বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘একটি দল আওয়ামী লীগের ভোট প্রাপ্তির জন্য আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে না।’

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সালাহউদ্দিন আহমদ এসব কথা বলেন। বিজয়ের মাস উপলক্ষে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে ছাত্রদলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, মিরপুর বাঙলা কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, তিতুমীর কলেজ, ঢাকার বিভিন্ন ইউনিটের নারীনেত্রী এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক ও বর্তমান নেতারা অংশ নেন।

একটি দলকে ইঙ্গিত করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ইনিয়ে-বিনিয়ে বলছে যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল। আমরা মাঝেমধ্যে জিজ্ঞাসা করি, সেই মুক্তিযুদ্ধ কি পাকিস্তানের পক্ষে ছিল? জনগণের সামনে কিছুদিন পরে তারা হয়তো বলবে যে তারাই একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, আমরা করিনি। এ রকম অনেক বক্তব্য আপনারা ভোটের ময়দানে শুনতে পাবেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ অনেক সচেতন। এখন আর ধর্মের বিড়ি বিক্রি করে বাংলাদেশের জনগণের সামনে ভোট চাওয়া যাবে না। তারপরও আমাদের মাঠে–ময়দানে পরিকল্পনা নিয়ে যেতে হবে।’

আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘যারা নিজের দেশের নাগরিককে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, নারী–শিশুনির্বিশেষে শতসহস্র মানুষকে হত্যা করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, এই ইতিহাস যেন আমরা ভুলে না যাই।’

বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র’–এর কথা উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগ যে পরিমাণ টাকা তছরুপ করেছে, সেটা দিয়ে বাংলাদেশের দুটি শিক্ষা বাজেট করা যায়। তিনটি স্বাস্থ্য বাজেট করা যায়। ব্যাংকিং ও নন–ব্যাংকিং ফিন্যান্সিয়াল সেক্টর থেকে যে লুটপাট হয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় যে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যেটি তছরুপ হয়েছে, সেটা দিয়ে ২৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেত। ১৪টি মেট্রো সিস্টেম নির্মাণ করা যেত। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে ব্যাংকিং লুটপাটের মধ্য দিয়ে, সেটা বিলিয়ন ডলারে না বলে অঙ্কে বোধ হয় ২৯ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গেও অনুষ্ঠানে কথা বলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক যাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করার জন্য গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে। সেই গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি সফল ঘোষণা গতকাল হয়েছে, যেটাকে আমরা তফসিল বলছি, নির্বাচনী তফসিল।’

কোনো দলের নাম উল্লেখ না করে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘কেউ কেউ বলেছে নো পিআর, নো ইলেকশন। কেউ কেউ বলেছে আগে স্থানীয় সরকার ইলেকশন, না হলে নো ইলেকশন। আর কেউ কেউ বলেছে একই দিনে গণভোট আর নির্বাচন হলে আমরা মানি না। আমি কারও নাম নিতে চাই না। তারা গণতন্ত্রের বিপক্ষের শিবির। তারা নিজেদের মতো করে গণতন্ত্র চায়। তাদের গণতন্ত্রের সংজ্ঞা আলাদা।’

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ গণতন ত র অন ষ ঠ ন ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

শরিক ২৯ দলের বৈঠক, বিএনপির সঙ্গে দ্রুত ফয়সালার সিদ্ধান্ত

বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ২৯টি দল গতকাল বুধবার বৈঠক করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে দলগুলো আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরিকদের আসন সমঝোতার বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে দ্রুত একটা ফয়সালায় আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শরিক দলগুলোর নেতারা মনে করছেন, রাষ্ট্রকাঠামোর মৌলিক সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তি, গণতন্ত্রের উত্তরণে সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন প্রশ্নে বিএনপি যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল, এখন সেখান থেকে দলটির সরে যাওয়ার লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। বিশেষ করে একসঙ্গে নির্বাচনের প্রশ্নে রাজনৈতিক মিত্র দলগুলোকে এড়িয়ে চলতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য তাঁরা বিএনপির সঙ্গে বসতে চাইছেন।

শরিক দলের সূত্রগুলো বলছে, এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা বলার জন্য গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়কারী সাইফুল হককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি গতকাল রাতেই বিএনপির দুজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন, তাঁরা আজ বৃহস্পতিবার অথবা আগামীকাল শুক্রবারের মধ্যে তাঁদের সঙ্গে বসতে চান।

আমরা ২৯ দল বসেছিলাম। আমরা বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কটা ছিন্ন করতে চাই না সংস্কার এবং গণতন্ত্রের উত্তরণের স্বার্থে। তবে এই সম্পর্কে যেন সবার সম্মান, মর্যাদা এবং অধিকারটা থাকে।১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা

