নগদকে মেরে ফেলা হচ্ছে না, আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে: গভর্নর
Published: 12th, January 2025 GMT
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘নগদে কিছু ব্যত্যয় পাওয়া গেছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নগদকে মেরে ফেলা হচ্ছে না; বরং বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে সেটাকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে, যাতে বিকাশের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে পারে।’
গতকাল রোববার প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত ‘ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল ইকোসিস্টেম: ব্রিজিং দ্য গ্যাপস’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ কথা বলেন।
এমসিসিআইয়ের রাজধানীর গুলশানের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশে ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে স্মার্টফোনের দাম কমানো প্রয়োজন। পাশাপাশি ইন্টারনেটের গতি বাড়ানো জরুরি এবং দেশে ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে যত রকমের ব্যবস্থা আছে, তার সব কটিকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসা দরকার।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এমসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করীম ও ভাইস প্রেসিডেন্ট সিমিন রহমান এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক বজলুল হক খন্দকার।
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের টেলিযোগাযোগ খাতে করপোরেট করহার অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে অতীতের সরকারগুলো ক্ষীণ দৃষ্টির পরিচয় দিয়েছে। এত বেশি হারে কর থাকলে শিল্প খাতে বিনিয়োগ কমে যায়। বিষয়টি গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।
দেশে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে কিউআর কোড গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই কিউআর কোড ব্যবহারের জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়, তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বেশি হয়ে যায় বলে মনে করেন আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ক্ষেত্রে যে ইন্টার অপারেটিভিলিটি চালু হওয়ার কথা ছিল, তা একরকম ব্যর্থ হয়েছে। সাবেক সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে এটা হয়েছে।
দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিসের গেটওয়েতে নানা সমস্যা থাকলেও গত এক দশকে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে করেন বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কামাল কাদীর। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিকাশ গ্রাহকদের যে ক্ষুদ্রঋণ দিয়েছে, তা অনেকটাই সফল হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ লাখ মানুষকে তা দেওয়া হয়েছে। দেখা গেছে, বড় বড় ঋণগ্রহীতার তুলনায় এসব ঋণগ্রহীতার মধ্যে খেলাপি হওয়ার প্রবণতা খুবই কম।
কামাল কাদীর আরও বলেন, ডিজিটাল সেবা যথাযথভাবে দেওয়া গেলে বিদ্যমান অবকাঠামোতে অনেক কিছু করা যায়; ঠিক যেভাবে ইউএসএসডি সেবার মাধ্যমে এমএফএস বা মোবাইলে আর্থিক সেবাকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
অনুষ্ঠানে একটি উপস্থাপনা দেন এমসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ এন করীম ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক বজলুল হক খন্দকার। এতে তাঁরা দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সেবার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোকপাত করেন এবং এই খাতের বিভিন্ন সম্ভাবনা ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এমএফএস-ব্যাংক আন্তলেনদেন চালু হয়েছে, শুরু করতে পারেনি বিকাশ ও নগদ
মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (এমএফএস), ব্যাংক ও পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডারগুলোর (পিএসপি) মধ্যে আন্তলেনদেন চালু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় এই সেবা আজ শনিবার চালু হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় দুই এমএফএস প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদ এই সেবা চালু করতে পারেনি। এমনকি রকেটও সেবাটি চালু করতে পারেনি। ফলে বেশির ভাগ ব্যবহারকারী এই সেবার বাইরে রয়ে গেছেন।
বিকাশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে সেবাটি চালুর জন্য। যেকোনো সময় গ্রাহকেরা সেবাটি পাবেন। অন্যদিকে নগদ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই সেবা চালু করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করা হয়েছিল, তাতে সাড়া মেলেনি। ফলে চালু করা যায়নি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেবাটি চালু করতে বিকাশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স না থাকায় নগদকে সংযোগ দেওয়া হয়নি। অনেকেই সেবাটি চালু করেছে। আশা করছি শিগগির সবাই সেবাটি চালু করতে পারবে।’
এর আগে গত মাসের শুরুতে এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দেশে নগদ অর্থ লেনদেন কমানোর জন্য ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ অব বাংলাদেশ (এনপিএসবি) অবকাঠামো ব্যবহার করে সব ব্যাংক, এমএফএস প্রতিষ্ঠান এবং লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তলেনদেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ ১ নভেম্বর থেকে ব্যাংক, পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার ও এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলো এই লেনদেন শুরু করবে।
কারা চালু করতে পেরেছেআজ থেকে কারা এই সুবিধা চালু করতে পেরেছে, তার একটি তালিকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে দেখা গেছে, দেশের ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপি মিলে ১০টি প্রতিষ্ঠান এই সেবা চালু করেছে। এই তালিকায় রয়েছে ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংকের এমক্যাশ, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, রকেট ও আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ইসলামিক ওয়ালেট এই সেবা চালু করেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংকের টাকা জমা সুবিধা চালু হয়েছে। তবে এসব হিসাব থেকে টাকা পাঠানো সুবিধা চালু হয়নি। বাকি ১০টি প্রতিষ্ঠান জমা ও পাঠানো দুটো সুবিধা চালু করেছে।
বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পিআর শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম এক লিখিত বক্তব্যে জানান, ‘বিকাশ শুরু থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের আন্তলেনদেন সেবা চালুর উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আছে এবং সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে এই সেবার সর্বশেষ সংস্করণে যুক্ত হওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, এই সুবিধা গ্রাহকদের জন্য ডিজিটাল লেনদেন আরও সহজ ও সুবিধাজনক করে তুলবে। তবে আন্তলেনদেনের কার্যকারিতা এই ব্যবস্থায় সংযুক্ত অন্য অংশীজনদের ওপরও নির্ভর করে। তাই এই মুহূর্তে আমরা শক্তিশালী অথেনটিকেশন এবং স্তরভিত্তিক (লেয়ারড) নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি, যাতে লেনদেন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয় এবং এ-সংক্রান্ত কোনো বিরোধ (ডিসপিউট) দেখা দিলে তা সমাধান করা যায়। সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পর আমরা আশা করি খুব দ্রুতই গ্রাহকেরা পূর্ণাঙ্গভাবে সেবাটি ব্যবহার করতে পারবেন।’
নগদের কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এনপিএসবির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে কয়েক দফা চিঠি দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। যদিও মাশুল নির্ধারণ, কারিগরি কমিটিসহ এ-সংক্রান্ত সব সেবায় নগদের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এরপরও সংযোগ না পাওয়ায় সেবাটি চালু করা যায়নি।
এদিকে রকেটের কর্মকর্তারা বলেন, ‘ছুটির দিনের কারণে এখনো সেবাটি চালু করা যায়নি। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। আশা করছি রোববার থেকে শুরু হবে।’
খরচ কতনতুন নিয়মে ব্যাংক থেকে যেকোনো ব্যাংক, এমএফএস ও পিএসপিতে এক হাজার টাকা পাঠালে গ্রাহককে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৫০ পয়সা মাশুল গুনতে হবে। তবে ব্যাংক চাইলে আগের মতো বিনা খরচে এ সেবা দিতে পারবে।
বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো এমএফএসগুলো একে অপরের পাশাপাশি ব্যাংক ও পিএসপিতে টাকা পাঠাতে পারবে। এতে এক হাজার টাকা পাঠাতে খরচ হবে সর্বোচ্চ সাড়ে আট টাকা। আর যেকোনো পিএসপি হিসাব থেকে ব্যাংক বা এমএফএসে টাকা পাঠালে প্রতি হাজারে খরচ দিতে হবে দুই টাকা।