ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের (এসআইআর) উদ্দেশ্য ভুয়া, অবৈধ ও অনুপ্রবেশকারী ভোটার চিহ্নিতকরণ হলেও ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিহারে কতজন ‘বিদেশি’ চিহ্নিত করেছে, তা জানা গেল না। ভারতীয় সংসদে এসআইআর নিয়ে দুদিন ধরে আলোচনা চললেও সরকারিভাবে এ বিষয়ে কিছুই আলোকপাত করা হয়নি।

এসআইআরের মাধ্যমে শাসক দলের হয়ে ইসির ভোট চুরির যে অভিযোগ বিরোধীরা করে আসছেন, তার রাজনৈতিক জবাব দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি, বিহারে কতজন ‘বিদেশি’ নাগরিককে চিহ্নিত করা গেছে।

বিরোধীরা এ বিষয়ে কিছু ‘তথ্য’ হাজির করলেও সরকার জানিয়েছে, কে বিদেশি কিংবা কে ভারতীয় নাগরিক নন, তা নির্ণয়ের ভার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। নির্বাচন কমিশনের নয়। কাজেই ভোটার তালিকা সংশোধন করার অধিকার ইসির থাকলেও তারা নাগরিকত্ব নির্ধারণের অধিকারী নয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিতর্কের নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে বিতর্কের জবাবে ভাষণে এই বিষয়ে কিছুই জানাননি।

নির্বাচন কমিশন নীরব থাকলেও সংসদীয় বিতর্কে বিরোধীরা বারবার কমিশনের মূল লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে গেছে। সরাসরি অভিযোগ এনেছে শাসক দল বিজেপির হয়ে ইসির ‘ভোটচুরি’ নিয়ে।

লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী এই নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে খোলাখুলি চ্যালেঞ্জও জানিয়েছেন। যদিও অমিত শাহ তা গ্রহণ করেননি। বরং বিতর্কের সময় বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী সম্পর্কে ‘অসংসদীয়’ শব্দ উচ্চারণ করে তিনি বিপাকে পড়েছেন।

বিরোধীদের তোলা মূল প্রশ্নগুলোর উত্তর না পেয়ে এবং অমিত শাহের জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে বিরোধীরা লোকসভা থেকে ওয়াক আউট করেন। সেই সময়েও অমিত শাহ বিরোধীদের বিদ্ধ করে বলেন, ওদের মূল লক্ষ্য ‘ঘুসপেটিয়াদের’ (অবৈধভাবে ভারতে ঢোকা ভিনদেশি নাগরিক) ভোট পেয়ে ক্ষমতায় থাকা। সেই কারণেই তারা এসআইআরের বিরোধিতা করছে। কারণ, এসআইআরের মধ্য দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।

বিহারের ‘বিদেশিদের’ সংখ্যা নিয়ে কোনো জবাব দিলেন না অমিত শাহ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব তর ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে সরব মোদি কেন শেষ পর্যন্ত চুপসে গেলেন

ভারতের নির্বাচন কমিশন ও তার কাজ–সম্পর্কিত পাঁচটি প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মুখোমুখি বিতর্কে বসার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী। কিন্তু অমিত শাহ তা গ্রহণ করলেন না। নির্বাচন ঘিরে কমিশনের (ইসি) এখতিয়ার এবং ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন পদ্ধতি (এসআইআর) নিয়ে বিরোধীদের তোলা প্রশ্নের উত্তরগুলো তাই অনুচ্চারিতই রয়ে গেল।

এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর আজ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন দেয়নি। লোকসভার দুই দিনের বিতর্ক শেষেও তা পাওয়া গেল না। বিতর্ক ঘিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব কার্যত রাজনৈতিক হয়ে রইল।

লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনের শুরু থেকেই বিরোধীরা এসআইআর নিয়ে আলোচনার দাবি তুলেছিলেন। অন্যদিকে সরকার চাইছিল জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’–এর সার্ধশতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আলোচনা করতে। বিরোধীরা সরকারের দাবি মেনে নেওয়ায় সরকারও বাধ্য হয় বিরোধীদের দাবি মানতে।

