠান আরজেএসসি এ কথা উল্লেখ করে এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালকের কাছে আলাদা চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ডিবিআইডি সেবাটি আগের চেয়ে বেশি কারিগরি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সেবাগ্রহীতারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এবং তাঁদের কাছে আরজেএসসির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
যোগাযোগ করলে এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক আবদুর রফিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি এত দিন আমার নজরে আসেনি। মনে হচ্ছে, এ নিয়ে আলোচনায় বসলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম প রথম আল ক ড ব আইড র প রকল প র ন বন কম র স র জন য সমস য ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ভাই–বোন না থাকলে জীবনের যে ৭টি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবেন
ছবি: অধুনা