যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার মেক্সিকো ভারত থেকে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। দেশটির এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারত থেকে গাড়ি রপ্তানিকারক বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষতি হতে পারে প্রায় ১০০ কোটি ডলার। ভারত থেকে ফক্সভাগেন ও হুন্দাইয়ের মতো বিশ্ববিখ্যাত কিছু গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি বিশ্বের অনেক দেশে গাড়ি রপ্তানি করে।

ভারতের শিল্পমহল মেক্সিকোর নতুন শুল্ক ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নয়াদিল্লিকে অনুরোধ জানিয়ে ছিল। তা সত্ত্বেও মেক্সিকো সরকারের তরফে ভারতসহ এশিয়ার আরও কিছু দেশের ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপের ঘোষণা এল। ভারতের পণ্যে শুল্ক চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি দুটি সূত্র এবং একটি শিল্পগোষ্ঠীর চিঠি পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হয়েছে রয়টার্স।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউমের সরকার গত বুধবার এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। নিজ দেশের চাকরি ও উৎপাদনকে সুরক্ষা দিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চীন, ভারতসহ যেসব দেশের সঙ্গে মেক্সিকোর বাণিজ্যচুক্তি নেই, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে তাদের ওপর নতুন শুল্ক কার্যকর হবে।

মেক্সিকোর এ পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এল, যখন চীনের সঙ্গে ব্যবসা সীমিত করতে মেক্সিকোর ওপর চাপ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে উত্তর আমেরিকার দেশটির স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মেক্সিকোতে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।

ভারত থেকে মেক্সিকো গাড়ি আমদানি করলে আগে ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। এখন তা বেড়ে দাঁড়াল ৫০ শতাংশ।

ভারতীয় উৎপাদনের ঝুঁকি বাড়ছে

সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (এসআইএএম) নামের একটি শিল্পগোষ্ঠী মেক্সিকোর ওপর চাপ তৈরি করতে গত নভেম্বরে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিল। তারা চেয়েছিল, ভারত থেকে রপ্তানি করা গাড়িতে শুল্ক ‘আগের অবস্থায় রাখতে’ যেন মেক্সিকো সরকারকে চাপ দেওয়া হয়। এসআইএএম শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে ফক্সভাগেন, হুন্দাই ও সুজুকির মতো বিশ্ববিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি রয়েছে।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লেখা এসআইএএমের সেই চিঠির একটি কপি রয়টার্সের হাতে এসেছে। শুল্ক চূড়ান্ত করার আগে এ চিঠি লেখা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মেক্সিকোতে ভারতীয় গাড়ি রপ্তানির ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। আমরা ভারত সরকারের সমর্থন চাইছি যেন তারা মেক্সিকো সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে।’

এর আগে এ চিঠির বিস্তারিত তথ্য সংবাদমাধ্যমে আসেনি। শুল্ক চূড়ান্ত হওয়ায় এখন গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা, শিল্পগোষ্ঠী এবং ভারত সরকার কী পদক্ষেপ নেবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ভারতীয় গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের কৌশল ঢেলে সাজাতে হতে পারে। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সৌদি আরবের পর মেক্সিকোই ভারতের গাড়ি রপ্তানির তৃতীয় বৃহত্তম বাজার।

ভারতের গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন ক্ষমতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে এবং বিপুল উৎপাদনের সুবিধা পেতে এত দিন রপ্তানির ওপর নির্ভর করত। দেশের বাজারে কম বিক্রির ক্ষতি সামাল দিতে বা লাভ বৃদ্ধি করতে অনেক কোম্পানি রপ্তানির সাহায্য নিত। কিন্তু এখন এ ব্যবসায়িক কৌশল বদলাতে হতে পারে।

মেক্সিকোর শুল্ক বৃদ্ধিতে বিশ্বের সাম্প্রতিক প্রবণতা প্রতিফলিত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশের ওপর নানা মাত্রায় অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে বিদ্যমান বাণিজ্যব্যবস্থাকে টালমাটাল করে দিয়েছেন।

ভারতকে কম খরচে গাড়ি প্রস্তুতের জন্য চীনের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পর মেক্সিকোর উচ্চ শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ পরিকল্পনা আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

শুল্ক প্রসঙ্গে জানতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এসআইএএম এবং মেক্সিকো সরকারের সঙ্গে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

হুন্দাই ও মারুতি-সুজুকি মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। আরেক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নিশান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ফক্সভাগেনের ভারতীয় ইউনিট ‘স্কোডা অটো ফক্সভাগেনের প্রধান পীযূষ অরোরা মেক্সিকোর শুল্ক চূড়ান্তের আগে বলেছিলেন, মেক্সিকো অনেক বছর ধরে ভারতের শক্তিশালী একটি রপ্তানি কেন্দ্র ছিল। তারা এখান থেকে ৪০টির বেশি দেশে গাড়ি রপ্তানি করে।

অরোরা আরও বলেছিলেন, ‘মেক্সিকোতে চাহিদা ক্রমে বাড়ছে। দেশটিতে ভারতে তৈরি আমাদের মডেলগুলোর প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। তাই মেক্সিকো সব সময় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ত সরক র র পদক ষ প ব যবস র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

এবার ভারতের পণ্যে মেক্সিকোর ৫০ শতাংশ শুল্ক, কতটা প্রভাব পড়বে রপ্তানিতে

যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার মেক্সিকো ভারত থেকে রপ্তানি করা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। দেশটির এ সিদ্ধান্তের ফলে ভারত থেকে গাড়ি রপ্তানিকারক বড় কোম্পানিগুলোর ক্ষতি হতে পারে প্রায় ১০০ কোটি ডলার। ভারত থেকে ফক্সভাগেন ও হুন্দাইয়ের মতো বিশ্ববিখ্যাত কিছু গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানি বিশ্বের অনেক দেশে গাড়ি রপ্তানি করে।

