পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ১০৫ মেট্রিকটন আতপ চাল আমদানি করা হয়েছে।

রবিবার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে চালগুলো আমদানি করা হয়। রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ।

তিনি জানান, বাংলাদেশ থেকে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে সড়কপথে আমদানি-রপ্তানির একমাত্র স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। এ বন্দরটি দিয়ে সব থেকে বেশি আমদানি করা হয় পাথর। এর মাঝে রবিবার দুপুরে ৪টি ভারতীয় গাড়িতে চালের চালান ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

আজাদ বলেন, “রবিবার দুপুরে বন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে আতপ চালগুলো আমদানি হয়। চালগুলো চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান সালমা ট্রেডিংয়ের প্রতিষ্ঠান ও মালিক সামসুল আলম আমদানি করেছেন।”

পঞ্চগড়ের পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী কামরুল হাসান ও রেজাউল করিম রেজা বলেন, “সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স নিরোগ ট্রেডার্সের (সাঈদুর রহমান বাবলু) মাধ্যমে সালমা ট্রেডিংয়ের আমদানিকারক ও মালিক সামসুল আলম চালগুলো আমদানি করেছে। গাড়ি সল্পতা থাকায় আমদানি করা ১০৫ মেট্রিকটন আতপ চালের মধ্যে রবিবার ৬০ মেট্রিকটন চাল বন্দর এলাকা থেকে আমদানিকারকের প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়েছে। সোমবার বাকি ৪৫ মেট্রিক টন চাল আমদানিকারকের প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে।”

এর আগে গত ২৬ নভেম্বর ২০২৪ স্থলবন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে চারটি ট্রাকে ১০০ মেট্রিকটন আতপ চাল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রহর ইন্টারন্যাশনালের (জাহাঙ্গীর আলম) মাধ্যমে আমদানি করে আল আমিন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এরপর ৮ ডিসেম্বর বন্দরটি দিয়ে ভারত থেকে চারটি ট্রাকে ১০০ মেট্রিকটন আতপ চাল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রহর ইন্টারন্যাশনালের (জাহাঙ্গীর আলম) মাধ্যমে আমদানি করেছে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠান সালমা ট্রেডিংয়ের আমদানিকারক ও মালিক সামসুল আলম।

ঢাকা/নাঈম/এস

.

উৎস: Risingbd

এছাড়াও পড়ুন:

দুই মাস পর ভুটানের প্রথম চালানের পণ্য খালাস শুরু

দুই মাস আগে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে নামানো হয়েছিল ভুটানের ট্রানজিট পণ্যের প্রথম চালান। তবে সরকারি সংস্থাগুলোর এ–সংক্রান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় এত দিন খালাস করা যায়নি। গত সপ্তাহে বিভিন্ন সংস্থার অনুমোদনের পর গতকাল রোববার চালানটি খালাসের প্রক্রিয়া শুরু করে ভুটানের পণ্য খালাসের জন্য নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধি। আজ সোমবার চালানটি বন্দর থেকে খালাসের পর ভুটানের উদ্দেশে নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে সই হওয়া ‘অ্যাগ্রিমেন্ট অন দ্য মুভমেন্ট অব ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট’ চুক্তি ও প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলক চালানটি নেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২২ মার্চ এই চুক্তি ও প্রটোকল সই হয়েছিল। ভুটান স্থলবেষ্টিত হওয়ায় দেশটিতে কোনো সমুদ্রবন্দর নেই। ফলে তৃতীয় দেশের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করতে হয়। বাংলাদেশের মাধ্যমে শুরু হওয়া পরীক্ষামূলক চালান পরিবহনে দেশটি সন্তুষ্ট হলে নিয়মিত পণ্য পরিবহন শুরু হতে পারে। তবে এটি নির্ভর করছে ভুটানের সিদ্ধান্তের ওপর।

থাইল্যান্ড থেকে আসা ভুটানের পরীক্ষামূলক চালানটিতে ৬ হাজার ৫৩০ কেজি পণ্য রয়েছে। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে শ্যাম্পু, শুকনো পাম ফল, আইস টি, চকলেট ও জুস। চালানটির রপ্তানিকারক থাইল্যান্ডের অ্যাবিট ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড। চালানটি আমদানি করেছে ভুটানের এবিট ট্রেডিং।

পরীক্ষামূলক চালান খালাসে বিলম্ব

দুই দেশের মধ্যে চুক্তি ও প্রটোকল সই হয় ২০২৩ সালে। এক বছর পর ২০২৪ সালের এপ্রিলে ভুটানে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ–ভুটান বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের সভায় সুবিধাজনক সময়ে দুটি পরীক্ষামূলক চালান পরিবহনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ৮ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডের ল্যাম চ্যাবাং বন্দরে ভুটানের চালানের কনটেইনার জাহাজে বোঝাই করা হয়। ভুটান বিষয়টি বাংলাদেশকে অবহিত করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরে পাঠানো হয়। তার আগেই গত ২২ সেপ্টেম্বর ভুটানের চালানটি বাংলাদেশি পতাকাবাহী ‘এমভি এইচআর হিরা’ জাহাজে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়।

