বাংলাবান্ধা দিয়ে ভারত থেকে এলো ১০৫ মেট্রিকটন চাল
Published: 12th, January 2025 GMT
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ১০৫ মেট্রিকটন আতপ চাল আমদানি করা হয়েছে।
রবিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে চালগুলো আমদানি করা হয়। রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ।
তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সড়কপথে আমদানি-রপ্তানির একমাত্র স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ বন্দরটি দিয়ে সব থেকে বেশি আমদানি করা হয় পাথর। এর মাঝে রবিবার দুপুরে ৪টি ভারতীয় গাড়িতে চালের চালান ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
আজাদ বলেন, “রবিবার দুপুরে বন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে আতপ চালগুলো আমদানি হয়। চালগুলো চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান সালমা ট্রেডিংয়ের প্রতিষ্ঠান ও মালিক সামসুল আলম আমদানি করেছেন।”
পঞ্চগড়ের পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী কামরুল হাসান ও রেজাউল করিম রেজা বলেন, “সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স নিরোগ ট্রেডার্সের (সাঈদুর রহমান বাবলু) মাধ্যমে সালমা ট্রেডিংয়ের আমদানিকারক ও মালিক সামসুল আলম চালগুলো আমদানি করেছে। গাড়ি সল্পতা থাকায় আমদানি করা ১০৫ মেট্রিকটন আতপ চালের মধ্যে রবিবার ৬০ মেট্রিকটন চাল বন্দর এলাকা থেকে আমদানিকারকের প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। সোমবার বাকি ৪৫ মেট্রিক টন চাল আমদানিকারকের প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে।”
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর ২০২৪ স্থলবন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে চারটি ট্রাকে ১০০ মেট্রিকটন আতপ চাল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রহর ইন্টারন্যাশনালের (জাহাঙ্গীর আলম) মাধ্যমে আমদানি করে আল আমিন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এরপর ৮ ডিসেম্বর বন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে চারটি ট্রাকে ১০০ মেট্রিকটন আতপ চাল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রহর ইন্টারন্যাশনালের (জাহাঙ্গীর আলম) মাধ্যমে আমদানি করেছে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান সালমা ট্রেডিংয়ের আমদানিকারক ও মালিক সামসুল আলম।
ঢাকা/নাঈম/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বেনাপোল দিয়ে আবার পণ্য আমদানি বেড়েছে, ২৪ ঘণ্টা খোলা বন্দর
যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে। ১৯ অক্টোবর ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ২৫৪টি ট্রাক বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এসেছিল। এক সপ্তাহ পর গতকাল মঙ্গলবার স্থলবন্দরটি হয়ে ভারত থেকে দেশে এসেছে ৩৮১টি ট্রাক। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা ১২৭টি ট্রাকে বেশি পণ্য দেশে এসেছে।
বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকে অভিযোগ করছিলেন, কিছুদিন ধরে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রায় সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য বিশেষ করে পচনশীল পণ্য নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। অন্যান্য পণ্য বিলম্বে খালাসের জন্য তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনারকে চিঠিও দেওয়া হয়।
এই অবস্থায় গত রোববার বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। তবে পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক সন্ধ্যার আগে বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রবেশ করতে হবে।
এই ঘোষণা দেওয়ার পর পরই বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ তথা আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ ও উন্নত করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১ আগস্ট থেকে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর সপ্তাহের ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্র জানায়, ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৪২ ট্রাক পণ্য রপ্তানি এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে ২৫৪ ট্রাক পণ্য আমদানি করা হয়। ২০ অক্টোবর ৬৩ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ২৫৩ ট্রাক পণ্য আমদানি, ২২ অক্টোবর ১১৫ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ২৪১ ট্রাক পণ্য আমদানি, ২৩ অক্টোবর ৫১ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ২৮৭ ট্রাক পণ্য আমদানি, ২৫ অক্টোবর ৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ২৭২ ট্রাক পণ্য আমদানি, ২৬ অক্টোবর ২৬ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ৩৮৮ ট্রাক পণ্য আমদানি, ২৭ অক্টোবর ৭৩ ট্রাক পণ্য রপ্তানি ও ৩৫৭ ট্রাক পণ্য আমদানি হয়। ২১ অক্টোবর শ্যামা পূজা এবং ২৪ অক্টোবর শুক্রবার বাংলাদেশে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল।
