চা বিক্রিতে ৪৭ বছরের রেকর্ড ভাঙল এনটিসি
Published: 12th, December 2025 GMT
চট্টগ্রামের চা-নিলামে নতুন রেকর্ড গড়ল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি)। এক নিলামেই কোম্পানিটি বিক্রি করেছে ৬ কোটি ৬ লাখ টাকার চা। এর আগে এক নিলামে কোম্পানিটির বিক্রির রেকর্ড ছিল প্রায় ৪ কোটি টাকার।
চট্টগ্রামের চায়ের নিলামের তথ্য অনুযায়ী, ৮ ডিসেম্বর ৩১তম নিলামে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১২ বাগানের প্রায় আড়াই লাখ কেজি চা বিক্রি করে এই আয় হয়েছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, ন্যাশনাল টি গঠিত হওয়ার ৪৭ বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ চা বিক্রির রেকর্ড। দুই কারণে এনটিসির চা বিক্রিবাবদ আয় বেড়েছে। প্রথমত নিলামে চায়ের গড় দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। দ্বিতীয়ত চায়ের মান ভালো হওয়ায় পরিমাণে বিক্রিও বেড়েছে। তাতে শুধু এক নিলামেই নয়, এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩১টি নিলামে চা বিক্রিতে গড় দাম বেশি পেয়েছে কোম্পানিটি।
নিলামে চা বেচাকেনায় মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি ব্রোকার্সের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ৩১তম নিলামে এনটিসি বাগানভেদে চায়ের গড় দাম পেয়েছে ২৪৫ থেকে ২৪৭ টাকা। এর মধ্যে মদনমোহনপুর চা-বাগানের চায়ের গড় দাম ছিল সর্বোচ্চ ২৪৭ টাকা ৫৭ পয়সা। ৩১তম নিলামে কালো চায়ের পাশাপাশি সবুজ চা-ও বিক্রি হয়েছে কোম্পানিটির। নিলাম প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানির তিনটি বাগানের সবুজ চা বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। সবুজ চায়ের সর্বনিম্ন দাম ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকা কেজি।
বেড়েছে গড় দাম
চা নিলামের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২৫-২৬ মৌসুমে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩১তম নিলামে এনটিসির ১২ বাগানের মোট ২৪ লাখ ২৮ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে। এসব চায়ের গড় দাম পাওয়া গেছে ২৪৫ টাকা ২৬ পয়সা। গত মৌসুমের (২০২৪-২৫) একই সময়ে এনটিসির চা বিক্রি হয়েছিল ২৩ লাখ কেজি। নিলামে গড় দাম ছিল ১৭৮ টাকা ৫২ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সোয়া লাখ কেজি চা বিক্রি বেড়েছে নিলামে। আবার গড় দাম বেড়েছে কেজিতে ৬৬ টাকা ৭৪ পয়সা।
বাজারে প্যাকেট ও খোলা অবস্থায় যেসব চা বিক্রি হয়, তা কেনা হয় সাধারণত নিলাম থেকে। চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড়—দেশের এ তিনটি স্থানে নিলামে চা বিক্রি হয়। গত মৌসুমে মোট চা বেচাকেনার ৯৭ শতাংশই হয়েছে চট্টগ্রামের নিলামকেন্দ্রে।
* চলতি ২০২৫-২৬ মৌসুমে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩১তম নিলামে এনটিসির ২৪ লাখ ২৮ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে।* এক বছরের ব্যবধানে সোয়া লাখ কেজি চা বিক্রি বেড়েছে নিলামে। গড় দাম বেড়েছে কেজিতে ৬৬ টাকা ৭৪ পয়সা।
নিলামে কেন দাম বাড়ছে?
একটানা কয়েক বছর চায়ের উৎপাদন খরচের তুলনায় নিলামে গড় দাম ছিল কম। তাতে অব্যাহত লোকসানের কারণে সংকটে পড়েন চা উৎপাদকেরা। এ পরিস্থিতিতে চা-বাগানগুলোকে লোকসান থেকে বাঁচাতে বাগানমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়।
চা-বাগানের মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের এপ্রিলে শেয়ারবাজারের মতো চায়ের নিলামেও ‘ফ্লোরপ্রাইস বা ন্যূনতম নিলামমূল্য’ বেঁধে দেওয়া হয়। নিলামে সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেওয়ার পর দামও একটু একটু বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে নিলামে চায়ের সর্বনিম্ন মূল্য কেজিতে ১০ থেকে ৮৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
গত ১৪ মে বাণিজ্য উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় চায়ের ন্যূনতম নিলামমূল্য সংশোধন করা হয়। তাতে চায়ের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪৫ টাকা কেজি। তার ভিত্তিতে চলতি মৌসুমের জন্য সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের চায়ের সর্বনিম্ন গ্রেডের ন্যূনতম নিলামমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪৫ টাকা কেজি। আর উত্তরাঞ্চলের বটলিফ চায়ের ন্যূনতম নিলামমূল্য ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
জানতে চাইলে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এস এম জিয়াউল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১২টি বাগানের চায়ের মান বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর সুফল পাওয়া গেছে নিলামে প্রতিযোগিতামূলক দামে। আবার চায়ের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের ফলেও দামে প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে এবার এনটিসির চায়ের গড় দাম অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ য় র গড় দ ম র ন য নতম অন ষ ঠ ত এনট স র র কর ড বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