ভারতের শিল্পমহল মেক্সিকোর নতুন শুল্ক ঠেকাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নয়াদিল্লিকে অনুরোধ জানিয়ে ছিল। তা সত্ত্বেও মেক্সিকো সরকারের তরফে ভারতসহ এশিয়ার আরও কিছু দেশের ওপর বড় অঙ্কের শুল্ক আরোপের ঘোষণা এল। ভারতের পণ্যে শুল্ক চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি দুটি সূত্র এবং একটি শিল্পগোষ্ঠীর চিঠি পর্যালোচনা করে নিশ্চিত হয়েছে রয়টার্স।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেনবাউমের সরকার গত বুধবার এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে। নিজ দেশের চাকরি ও উৎপাদনকে সুরক্ষা দিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চীন, ভারতসহ যেসব দেশের সঙ্গে মেক্সিকোর বাণিজ্যচুক্তি নেই, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে তাদের ওপর নতুন শুল্ক কার্যকর হবে।

মেক্সিকোর এ পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এল, যখন চীনের সঙ্গে ব্যবসা সীমিত করতে মেক্সিকোর ওপর চাপ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে উত্তর আমেরিকার দেশটির স্থানীয় বিভিন্ন ব্যবসায়ী গোষ্ঠী সতর্ক করে বলেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মেক্সিকোতে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।

ভারত থেকে মেক্সিকো গাড়ি আমদানি করলে আগে ২০ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। এখন তা বেড়ে দাঁড়াল ৫০ শতাংশ।

ভারতীয় উৎপাদনের ঝুঁকি বাড়ছে

সোসাইটি অব ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (এসআইএএম) নামের একটি শিল্পগোষ্ঠী মেক্সিকোর ওপর চাপ তৈরি করতে গত নভেম্বরে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছিল। তারা চেয়েছিল, ভারত থেকে রপ্তানি করা গাড়িতে শুল্ক ‘আগের অবস্থায় রাখতে’ যেন মেক্সিকো সরকারকে চাপ দেওয়া হয়। এসআইএএম শিল্পগোষ্ঠীর মধ্যে ফক্সভাগেন, হুন্দাই ও সুজুকির মতো বিশ্ববিখ্যাত গাড়ি প্রস্তুতকারী কোম্পানি রয়েছে।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লেখা এসআইএএমের সেই চিঠির একটি কপি রয়টার্সের হাতে এসেছে। শুল্ক চূড়ান্ত করার আগে এ চিঠি লেখা হয়েছিল। এতে বলা হয়েছে, ‘প্রস্তাবিত শুল্ক বৃদ্ধির ফলে মেক্সিকোতে ভারতীয় গাড়ি রপ্তানির ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে। আমরা ভারত সরকারের সমর্থন চাইছি যেন তারা মেক্সিকো সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে।’

এর আগে এ চিঠির বিস্তারিত তথ্য সংবাদমাধ্যমে আসেনি। শুল্ক চূড়ান্ত হওয়ায় এখন গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা, শিল্পগোষ্ঠী এবং ভারত সরকার কী পদক্ষেপ নেবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ভারতীয় গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের কৌশল ঢেলে সাজাতে হতে পারে। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সৌদি আরবের পর মেক্সিকোই ভারতের গাড়ি রপ্তানির তৃতীয় বৃহত্তম বাজার।

ভারতের গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন ক্ষমতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে এবং বিপুল উৎপাদনের সুবিধা পেতে এত দিন রপ্তানির ওপর নির্ভর করত। দেশের বাজারে কম বিক্রির ক্ষতি সামাল দিতে বা লাভ বৃদ্ধি করতে অনেক কোম্পানি রপ্তানির সাহায্য নিত। কিন্তু এখন এ ব্যবসায়িক কৌশল বদলাতে হতে পারে।

মেক্সিকোর শুল্ক বৃদ্ধিতে বিশ্বের সাম্প্রতিক প্রবণতা প্রতিফলিত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশের ওপর নানা মাত্রায় অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে বিদ্যমান বাণিজ্যব্যবস্থাকে টালমাটাল করে দিয়েছেন।

ভারতকে কম খরচে গাড়ি প্রস্তুতের জন্য চীনের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের পর মেক্সিকোর উচ্চ শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ পরিকল্পনা আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে।

শুল্ক প্রসঙ্গে জানতে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এসআইএএম এবং মেক্সিকো সরকারের সঙ্গে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

হুন্দাই ও মারুতি-সুজুকি মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেয়নি। আরেক গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান নিশান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

ফক্সভাগেনের ভারতীয় ইউনিট ‘স্কোডা অটো ফক্সভাগেনের প্রধান পীযূষ অরোরা মেক্সিকোর শুল্ক চূড়ান্তের আগে বলেছিলেন, মেক্সিকো অনেক বছর ধরে ভারতের শক্তিশালী একটি রপ্তানি কেন্দ্র ছিল। তারা এখান থেকে ৪০টির বেশি দেশে গাড়ি রপ্তানি করে।

অরোরা আরও বলেছিলেন, ‘মেক্সিকোতে চাহিদা ক্রমে বাড়ছে। দেশটিতে ভারতে তৈরি আমাদের মডেলগুলোর প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। তাই মেক্সিকো সব সময় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি বাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