যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের ৮৩ বছর বয়সী এক নারীর পরিবার গতকাল বৃহস্পতিবার ওপেনএআই ও মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে ‘বেআইনি মৃত্যুর’ অভিযোগে একটি মামলা করেছে। তাদের অভিযোগ, চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি তাদের ছেলের মানসিক বিভ্রমকে আরও উসকে দিয়েছিল এবং এর ফলেই ওই নারী খুন হন।

সান ফ্রান্সিসকোর ক্যালিফোর্নিয়া সুপিরিয়র কোর্টে দায়ের করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট ওল্ড গ্রিনউইচে নিজেদের বাড়িতে ৫৬ বছর বয়সী স্টেইন-এরিক সোলবার্গ তাঁর মা ৮৩ বছর বয়সী সুজান অ্যাডামসকে পিটিয়ে এবং শ্বাস রোধ করে হত্যা করেন। এরপর সোলবার্গ নিজেই নিজেকে ছুরিকাঘাত করে আত্মহত্যা করেন। সোলবার্গ একসময় প্রযুক্তি খাতে কাজ করতেন।

কয়েক মাস ধরে ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে ‘বেআইনি মৃত্যুর’ অভিযোগে মামলার সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এর আগে গত আগস্টে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ১৬ বছর বয়সী অ্যাডাম রেইনের মা–বাবা ওপেনএআইয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাঁদের দাবি, চ্যাটজিপিটি তাঁদের ছেলেকে আত্মহত্যার পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছিল।

গত নভেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে দায়ের করা একাধিক মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীদের নির্ভরতা ও নিজেকে আঘাত করার জন্য প্ররোচিত করেছে, যার মধ্যে চারটি আত্মহত্যার ঘটনাও রয়েছে।

২৬ বছর বয়সী জোশুয়া এনেকিংয়ের পরিবারের অভিযোগ, তিনি আত্মহত্যার কথা প্রকাশ করার পর চ্যাটবট তাঁকে বন্দুক সংগ্রহ করার বিস্তারিত তথ্য দিয়েছিল।

১৭ বছর বয়সী আমাউরি লেসির পরিবারের দাবি, ‘কীভাবে ফাঁসির ফাঁস বাঁধতে হয় এবং শ্বাস না নিয়ে তিনি কতক্ষণ বেঁচে থাকতে পারবেন’—চ্যাটজিপিটি তাঁকে সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছিল।

সর্বশেষ এ মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, চ্যাটজিপিটির সঙ্গে কয়েক মাস ধরে কথোপকথনের ফলে সোলবার্গের বিভ্রমজনিত চিন্তাভাবনা আরও শক্তিশালী হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর মাকে হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, সোলবার্গ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো পোস্ট করেছিলেন। তাতে দেখা যায়, ‘চ্যাটজিপিটি তাঁকে বলেছিল, তিনি এআই চ্যাটবটটির বোধজ্ঞান “জাগিয়ে তুলেছেন”।’

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে, কথোপকথনগুলোয় দেখা যায় ‘স্টেইন-এরিকের বিভ্রান্তিমূলক চিন্তার প্রতিটি সূত্রকে চ্যাটজিপিটি আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করেছে এবং সেগুলোকে এমন এক জগতে পরিণত করেছে, যা স্টেইন-এরিকের ধ্যানজ্ঞান হয়ে উঠেছিল।’

মা সুজানের সঙ্গে ছেলে স্টেইন-এরিক.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চ্যাটজিপিটিতে সরাসরি অ্যাডোবি ফটোশপ, এক্সপ্রেস ও অ্যাক্রোব্যাট ব্যবহার করার সুযোগ

চ্যাটজিপিটিতেই এখন ব্যবহার করা যাবে অ্যাডোবির জনপ্রিয় তিন অ্যাপ—ফটোশপ, অ্যাডোবি এক্সপ্রেস ও অ্যাক্রোব্যাট। ওপেনএআইয়ের সঙ্গে যৌথ ঘোষণায় অ্যাডোবি জানায়, ব্যবহারকারীরা নির্দেশ দিলেই ছবি সম্পাদনা, ডিজাইন তৈরি কিংবা পিডিএফ নথি গোছানোর মতো কাজ চ্যাটজিপিটির মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।

চাইলেই ব্যবহারকারীরা চ্যাটজিপিটি থেকে অ্যাডোবির নেটিভ অ্যাপে গিয়ে আগের কাজ অব্যাহত রাখতে পারবেন। তবে চ্যাটজিপিটির ভেতরে অ্যাডোবির অ্যাপ ব্যবহার করে তৈরি বা সম্পাদিত কোনো কনটেন্ট ব্যবহারকারীর অ্যাডোবি ক্রিয়েটিভ ক্লাউড বা অ্যাক্রোব্যাট অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষণ হবে না।