তবে আলোচনা শুধু ‘এসআইআর’–এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সরকার ঠিক করে, বিতর্কের বিষয়বস্তু হবে ‘নির্বাচনী সংস্কার’। সরকার জানায়, প্রথমে আলোচিত হবে ‘বন্দে মাতরম’, পরে নির্বাচনী সংস্কার।

বিরোধীরা বলেন, আরএসএসের সদর দপ্তর ও শাখাগুলোতেও ‘বন্দে মাতরম’ গান গাওয়া হয়নি। এমনকি বহু বছর আরএসএস শাখা ও সদর দপ্তরে স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকাও তোলা হয়নি।

বিজেপি ও সরকার ‘বন্দে মাতরম’ বিতর্কে কোণঠাসা করতে চেয়েছিল প্রধানত কংগ্রেসকে। তাদের অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রধানত জওহরলাল নেহরু ‘বন্দে মাতরম’ গানের অঙ্গচ্ছেদের জন্য দায়ী এবং সেটি তিনি করেছিলেন মুসলিম লিগ ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর চাপে। তাদের মতে, ওটা ছিল কংগ্রেসের ‘মুসলিম তোষণের’ বড় প্রমাণ।

কিন্তু লোকসভা ও রাজ্যসভার বিতর্কে দেখা গেল, সব বিরোধী দল ‘বন্দে মাতরম’ প্রশ্নে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াল, এমনকি বিজেপির শরিক জেডিইউ পর্যন্ত। প্রত্যেকেই তথ্য দিয়ে জানাল, ‘বন্দে মাতরম’–এর প্রথম দুই স্তবক রেখে বাকিগুলো না গাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তাঁর সঙ্গে পূর্ণ সহমত হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী, সরদার বল্লভভাই প্যাটেল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বাবাসাহেব আম্বেদকরেরা।

দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক বিরোধী বক্তা এই বিতর্কে বিজেপিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান, স্বাধীনতা সংগ্রামে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) বিন্দুমাত্র ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ না থাকার অপরাধে। এই অভিযোগেও বিজেপিকে বিদ্ধ হতে হলো যে তারাও বহু বছর পর্যন্ত ‘বন্দে মাতরম’ উচ্চারণ করেনি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ, যিনি ‘বন্দে মাতরম’-এর স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’, বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসকে ‘পুলিন বিকাশ’ ও সূর্য সেনকে ‘মাস্টার’ বলে অভিহিত করে ক্ষীণ ‘ইতিহাসজ্ঞানের’ পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি নিজেকে হাস্যাস্পদও করে তুলেছেন।

বিরোধীরা বলেন, আরএসএসের সদর দপ্তর ও শাখাগুলোতেও ‘বন্দে মাতরম’ ওই গান গাওয়া হয়নি। এমনকি বহু বছর আরএসএস শাখা ও সদর দপ্তরে স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকাও তোলা হয়নি। একের পর এক বিরোধী নেতা বরং বলেছেন, কংগ্রেস নেতা–কর্মীরা যখন ‘বন্দে মাতরম’ গাইতে গাইতে ফাঁসির মঞ্চে এগিয়ে গেছেন, আরএসএস তখন ব্রিটিশ শাসকদের ‘পক্ষে’ কাজ করেছে।

অমিত শাহ ভোট চুরির অভিযোগ তুললেন জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরার বিরুদ্ধে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিহারে যা করেছেন, বাংলায় হবে না: বিজেপির প্রতি মমতার হুঁশিয়ারি
  • ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে সরব মোদি কেন শেষ পর্যন্ত চুপসে গেলেন
  • বিসিএসআইআর ও নেস্‌লে বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে বাজারে আসছে ‘নেস্‌লে পুষ্টিগ্রো+’
  • ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়