সূত্র জানায়, আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন মেশিনারিজ পার্টস, গাড়ির চেসিস, স্পঞ্জ আয়রন, কর্ন ডিডিজিএস, কাপড়, ব্লিচিং পাউডার, কোয়ার্টাইজ পাউডার, অ্যালার্ম, মাছ, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এ ছাড়া রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, তুলা, কস্টিক সোডা, সুতা, ওয়ালটন ফ্রিজ, গার্মেন্টস, সুপারি, নকশিকাঁথা, পাবদা মাছ, পিভিসি ডোর, ইলিশ, প্লাস্টিক দানা, ব্যাগ, লাগেজ, পলিথিন, জুট, পিভিসি রেজিন, পাটের চট, টিস্যু পেপার, কার্পেট, ফয়েল পেপার, বস্তা, পেপার, সিরামিক, প্রিন্টেড বই, ক্রোকারিজ, হ্যাঙ্গার, চামড়া, ফার্নিচার, জুতা, খেলনা, জুতার রোল, ব্যবহৃত ব্যাটারি, খালি গ্যাস সিলিন্ডার, জুতার সোল, ভাঙারি, জুতার গাম, লোহার রোল, কাপড়, পাউডার, ফেব্রিকস (কাপড়), পাথর পাটাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য।
কেন আমদানি কমেছিল
আমদানিকারকদের সূত্রে জানা গেছে, গত প্রায় এক মাস ধরে মাঝেমধ্যে কাস্টসম কোনো লিখিত নির্দেশ ছাড়া সন্ধ্যা ছয়টায় বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। এতে করে আমদানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে ১৬ অক্টোবর বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনারকে চিঠি দেওয়া হয়।
অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে বেনাপোল স্থলবন্দরে দুটি ওয়েব্রিজ স্কেল সচল থাকা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল না থাকায় গাড়ি আমদানিতে বিলম্ব হচ্ছে। ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে ফল, মাছ ও সবজি প্রকৃত অর্থে অতিপচনশীল পণ্য। দীর্ঘ সময় ট্রাক ও বন্দর এলাকায় রোদ-বৃষ্টি বা প্রতিকূল আবহাওয়ায় অবস্থান করলে এবং বিলম্বে প্রবেশের ফলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ খালাস না দিতে পারলে পণ্য নষ্ট হয়। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি ও আমদানিকারকদের আর্থিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে। চিঠিতে বাংলাদেশের বেনাপোল স্থলবন্দর ও সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শুধু ফল, মাছ, সবজি এবং অক্সিজেন পণ্যকে উচ্চ পচনশীল ক্যাটাগরি হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে দ্রুত প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।
ব্যবসায়ীরা কী বলেন
বেনাপোল ল্যান্ডপোর্ট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘পচনশীল পণ্য খালাসে বিলম্ব হলে খুব ক্ষতি হয়। অন্য পণ্য খালাসে বিলম্ব হলে আমদানিকারকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।’
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন বলেন, ‘চলতি অক্টোবর মাসের প্রথম দিক থেকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রায়ই সন্ধ্যার পর লিখিত নির্দেশনা ছাড়াই তাদের কার্যক্রম হঠাৎ করে করে বন্ধ করে দিচ্ছিল। এতে করে ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য বিশেষ করে পচনশীল পণ্য নিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। গতকাল রোববার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন থেকে সকাল সাতটা হতে রাত ১১টা পর্যন্ত পচনশীল পণ্য ছাড়া সব পণ্য নিয়ে ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করবে। আর অন্যান্য পণ্য সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে বন্দরে প্রবেশ করবে। এরপর থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করা ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের সংখ্যা বেড়েছে।’
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার খালেদ মোহাম্মাদ আবু হোসেন বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে। নিয়মের কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে রাতে পচনশীল পণ্যের ট্রাক স্থলবন্দরে প্রবেশ করলে পণ্য পরীক্ষণ করতে সমস্যা হয়। এ জন্য পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক সন্ধ্যার আগে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করতে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বলা হয়েছে।’