গণপাঠাগার খালি করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভাড়া, বই সরিয়ে চলছে নির্মাণকাজ
Published: 12th, January 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে উপজেলার গণপাঠাগার (পাবলিক লাইব্রেরি) বন্ধ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে পাঠাগারটি। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সব বই। পাঠাগারের একতলা ভবনটিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালুর প্রস্তুতিও চলছে এক সপ্তাহ ধরে।
উপজেলার একমাত্র পাঠাগার বন্ধ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি, একতলা ভবনটি দ্বিতল করা হচ্ছে। নিচতলা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হলেও দ্বিতীয় তলায় পুনরায় লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হবে।
রায়পুর শহরের উপজেলা পরিষদ সড়কের মার্চেন্টস একাডেমির সামনে সরকারি জমিতে ২০২২ সালে লাইব্রেরি ভবনটি নির্মাণের কাজ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় ও সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা দিয়ে পাঠাগার ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন তৎকালীন রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অঞ্জন দাস। প্রায় ৯০০ বর্গফুট জমিতে গড়ে তোলা ভবনটি ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি উদ্বোধন করেন তখনকার জেলা প্রশাসক মো.
উদ্বোধনের পর থেকেই বইপ্রেমী পাঠকেরা এই গণপাঠাগার ব্যবহার করে আসছেন। পাঠাগার পরিচালনার দায়িত্বে একজন গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দেওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রায়পুর শহরে নির্মাণ করা হয় চারটি দোকান, যেসব দোকানের ভাড়া থেকে পাওয়া টাকায় পাঠাগারের পরিচালনা ব্যয় মেটানোর কথা।
রায়পুরের সাবেক ইউএনও অঞ্জন দাস প্রথম আলোকে বলেন, পাঠাগারটির যাত্রা শুরু হয় পাঁচ হাজার বই দিয়ে। উদ্বোধনের পর প্রতিদিন শতাধিক পাঠক এখানে বই পড়তে আসতেন। গত বছরের মাঝামাঝি সময় তিনি বদলি হওয়ার আগে পাঠাগারটির জন্য ছয় লাখ টাকা তহবিলে রেখে আসেন বলে জানিয়েছেন।
গতকাল শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, লাইব্রেরি ভবনটির দ্বিতীয় তলার কাজ চলছে। নিচতলায় বই রাখার শেলফগুলো এক স্থানে জড়ো করে রাখা হয়েছে। শেলফের কোনোটিতেই বই নেই। চারজন শ্রমিক সেখানে ভবনের জানালা ইট দিয়ে বন্ধ করার কাজ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি আলমগীর হোসেন নামের স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা জামানত নিয়ে পাঠাগার হিসেবে ব্যবহৃত ভবনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে। মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। জামানাতের টাকা নেওয়ার পর একতলা ভবনটি দোতলা করার কাজ শুরু করা হয়। তবে এসব কাজের জন্য কোনো দরপত্র আহ্বান করা হয়নি।
জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন বলেন, গত নভেম্বর মাসে জামানতের ২০ লাখ টাকা নগদে ইউএনওর কাছে জমা দিয়েছেন তিনি। লাইব্রেরিতে থাকা বই সরিয়ে ভবন সংস্কারের কাজ ইউএনওর তদারকিতে হচ্ছে। সংস্কার শেষ হওয়ার পর তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে আলমগীর হোসেন জানান, কোন ধরনের ব্যবসায় ভবনের ফ্লোরটি তিনি ব্যবহার করবেন, তা এখনো ঠিক করেননি। ওষুধের দোকান, স্যানিটারি পণ্য বিক্রি অথবা ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রির দোকান করার কথা রয়েছে তাঁর।
চালুর আগে পাবলিক পাঠাগারটিতে বই কেনার জন্য এক লাখ টাকা অনুদান দেন স্থানীয় বাসিন্দা গাজী মাহমুদ কামাল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘লাইব্রেরিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা খুবই হঠকারী এবং দুঃখজনক সিদ্ধান্ত। পৃথিবীর ৪০টি দেশের লাইব্রেরিতে আমি গিয়েছি। কোথাও লাইব্রেরির ভেতরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেখিনি।’
উপজেলার তিনজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পাবলিক লাইব্রেরিকে এভাবে তছনছ করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান চালুর উদ্যোগ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। লাইব্রেরি বন্ধ থাকায় পাঠকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। লাইব্রেরিতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হলে পাঠের পরিবেশ নষ্ট হবে।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান বলেন, লাইব্রেরি নিচতলায় ছিল। তা এখন দ্বিতীয় তলায় স্থানান্তর হবে। নিচতলা ভাড়ার টাকা দিয়ে লাইব্রেরি পরিচালনার খরচ বহন করা হবে। বেসরকারিভাবে অর্থ সংগ্রহ করে কাজ করা হচ্ছে, তাই দরপত্র আহ্বানের প্রয়োজন নেই।
পরিচালনা ব্যয় মেটাতে আগে চারটি দোকান নির্মাণের পরও কেন নতুন করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে ভবনের নিচতলা ভাড়া দিতে হচ্ছে, জানতে চাইলে ইউএনও বলেন, আগে নির্মাণ করা দোকানগুলো ভাড়া হয়নি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বাবাকে না পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে সড়কে যায় শিশু, মুহূর্তে ট্রাকচাপায় নিহত
ফেনীতে ট্রাকচাপায় এক শিশু নিহত হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে ফেনী শহরের রামপুর এলাকার সৈয়দবাড়ি-তাকিয়া সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শিশুর নাম মোহাম্মদ জিসান (৫)। সে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দরবার শরীফ ইউনিয়নের চরকালিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলমগীরের ছেলে। আলমগীর পরিবার নিয়ে ফেনী শহরের রামপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত শিশুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আজ বেলা দেড়টার দিকে শহরের রামপুর এলাকার সৈয়দবাড়ি-তাকিয়া সড়কের পাশের একটি বস্তি ঘর থেকে শিশু জিসান সবার অগচরে বেরিয়ে সড়কে উঠে পড়ে। এ সময় ওই সড়কের চলাচলরত পণ্যবাহী একটি ট্রাক জিসানকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে জিসানের বাবা ও স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত জিসানকে উদ্ধার করে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জিসানকে মৃত ঘোষণা করেন।
শিশুর বাবা মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে জিসান ছোট। জিসানের মা দুপুরে অন্য স্থানে গেলে তিনি ও জিসান ঘরের মধ্যে ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি টয়লেটে গেলে জিসান তাঁকে খোঁজ করে না পেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন। মুহূর্তেই ওই সড়কে চলাচলরত একটি ট্রাক তাকে চাপা দিয়ে চলে যায়।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সামছুজ্জামান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহত শিশুর মরদেহ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনায়জড়িত ট্রাক ও চালককে আটকের চেষ্টা চলছে। এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা চলমান।