গতকাল বিকেলে শরিক দলগুলোর এই বৈঠক হয় নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে বৈঠকে নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণতন্ত্র মঞ্চের সাইফুল হক ও জোনায়েদ সাকি, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক, নেজামে ইসলাম পার্টির আশরাফুল ইসলাম, ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়কারী ফরিদুজ্জামান ২৯ দলের নেতারা অংশ নেন।

সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ২৯ দল বসেছিলাম। আমরা বিএনপির সঙ্গে সম্পর্কটা ছিন্ন করতে চাই না সংস্কার এবং গণতন্ত্রের উত্তরণের স্বার্থে। তবে এই সম্পর্কে যেন সবার সম্মান, মর্যাদা এবং অধিকারটা থাকে।’

এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিনজন নেতা বৈঠক করেন।

শরিক দলগুলোর একটি সূত্র জানায়, এ বিষয়গুলো গতকাল রাতের আলোচনায় উঠেছিল। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তারা অপারগ, কারণ মনোনয়নের এ সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতের আলোচনায় বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সাইফুল হক সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আলোচনা অসমাপ্ত রেখে বের হয়ে আসেন। এ বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনার সারমর্ম হচ্ছে, সাইফুল হক যে আসনে নির্বাচন করতে চাইছেন, সেখানে বিএনপি তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত করতে কিছুটা অপারগতার ইঙ্গিত দেয়। এতে সাইফুল হক একমত হতে পারেননি, তিনি আলোচনা অসমাপ্ত রেখে বের হন।

জানা গেছে, সাইফুল হক ঢাকা-৮ আসনে (মতিঝিল-পল্টন-শাহজাহানপুর-শাহবাগ ও রমনা) নির্বাচন করতে আগ্রহী। সেটি সম্ভব না হলে তিনি ঢাকা-১২ আসনে (তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল-হাতিরঝিল-শেরেবাংলা নগর আংশিক) নির্বাচন করতে চান। তিনি এই এলাকার বাসিন্দা।

বিএনপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেখান থেকে যদি বিএনপি সরে আসে, সেটার দায়দায়িত্ব বিএনপির। আমাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনা অব্যাহত আছে।সাইফুল হক, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক

যদিও দুটি আসনেই বিএনপি গত ২ নভেম্বর প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ঢাকা-৮ আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং ঢাকা-১২ আসনে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম (নীরব)। ঢাকা-১২ আসনের প্রার্থীকে নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে বেশ আলোচনা-সমালোচনা আছে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর তাঁর বিরুদ্ধে ‘দখল-চাঁদাবাজির’ অভিযোগ ওঠায় ঢাকা মহানগর উত্তর কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়।

শরিক দলগুলোর একটি সূত্র জানায়, এ বিষয়গুলো গতকাল রাতের আলোচনায় উঠেছিল। তখন বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল। কিন্তু তারা অপারগ, কারণ মনোনয়নের এ সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের।

আমরা কোনো দলের সঙ্গে বৈঠক করছি না, ব্যক্তিপর্যায়ে কথা বলছি। গতকাল (মঙ্গলবার) সাইফুল হক সাহেব এসেছিলেন। আলোচনা হয়েছে, কথা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম

সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তুলেছিল, সেখান থেকে যদি বিএনপি সরে আসে, সেটার দায়দায়িত্ব বিএনপির। আমাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। আলোচনা অব্যাহত আছে।’

সংশ্লিষ্ট একটি জানায়, মঙ্গলবার রাতের আলোচনায় মিত্র দলগুলোর মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা করা না হলে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কের ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়ে আসেন সাইফুল হক।

তবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো দলের সঙ্গে বৈঠক করছি না, ব্যক্তিপর্যায়ে কথা বলছি। গতকাল (মঙ্গলবার) সাইফুল হক সাহেব এসেছিলেন। আলোচনা হয়েছে, কথা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একটি দল ভোটের প্রয়োজনে আ.লীগের নাম মুখে নেয় না: সালাউদ্দিন আহমেদ
  • খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় কুতুবপুর ইউনিয়ন বিএনপির দোয়া
  • মর্গ্যান গার্লস স্কুলে পরীক্ষাকালীন সময়ে জামায়াত প্রার্থীর সভা,  ক্ষোভ
  • তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ: ফখরুল
  • নির্বাচন যত সহজ ভাবা হচ্ছে, তত সহজ হবে না: তারেক রহমান
  • শরিক ২৯ দলের বৈঠক, বিএনপির সঙ্গে দ্রুত ফয়সালার সিদ্ধান্ত
  • ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের পদত্যাগের চান মুঠোফোন ব্যবসায়ীরা, সার্ক ফোয়ারা মোড় অবরোধ
  • নির্বাচন ঘিরে সরগরম কেরাণীগঞ্জের রাজনীতি
  • আমির বনাম সভাপতি: কক্সবাজার-৪ আসনে ‘হাইভোল্টেজ’ লড়াই