বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের অভিযোগে ২৭ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
Published: 13th, January 2025 GMT
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে নবীন শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের ঘটনায় ২৭ শিক্ষার্থীকে ১ বছরের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হলটির প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বজলুর রহমান মোল্যা।
প্রাধ্যক্ষ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, শৃঙ্খলাপরিপন্থী কার্যকলাপে জড়িত অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ওই হলের প্রথম (দ্বিতীয় সেমিস্টার) ও দ্বিতীয় বর্ষের (দ্বিতীয় সেমিস্টার) ২৬ জন এবং ১ জন স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আছেন।
সোহরাওয়ার্দী হলের নবীন শিক্ষার্থীরা জানান, গত শনিবার রাত নয়টার দিকে প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের হলের রিডিংরুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাঁদের ব্যবহৃত মুঠোফোন নিজেদের কক্ষে রেখে আসতে বাধ্য করা হয়। পরে তাঁদের উদ্ভট নিয়ম মানার নির্দেশনা জানান অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। এগুলো হলো সাইকেল চালানো যাবে না, দ্বিতীয় তলায় যাওয়া নিষিদ্ধ, বড় ভাইদের দিনে একাধিকবার সালাম দিতে হবে, হলে লুঙ্গি পরা যাবে না, হলের গ্রন্থাগারে ল্যাপটপ আনা যাবে না, ক্যানটিনে যাওয়া যাবে না ইত্যাদি।
একপর্যায়ে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা গিয়ে নবীনদের কাছে বিভিন্ন সমস্যার কথা জানতে চান। সমস্যাগুলো বলার পর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা চলে যান। পরে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা আবার নবীনদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত কাজ করতে বাধ্য করা হয়। একপর্যায়ে এক নবীন শিক্ষার্থী ভয় পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই ঘটনা জানাজানি হলে গতকাল রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হল কর্তৃপক্ষ হল পরিদর্শন করে জড়িত শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে।
সোহরাওয়ার্দী হলের এ ঘটনায় মোট ৫২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে ২৭ জন হলের বৈধ বাসিন্দা এবং বাকি ২৫ জন অন্য হলের শিক্ষার্থী। ২৭ জনকেই হল থেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে এবং অধিকতর শাস্তির জন্য ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠানো হবে। অবৈধভাবে হলে থাকা শিক্ষার্থীদেরও চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা
কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।
আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।
তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।
বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।
গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।
ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’
বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’
সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’
জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’
আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’
ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।