চা বিক্রিতে ৪৭ বছরের রেকর্ড ভাঙল এনটিসি
চট্টগ্রামের চা-নিলামে নতুন রেকর্ড গড়ল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল টি কোম্পানি (এনটিসি)। এক নিলামেই কোম্পানিটি বিক্রি করেছে ৬ কোটি ৬ লাখ টাকার চা। এর আগে এক নিলামে কোম্পানিটির বিক্রির রেকর্ড ছিল প্রায় ৪ কোটি টাকার।
চট্টগ্রামের চায়ের নিলামের তথ্য অনুযায়ী, ৮ ডিসেম্বর ৩১তম নিলামে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১২ বাগানের প্রায় আড়াই লাখ কেজি চা বিক্রি করে এই আয় হয়েছে। কোম্পানিটি জানিয়েছে, ন্যাশনাল টি গঠিত হওয়ার ৪৭ বছরের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ চা বিক্রির রেকর্ড। দুই কারণে এনটিসির চা বিক্রিবাবদ আয় বেড়েছে। প্রথমত নিলামে চায়ের গড় দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। দ্বিতীয়ত চায়ের মান ভালো হওয়ায় পরিমাণে বিক্রিও বেড়েছে। তাতে শুধু এক নিলামেই নয়, এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩১টি নিলামে চা বিক্রিতে গড় দাম বেশি পেয়েছে কোম্পানিটি।
নিলামে চা বেচাকেনায় মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি ব্রোকার্সের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ৩১তম নিলামে এনটিসি বাগানভেদে চায়ের গড় দাম পেয়েছে ২৪৫ থেকে ২৪৭ টাকা। এর মধ্যে মদনমোহনপুর চা-বাগানের চায়ের গড় দাম ছিল সর্বোচ্চ ২৪৭ টাকা ৫৭ পয়সা। ৩১তম নিলামে কালো চায়ের পাশাপাশি সবুজ চা-ও বিক্রি হয়েছে কোম্পানিটির। নিলাম প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানির তিনটি বাগানের সবুজ চা বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। সবুজ চায়ের সর্বনিম্ন দাম ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকা কেজি।
বেড়েছে গড় দাম
চা নিলামের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি ২০২৫-২৬ মৌসুমে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩১তম নিলামে এনটিসির ১২ বাগানের মোট ২৪ লাখ ২৮ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে। এসব চায়ের গড় দাম পাওয়া গেছে ২৪৫ টাকা ২৬ পয়সা। গত মৌসুমের (২০২৪-২৫) একই সময়ে এনটিসির চা বিক্রি হয়েছিল ২৩ লাখ কেজি। নিলামে গড় দাম ছিল ১৭৮ টাকা ৫২ পয়সা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে সোয়া লাখ কেজি চা বিক্রি বেড়েছে নিলামে। আবার গড় দাম বেড়েছে কেজিতে ৬৬ টাকা ৭৪ পয়সা।
বাজারে প্যাকেট ও খোলা অবস্থায় যেসব চা বিক্রি হয়, তা কেনা হয় সাধারণত নিলাম থেকে। চট্টগ্রাম, শ্রীমঙ্গল ও পঞ্চগড়—দেশের এ তিনটি স্থানে নিলামে চা বিক্রি হয়। গত মৌসুমে মোট চা বেচাকেনার ৯৭ শতাংশই হয়েছে চট্টগ্রামের নিলামকেন্দ্রে।
* চলতি ২০২৫-২৬ মৌসুমে এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ৩১তম নিলামে এনটিসির ২৪ লাখ ২৮ হাজার কেজি চা বিক্রি হয়েছে।* এক বছরের ব্যবধানে সোয়া লাখ কেজি চা বিক্রি বেড়েছে নিলামে। গড় দাম বেড়েছে কেজিতে ৬৬ টাকা ৭৪ পয়সা।
নিলামে কেন দাম বাড়ছে?
একটানা কয়েক বছর চায়ের উৎপাদন খরচের তুলনায় নিলামে গড় দাম ছিল কম। তাতে অব্যাহত লোকসানের কারণে সংকটে পড়েন চা উৎপাদকেরা। এ পরিস্থিতিতে চা-বাগানগুলোকে লোকসান থেকে বাঁচাতে বাগানমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়।
চা-বাগানের মালিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের এপ্রিলে শেয়ারবাজারের মতো চায়ের নিলামেও ‘ফ্লোরপ্রাইস বা ন্যূনতম নিলামমূল্য’ বেঁধে দেওয়া হয়। নিলামে সর্বনিম্ন মূল্য বেঁধে দেওয়ার পর দামও একটু একটু বাড়তে থাকে। চলতি মৌসুমে নিলামে চায়ের সর্বনিম্ন মূল্য কেজিতে ১০ থেকে ৮৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
গত ১৪ মে বাণিজ্য উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় চায়ের ন্যূনতম নিলামমূল্য সংশোধন করা হয়। তাতে চায়ের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪৫ টাকা কেজি। তার ভিত্তিতে চলতি মৌসুমের জন্য সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের চায়ের সর্বনিম্ন গ্রেডের ন্যূনতম নিলামমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪৫ টাকা কেজি। আর উত্তরাঞ্চলের বটলিফ চায়ের ন্যূনতম নিলামমূল্য ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
জানতে চাইলে ন্যাশনাল টি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচ এস এম জিয়াউল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ন্যাশনাল টি কোম্পানির ১২টি বাগানের চায়ের মান বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর সুফল পাওয়া গেছে নিলামে প্রতিযোগিতামূলক দামে। আবার চায়ের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের ফলেও দামে প্রভাব ফেলেছে। এ কারণে এবার এনটিসির চায়ের গড় দাম অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি পাওয়া গেছে।