দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত আমিনুর রহমানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে তাঁর নিজ এলাকা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে গোড়াইল কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।

এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে আমিনুর রহমানের মরদেহ তাঁর গ্রামের বাড়ি পৌঁছায়। এ সময় স্বজন ও প্রতিবেশীদের কান্নার আহাজারি পড়ে যায়।

পরিবার ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে ব্যবসা শুরু করেন আমিনুর রহমান। মাঝেমধ্যে তিনি দেশে আসতেন। ৫ ডিসেম্বর দেশটির লিম্পুপু প্রদেশের মাটিম্বোতে নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ছিলেন তিনি। বিকেল পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে হঠাৎ কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাঁর মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

আমিনুর রহমানের ভাই আসলাম সিদ্দিকী জানান, ওই দিন রাত সোয়া ১১টায় তাঁরা আমিনুর রহমানের মৃত্যুর সংবাদ পান। তাঁদের সংসারে অসুস্থ মা, দুই ভাই, দুই বোন ছাড়া আমিনুর রহমানের স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে আছে।

আরও পড়ুনহঠাৎ কয়েকজন দুর্বৃত্ত এসে মাথায় গুলি করে পালিয়ে যায়০৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আসলাম সিদ্দিকীর অভিযোগ, দক্ষিণ আফ্রিকায় আমিনুর রহমানের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে একই উপজেলার আরেক ব্যক্তি কাজ করতেন। আমিনুর রহমানের অনুপস্থিতিতে সেখান থেকে প্রায় এক কোটি টাকা নিয়ে হঠাৎ উধাও হন জাফর। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে মির্জাপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। পাওনা টাকার জন্য বিভিন্ন সময় ওই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হতো। কিন্তু টাকা দেওয়ার বদলে উল্টো বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হতো। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিষয়টির যোগ থাকতে পারে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

আমিনুর রহমানের জানাজায় বিএনপির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুর রউফ, সাংগঠনিক সম্পাদক ডি এম শফিকুল ইসলাম, মির্জাপুর কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি আজম মৃধা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুনদক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নিহত০৬ ডিসেম্বর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম ন র রহম ন র আম ন র র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি বিনিয়োগ না নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই: লুৎফে সিদ্দিকী

‘আমাদের বিনিয়োগের অনেক সুযোগ আছে, কাজ করার জন্য তরুণ জনসংখ্যা আছে। এই দুটির মধ্যে সমন্বয় করতে হবে। এ জন্য বিদেশি বিনিয়োগ একটি গাণিতিক বাস্তবতা, এটা না নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা না নেওয়ার মানে হলো, আমি শুধু টাকা ছাপাব—মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে থাকবে, ঋণ বাড়তে থাকবে; সুদের হার কখনো কমবে না। এ জন্য এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই, এফডিআই (প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ) দরকার। আমাদের যে এত দিন আসছে না, এটি লজ্জার ব্যাপার।’

আজ শুক্রবার সকালে চট্টগ্রামে আয়োজিত এক অর্থনৈতিক সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। নগরের র‍্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউয়ে ‘ফিউচার আউটলুক অব বাংলাদেশ ইকোনমি: এফডিআই, ফাইন্যান্সিয়াল রিফর্মস অ্যান্ড এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন’ শিরোনামে এ সম্মেলনের আয়োজন করে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএমএবি) চট্টগ্রাম ব্রাঞ্চ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘এই মুহূর্তে সরকারের বাজেটের ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত হলো ঋণের ইন্টারেস্ট রেট (সুদের হার)। এনবিআরের যত রাজস্ব আয় হচ্ছে, তার ২১ শতাংশ শুধু ইন্টারেস্ট রেটে যাচ্ছে... প্রতি ঘণ্টায় ১৪ কোটি টাকা।’
লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের দুটি ডেফিসিট (ঘাটতি) আছে—বাহ্যিক ঘাটতি ও অভ্যন্তরীণ ঘাটতি। বাহ্যিক ঘাটতি হলো আমাদের রপ্তানির চেয়ে আমদানি বেশি। আমদানি হয় খাদ্য, সার অথবা জ্বালানি। আমরা রপ্তানি করি মূলত তৈরি পোশাক।...দেশের ভেতরে ঋণ নিয়ে ঘাটতি সামাল দিচ্ছি। কিন্তু ঋণগুলো তো পরিশোধ করতে হবে। ঋণ নেওয়াটা খুব একটা খারাপ কিছু নয়, যদি আমরা এই টাকা নিয়ে কী করছি, এটার ওপর নজর রাখি। এটা কি বিনিয়োগ হচ্ছে, না এমনি খরচ হয়ে যাচ্ছে।’

চট্টগ্রামের একটি তৈরি পোশাক কারখানার উদাহরণ টেনে লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, ‘তাদের ভিয়েতনামে ও এখানে কারখানা আছে। ভিয়েতনামে শ্রমিকদের প্রায় ৫০ শতাংশ বেশি বেতন দেওয়া হয়, তবুও মুনাফা বেশি। এখানে বেতনও কম, মুনাফাও কম। তাহলে মাঝের ৫০ শতাংশ কোথায় যায়? অর্ধেক যায় আমাদের ইনইফিসিয়েন্সিতে—লজিস্টিকস, সড়ক, পোর্টে সময় বেশি লাগে বলে। আর বাকি অর্ধেক যায় দুর্নীতিতে। এই দুই সমস্যার সমাধান আমাদের হাতেই। সংস্কার এখন প্রাতিষ্ঠানিক আলাপ নয়…আমাদের সিস্টেমই পাল্টাতে হবে।’

সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ও ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ শাহীন। ভিডিও বার্তায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান তাঁর বক্তব্যে করনীতি, কর কাঠামো ও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরেন।

সম্মেলন কমিটির চেয়ারম্যান কাজী মেরাজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সেভেন রিংস সিমেন্ট গ্রুপের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মো. কাউসার আলম। দুটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এস এম শোহরাবুদ্দীন। সমাপনী বক্তব্য দেন আইসিএমএবির চট্টগ্রাম ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