অ্যাডোবি জানায়, অ্যাপগুলো বিনা খরচে উন্মুক্ত করা হয়েছে এবং ওপেনএআইয়ের অ্যাপস এসডিকি যেসব দেশে চালু রয়েছে, সেসব দেশেই এগুলো ব্যবহার করা যাবে। তবে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবহারকারীরা আপাতত এই সুবিধার বাইরে থাকছেন। প্রতিষ্ঠানের দাবি, এই উদ্যোগের ফলে চ্যাটজিপিটির ৮০ কোটির বেশি বৈশ্বিক ব্যবহারকারী এখন সরাসরি অ্যাডোবির সৃজনশীল টুলগুলোয় প্রবেশাধিকার পাচ্ছেন।

চ্যাটজিপিটিতে ফটোশপ, অ্যাক্রোব্যাট বা অ্যাডোবি এক্সপ্রেস ব্যবহার শুরু করতে কেবল ‘Adobe Photoshop’, ‘Adobe Acrobat’ বা ‘Adobe Express’ লিখে নিজের অনুরোধ জানাতে হবে। অ্যাডোবি এক্সপ্রেস ও অ্যাক্রোব্যাট ব্যবহারের জন্য অ্যাডোবি অ্যাকাউন্টে সাইন–ইন প্রয়োজন হলেও মূল ফটোশপ–সুবিধা ব্যবহার করতে আলাদা অ্যাডোবি অ্যাকাউন্ট প্রয়োজন নেই।

এর আগে ক্যানভা, ফিগমা, কোরসেরা, এক্সপিডিয়া, স্পটিফাই, পেলোটন, ট্রিপঅ্যাডভাইজার, জিলো, বুকিং ডটকম ও ইনস্টাকার্ট এ ধরনের আরও বেশ কয়েকটি অ্যাপ চ্যাটজিপিটির অ্যাপস এসডিকিতে যুক্ত হয়েছে। এসব অ্যাপ সরাসরি চ্যাটজিপিটির ভেতর থেকেই খুলে কাজ করা যায়।

অ্যাডোবি বলছে, তাদের ফায়ারফ্লাই এআই মডেল নিরাপদ ও লাইসেন্স করা ডেটায় প্রশিক্ষিত, যা বর্তমান এআই প্রতিযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটির অবস্থানকে শক্তিশালী করেছে। ওপেনএআইয়ের সঙ্গে অংশীদারত্ব নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও অ্যাডোবি দাবি করে, তাদের লক্ষ্য সৃজনশীল পেশাজীবীদের কাজকে আরও সহজ করা, তাঁদের ভূমিকা কমিয়ে দেওয়া নয়।

প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, স্বতন্ত্র অ্যাপ হিসেবেই অ্যাডোবি এক্সপ্রেস ও অ্যাক্রোব্যাট প্রতি মাসে ৭০ কোটির বেশি মানুষ ব্যবহার করেন। অ্যাডোবির ধারণা, চ্যাটজিপিটির মতো ব্যবহৃত সহজ প্ল্যাটফর্মে অ্যাপগুলো যুক্ত হওয়ায় নতুন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়বে এবং বিদ্যমান ব্যবহারকারীদের কাজও দ্রুত গতির হবে।

চ্যাটজিপিটিতে অ্যাডোবির অ্যাপগুলো দিয়ে যা করা যাবে—

ফটোশপ ফর চ্যাটজিপিটি: ছবি সম্পাদনা, নির্দিষ্ট অংশ সংশোধন, উজ্জ্বলতা ও কনট্রাস্ট সমন্বয়, ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবর্তন, গ্লিচ বা গ্লোর মতো সৃজনশীল ইফেক্ট যোগ করা—এসব কাজ মূল ছবির মান বজায় রেখেই করা যাবে।

অ্যাডোবি এক্সপ্রেস ফর চ্যাটজিপিটি: ডিজাইন তৈরি ও কাস্টমাইজ, টেমপ্লেট পরিবর্তন, টেক্সট ছবি বদলানো, ব্যাকগ্রাউন্ড এবং প্রয়োজন হলে ডিজাইনে অ্যানিমেশন যোগ করার সুযোগ থাকবে।

অ্যাক্রোব্যাট ফর চ্যাটজিপিটি: চ্যাটজিপিটির মধ্যেই পিডিএফ আপলোড করে সম্পাদনা, সংকুচিত করা, অন্য ফরম্যাটে রূপান্তর, টেক্সট বা টেবিল আলাদা করে বের করা এবং একাধিক ফাইল একত্র করা যাবে।

অ্যাডোবি জানিয়েছে, চ্যাটজিপিটিতে অ্যাপগুলোর সুবিধা ধাপে ধাপে আরও সম্প্রসারণ করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চ্যাটজিপিটিতে সরাসরি অ্যাডোবি ফটোশপ, এক্সপ্রেস ও অ্যাক্রোব্যাট ব্যবহার করার সুযোগ