ভারতে আটক ১৯ জেলে ৯৭ দিন পর বাড়ি ফিরলেন
Published: 12th, December 2025 GMT
ভোলার সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের ১৯ জেলে ৯৭ দিন ভারতে আটক থাকার পর দেশে ফিরেছেন। গত বুধবার রাতে তাঁরা নিজ নিজ বাড়ি ফিরেছেন।
দেশে ফেরত জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিগ্ভ্রান্ত হয়ে তাঁদের বহনকারী ট্রলার ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে যায়। পরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাঁদের আটক করে।
দেশে ফেরা জেলেরা হলেন সফিজল ব্যাপারী (মাঝি), শাহে আলম, ছিডু মুন্সি, রাজীব চন্দ্র দাস, আক্তার হোসেন, মিন্টু হাওলাদার, মো.
জেলে ও স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, ৫ সেপ্টেম্বর শান্তির হাট ঘাট এলাকা থেকে একটি মাছ ধরার নৌকা নিয়ে বঙ্গোপসাগরে যান ওই জেলেরা। মাছ ধরা শেষে ফেরার পথে ঝড়ে দিক হারিয়ে তাঁরা ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশ করেন। বিএসএফ তাঁদের আটক করে সুন্দরবনের কোস্টাল থানায় হস্তান্তর করে। সেখান থেকে তাঁদের আলীপুর সদর ও পরে বারাইপুর জেলে পাঠানো হয়। দুই দেশের সরকারের সিদ্ধান্তে বন্দিবিনিময়ের অংশ হিসেবে তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মেরিটাইম বাউন্ডারিতে হস্তান্তরের পর পশ্চিমাঞ্চলীয় কোস্টগার্ডের সহায়তায় বুধবার সন্ধ্যায় মোংলা বন্দরে পৌঁছান তাঁরা। পরে দিবাগত রাত দুইটার দিকে নিজ নিজ বাড়িতে ফেরেন।
জেলেরা ফিরলেও মাছ ধরার নৌকাটি ফেরত দেওয়া হয়নি দাবি করেন সফিজল মাঝির ছেলে হোসাইন স্বাধীন। তিনি বলেন, ‘৩০ লাখ টাকা মূল্যের ফিশিং বোটটি ফেরত পাইনি। নৌকাটি না পেলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব।’
আরও পড়ুনবঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার বিকল, ভোলার ১৯ জেলে ভারতের কারাগারে২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫জেলে মো. শাহে আলম বলেন, সাগর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ পাওয়া গিয়েছিল। ভারতীয় প্রশাসন মাছসহ ফিশিং বোট নিয়ে গেছে।
ভারতের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই জেলেদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছেন বলে দাবি করেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী ও জেলে সমিতির ভোলা সদর উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল মামুন শেখ। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন আর কোনো জেলেকে এভাবে নির্যাতন না করা হয়, সেই অনুরোধ জানাই।’
আরও পড়ুনসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ১২ দিন ধরে ১৫ জেলে নিখোঁজ২২ নভেম্বর ২০২৫আল মামুন শেখ বলেন, জেলেরা আটক হওয়ার খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারের কাছ থেকে সব কাগজপত্র সংগ্রহ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এর ফলে দীর্ঘ ৯৭ দিন পর কোস্টগার্ডের সহায়তায় ওই জেলেরা দেশে ফিরেছেন।
কোস্টগার্ড সূত্রে জানা যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে বন্দিবিনিময়ের সিদ্ধান্ত হলে বাংলাদেশ ৪৭ ভারতীয় জেলেকে ও ভারত ৩২ বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত দেয়।
ভোলা সদর ইউএনও মো. আরিফুজ্জামান বলেন, সাধারণত এ ধরনের ঘটনায় জেলেদের ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘ সময় লাগে। এ ক্ষেত্রে ৯৭ দিনের মাথায় তাঁরা ফিরেছেন। আটক থাকা অবস্থায় তাঁদের পরিবারগুলোকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
আরও পড়ুনভোলায় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৩ জেলে ভারতের কারাগারে বন্দী০১ ডিসেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সীমান্তে শেষবারের মতো বাংলাদেশি মায়ের মুখ দেখলেন ভারতীয় মেয়ে
বাংলাদেশি এক নারীর মৃত্যুর পর তাঁর ভারতীয় মেয়ের অনুরোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ সীমান্তের শূন্যরেখায় লাশ দেখার সুযোগ করে দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)।
বিজিবি জানায়, গতকাল সোমবার রাতে বার্ধক্যের কারণে মারা যান বাংলাদেশি তারা বানু (৮০)। খবর পেয়ে ভারতের মালদা জেলার দুইশতবিঘি গ্রামের বাসিন্দা মেয়ে মালেকা বেগম বিএসএফের মাধ্যমে লাশ দেখার আবেদন করেন বিজিবির কাছে। বিষয়টি জানার পর মানবিক বিবেচনায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৯ বিজিবি। আজ মঙ্গলবার সকালে শিবগঞ্জ সীমান্তের কিরণগঞ্জ সীমান্ত ফাঁড়ি এলাকার সীমান্ত পিলার ১৭৯/৩–এস–এর শূন্যরেখায় বিজিবি ও বিএসএফের উপস্থিতিতে স্বজনদের লাশ দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়।
শূন্যরেখায় মায়ের মুখ দেখে আবেগে ভেঙে পড়েন মেয়ে মালেকা বেগম। আত্মীয়েরা শেষবারের মতো লাশ দেখার এমন সুযোগ পেয়ে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
তারা বানুর ছেলে কুরবান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোট বোনটাক শেষবারের মতো মায়ের মুখখান দেখাইতে পারনু। নাহিলে সারা জীবনের লাইগ্যা আফসোস থাইক্যা যাইতোক অরও, হামারও। বোনটার সাথে ভগ্নিপতি, দুই ভাগনি, ভাগনিজামাইসহ ১৫–১৬ জন আত্মীয় আইস্যাছিল। কাঁটাতারের বেড়ার আগে অবাধে যাওয়া–আসা ছিল। মাত্র তো দুই শ গজ দূরের গাঁ। এপারের অনেক মেয়ের যেমন ওপারে বিয়ে হয়েছে, তেমনি ওপারের অনেক মেয়ে এপারে আছে। হামি বিজিবি–বিএসএফের কাছে কৃতজ্ঞ।’
এর আগে গত শুক্রবার একই সীমান্তে ভারতীয় মৃত বোনের মুখ দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশি ভাই।
৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম কিবরিয়া বলেন, বিজিবি সব সময় মানবিক প্রয়োজনে সহানুভূতিশীল ভূমিকা পালন করবে।