চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে নগরের হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। বিদ্যালয় চত্বরে নতুন ভবন নির্মাণের নামে প্রায় দেড় মাস ধরে পাহাড় কাটা হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর এখন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, পাহাড়ের একটি অংশ কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাছ। এগুলো পরিষ্কার করে জমি সমতল করার কাজও চলছে।

চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নুরুল আমিন ভবন নির্মাণের জন্য ছাড়পত্র চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ে আবেদন করেন। কিন্তু ২৭ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা লিখিতভাবে জানিয়ে দেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুসারে পাহাড় বা টিলা কাটা যাবে না। তবু বিদ্যালয় ভবন নির্মাণের প্রস্তুতিমূলক কাজের আড়ালে পাহাড় কাটা চলতে থাকে।

বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক নিজামী পাহাড় কাটার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে, তাই ভবন নির্মাণ করা দরকার। পাহাড়টি সামান্য কাটার কথা ছিল। কিন্তু বেশি কাটা হয়েছে। তবে তিন সপ্তাহ ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।

এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র বাতিল করা হবে। ভবন নির্মাণ আর এগোবে না। কোনো পাহাড় কাটা হবে না। পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা।মো.

কামরুল আহসান, নির্বাহী প্রকৌশলী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর

পরিবেশ অধিদপ্তর ২ ডিসেম্বর গিয়ে পাহাড় কাটার কাজ বন্ধ করে দেয়। জানতে চাইলে অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম নগর কার্যালয়ের পরিচালক সোনিয়া সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় ও গাছ কেটে ভবন তৈরির কোনো সুযোগ নেই। আইন অমান্য করে পাহাড় কাটা হলে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে তিনি ভবন নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক এ এস এম এমদাদুল কবীরের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।

এ এস এম এমদাদুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড় কাটার বিষয়টি ঘটে থাকলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। শিগগিরই বিদ্যালয়ে প্রতিনিধিদল পাঠাবেন। কতটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে, কেন কাটা হয়েছে—এসব বিষয় খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি।

দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত

মহসিন স্কুলের ভবন নির্মাণ চলছে ‘সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায়। এ প্রকল্পে সারা দেশে ৩২৩টি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের আরও চারটি সরকারি বিদ্যালয়ে ৬ থেকে ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। কিন্তু মহসিন স্কুলে অনুমতি ছাড়া পাহাড় কাটার অভিযোগ ওঠায় এ প্রকল্পের দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র বাতিল করা হবে। ভবন নির্মাণ আর এগোবে না। কোনো পাহাড় কাটা হবে না। পাঁচতলা ভবনটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নথি বলছে, ২০১৫ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাহাড় কাটার অভিযোগে মামলা হয়েছে ৮০টি। কিন্তু অধিকাংশ মামলাই অর্থদণ্ডে নিষ্পত্তি হয়েছে।

পাহাড় কাটার ঘটনায় পরিবেশকর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ২ ডিসেম্বর দুপুরে পাঁচ পরিবেশকর্মী ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক নিজামীর কাছে পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চান। তাঁরা প্রধান শিক্ষককে বলেন, পাহাড় কেটে ভবন হতে পারে না।

পরিবেশকর্মী রিতু পারভী বলেন, ‘গাছ কাটার খবর শুনে গিয়ে দেখি পাহাড়ও কাটা হচ্ছে। আরও কাটার প্রস্তুতি ছিল। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি। পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের আর কোনো উদাহরণ তৈরি হতে দেব না।’

পাহাড়ের সঙ্গে কাটা হয়েছে কয়েকটি গাছ। সম্প্রতি তোলা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভবন ন র ম ণ র দরপত র ব ত ল প রকল প পর ব শ প রক শ

এছাড়াও পড়ুন:

জানুয়ারির মধ্যে বই পাবে শিক্ষার্থীরা: অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রথম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এবার সময়মতোই নতুন বই হাতে পাবে। তিনি আশাবাদী ২০২৬ সালের জানুয়ারির মধ্যেই নতুন বই দেওয়া সম্ভব হবে।

আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।

বৈঠকে ২০ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের তিনটি প্রস্তাব ছিল। তিনটি প্রস্তাবই পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয়সংক্রান্ত। বৈঠকে তিনটি প্রস্তাবই অনুমোদিত হয়।

বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু পাঠ্যবইয়ের ক্ষেত্রে পুনঃ দরপত্রের প্রয়োজন হয়েছিল। তবে সার্বিক অনুমোদন প্রক্রিয়া এখন শেষ হয়েছে। যে বইগুলো বাকি ছিল, সেগুলোর জন্য আমরা পুনঃ দরপত্র চেয়েছিলাম। আগের সব অনুমোদনও নিষ্পত্তি হয়েছে। সামান্য কিছু দেরি হলেও আশা করছি সময়মতো বই পাওয়া যাবে।’

কত দিন দেরি হতে পারে, জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার জানুয়ারির মধ্যেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে। আমাদের লক্ষ্য জানুয়ারির মধ্যেই সবার হাতে বই পৌঁছে দেওয়া।

কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে গত শনিবার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দারও বলেছিলেন, জেলার সব উপজেলায় ইতিমধ্যে নতুন পাঠ্যবই পৌঁছে গেছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হবে।

ক্রয় কমিটির বৈঠকের পর অর্থ উপদেষ্টা বলেন, অনেকে মনে করেন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলেই সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। এটা সত্য নয়। আগে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, তখন কি সব বন্ধ হয়ে গিয়েছিল? শুধু যেসব কার্যক্রম সরাসরি নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে, সেগুলো বন্ধ থাকবে বলে জানান অর্থ উপদেষ্টা।

ভারত থেকে চাল কেনা হচ্ছে

এদিকে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ভারত থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতী সেদ্ধ চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২১৪ কোটি ৯০ লাখ টাকা। প্রতি কেজি চালের দাম ধরা হয়েছে ৪২ টাকা ৯৮ পয়সা। চাল সরবরাহের কাজ পেয়েছে ভারতের নিউট্রিয়াগ্রো ওভারসিজ ওপিসি প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতি টন চালের দাম পড়বে ৩৫১ দশমিক ৪৯ মার্কিন ডলার।

স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৭২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হচ্ছে। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়ছে ৭২ টাকা ৩৫ পয়সা। খুলনার জয়তুন অটো রাইস অ্যান্ড ডাল মিলস লিমিটেড এ ডাল সরবরাহ করবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে ব্যয় হবে ৪৩৬ কোটি ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫২ টাকা। কাজ পেয়েছে এম এস টোটাল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেসরকারি খাতে ৯১৮ মেগাওয়াটের ১২ সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হবে
  • জানুয়ারির মধ্যে বই পাবে শিক্ষার্থীরা: অর্থ উপদেষ্টা
  • দুর্নীতির লাগাম টানতে ৭ পরিকল্পনার কথা জানালেন তারেক রহমান