এরপর গত ১৭ নভেম্বর রাজস্ব বোর্ড ভুটানের প্রথম চালানের কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য অফিস আদেশ জারি করে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ট্রানজিট চালানে সড়কের টোল ও মাশুলের বিষয় জানিয়ে এনবিআরকে চিঠি দেয় গত ২০ নভেম্বর। এরপর ভুটানের পণ্য খালাসের জন্য নিয়োজিত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এন এম ট্রেডিং করপোরেশন কাজ শুরু করে।

জানতে চাইলে এন এম ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল আলম খান গতকাল রোববার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘সড়কের টোল ও মাশুল দিচ্ছি। আশা করি, সোমবার বন্দর থেকে পণ্য খালাস করতে পারব। এরপরই সড়কপথে কনটেইনারটি ভুটানে নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, গতকাল রোববার বিকেলে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট যাবতীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর কয়েক ঘণ্টায় চালানটির শুল্কায়ন হয়েছে। এখন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে চালানটি খালাস নিতে পারবে।

পরীক্ষামূলক চালান পরিবহনের নির্ধারিত ট্রানজিট পথ অনুযায়ী চালানটি নেওয়া হচ্ছে। এই পথ হলো থাইল্যান্ডের ল্যাম চাবাং বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সড়কপথে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরের মাধ্যমে শিলিগুড়ি হয়ে অর্থাৎ ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভুটানের ফুয়েন্টশোলিং স্থলবন্দর।

পরীক্ষামূলক চালান থেকে কত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভুটানের পরীক্ষামূলক চালানে চট্টগ্রাম কাস্টমস, চট্টগ্রাম বন্দর এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ—এই তিন সংস্থা মাশুল আদায় করবে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল নির্ধারণ করা আছে। অন্য দুই সংস্থা পরীক্ষামূলক চালানটির জন্য মাশুল নির্ধারণ করেছে।

গত ১৭ নভেম্বর এনবিআরের আদেশে জানানো হয়, প্রতি চালানে ডকুমেন্ট প্রসেসিং ফি ৩০ টাকা, ট্রান্সশিপমেন্ট ফি প্রতি টন ২০ টাকা, নিরাপত্তা চার্জ প্রতি টন ১০০ টাকা, এসকর্ট ফি প্রতি কনটেইনারে কিলোমিটারপ্রতি ৮৫ টাকা, প্রশাসনিক মাশুল প্রতি টন ১০০ টাকা এবং স্ক্যানিং ফি প্রতি কনটেইনারে ২৫৪ টাকা।

পরীক্ষামূলক চালানের জন্য সড়ক টোল ও মাশুল নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২০ নভেম্বর এনবিআরে পাঠানো সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের চিঠি অনুযায়ী, ট্রানজিট পথের (চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর) দৈর্ঘ্য ৬৮৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট অ্যাকসেস রোডে ১২ কিলোমিটারের টোল সড়ক রয়েছে, যার জন্য ৪৫ টাকা টোল দিতে হবে। এ ছাড়া মেঘনা, মেঘনা–গোমতী, যমুনা এবং তিস্তা ব্রিজের জন্য মোট টোল দিতে হবে ৪ হাজার ৮১৫ টাকা। আবার ট্রেইলারের মোট ওজন ধরে প্রতি টনে টোল ফ্রি সড়কের (৬৭২ কিলোমিটার) জন্য মাশুল দিতে হবে ১ হাজার ৪৬২ টাকা। এ হিসাবে সাড়ে ৬ টন পণ্যের জন্য ১০ হাজার ২৩৪ টাকা মাশুল দিতে হবে।

চাপ পড়বে না বন্দরে

ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভুটানের বৈদেশিক বাণিজ্য ছিল ১৮৯ কোটি ৫৮ লাখ মার্কিন ডলারের। দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্যের ৭৯ শতাংশ বা প্রায় ১৪৯ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে ভারতের সঙ্গে। বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া অন্য দেশের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য খুবই কম, ২০২৪ সালের হিসাবে যা ভুটানের মোট বাণিজ্যের ১৭ শতাংশ বা ৩২ কোটি ডলার। ট্রানজিট চালু হলে এসব পণ্যই নেওয়া হতে পারে বাংলাদেশ ও ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক পর্ষদ সদস্য মো. জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ভুটান বাংলাদেশের মাধ্যমে নিয়মিত ট্রানজিট পণ্য পরিবহন করলেও তা বন্দরের ওপর চাপ তৈরি করবে না। কারণ, দেশটি যে পরিমাণ পণ্য পরিবহন করবে, তা বন্দরের সক্ষমতার তুলনায় নগণ্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই মাস পর ভুটানের প্রথম চালানের পণ্য খালাস শুরু