ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীনকে হেনস্তা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সমাজসেবা সম্পাদক যুবাইর বিন নেছারী (এ বি জুবায়ের)। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে ওই শিক্ষককে হেনস্তা করেন তিনি। একপর্যায়ে অধ্যাপক জামাল উদ্দীন দৌড়ে পালাতে গেলে তাঁকে ধাওয়া করেন এ বি জুবায়ের। পরে অবশ্য ওই শিক্ষক একটি গাড়িতে করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।

বেলা দুইটার দিকে এ ঘটনার পর এ বি জুবায়ের এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ পাঁচজন শিক্ষক ক্যাম্পাসে গোপন বৈঠকে যুক্ত হয়েছিলেন। খবর পেয়ে তাঁদের পাকড়াও করে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তাঁরা। তবে আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা গাড়িতে তাঁরা পালিয়ে গেছেন।

এ ঘটনার বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আ ক ম জামাল উদ্দীনসহ আওয়ামী লীগপন্থী কয়েকজন শিক্ষক আজ দুপুরে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনে এসেছিলেন। খবর পেয়ে কিছু শিক্ষার্থী ওই ভবনের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে ডাকসু নেতা এ বি জুবায়েরের নেতৃত্বে আ ক ম জামাল উদ্দীনকে ধাওয়া দেওয়া হয়।

এ বি জুবায়ের গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সমাজসেবা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। জুবায়ের স্বতন্ত্রভাবে ডাকসুতে নির্বাচিত হলেও তাঁর প্রতি ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থন ছিল বলে ক্যাম্পাসে আলোচনা আছে। ডাকসুতে নির্বাচিত হওয়ার পর গত অক্টোবর মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভ্রাম্যমাণ দোকান, হকার, মাদকসেবী ও ভবঘুরে উচ্ছেদে ‘অভিযান’ চালিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে তখন পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হেনস্তার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সিঁড়িতে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীনকে জাপটে ধরে আটকানোর চেষ্টা করছেন জুবায়ের। অধ্যাপক জামাল নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে তাঁর পরিহিত হুডি খুলে ফেলেন। একপর্যায়ে সিঁড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন ডাকসু নেতা জুবায়ের ওই শিক্ষকের পিছু ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে অধ্যাপক জামাল একটি গাড়িতে উঠে পড়েন। তখনো গাড়ির দরজা ধরে তাঁকে টেনে নামানোর চেষ্টা করছিলেন জুবায়ের।

ঘটনার পর এই ভিডিও নিজেই ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ডাকসু নেতা এ বি জুবায়ের। সেই পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, ‘স্বঘোষিত রাজাকারের বাচ্চাগুলোরে ধইরা ধইরা ব্রাশফায়ার দিতে হবে বলা আওয়ামী লীগের কুলাঙ্গার শিক্ষক আ ক ম জামাল, নীল দলের পোস্টেড নেতা জিনাত হুদাসহ ৫ জন ফ্যাসিস্টের দোসর শিক্ষক আজকে ক্যাম্পাসে এসে গোপন মিটিংয়ে যুক্ত হয়েছিল। খবর পেয়ে আমরা তাদেরকে পাকড়াও করে পুলিশে দেয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আনফরচুনেটলি আগে থেকে প্রস্তুত করে রাখা গাড়িতে উঠে পালিয়ে যায় কুলাঙ্গারগুলো! ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীরা এদের ক্লাস-পরীক্ষা সব বয়কট করেছে। তারপরও এরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার সাহস কীভাবে পায়! প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে। খুনিদের সাথে কোনো সহাবস্থানের সুযোগ নেই। সবগুলোকে বিচারের আওতায় আনতে হবে শীঘ্রই।’

অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক ছিলেন। এ সংগঠনকে ঘিরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। একপর্যায়ে মঞ্চে বিভক্তি তৈরি হলে সংগঠনের একটি পক্ষ অধ্যাপক জামালকে বহিষ্কারও করেছিল। তবে এরপরও তিনি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ব্যানারে কার্যক্রম চালিয়ে যান।

ঘটনার বিষয়ে অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, গত মাসে তাঁকে নীল দলের আহ্বায়ক করা হয়। নীল দলের পক্ষ থেকে তাঁরা কয়েকজন শিক্ষক আজ দুপুরে উপাচার্যের কাছে একটি স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার সময় তিনিসহ কয়েকজন শিক্ষক সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে যান চা খাওয়ার জন্য। চা খেয়ে যখন সেখান থেকে বের হন, তখন তিন-চারজন ছাত্র তাঁদের সামনে ব্যারিকেড দেন যে তাঁদের এখান থেকে যেতে দেবেন না।

অধ্যাপক জামালের ভাষ্য, ‘একপর্যায়ে তারা আমার গায়ে হাত দেয়, হামলা করে। তারা আমার ব্যাংক কার্ড, ক্রেডিট কার্ড—সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, তারা কি আমাকে এভাবে হামলা করতে পারে? আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইন অনুযায়ী তার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ডাকসুর একজন প্রতিনিধি হয়ে কি এ ধরনের কাজ করা যায়?’

ঘটনার সময় অধ্যাপক জামাল উদ্দীনের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষকদের হেনস্তা করা, তাঁদের ওপর হামলা করা এখন একটি সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এ ঘটনাকে হত্যাচেষ্টা হিসেবেই দেখি। আমার শিক্ষকতাজীবনে আমি কখনো এ ধরনের ঘটনা দেখিনি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও উপাচার্য এখনো আমাদের খোঁজ নেননি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: একপর য য় আওয় ম ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি হওয়া ৯৪ ভরি সোনা উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৫

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি হওয়া ৯৪ ভরি ১৪ আনা সোনা উদ্ধার করেছে মুন্সিগঞ্জ পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ডাকাতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার রাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান জেলার পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপপরিদর্শক আক্তারুজ্জামান মুন্সি, মাই টিভির প্রতিনিধি মো. রমজান, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি রমজান আলী, মাইক্রোবাসচালক জাকির হোসেন ও মিরপুরের জুয়েলারি ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৭ ডিসেম্বর বিকেল সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যাত্রীবাহী বাসে করে সোনা নিয়ে যাচ্ছিলেন দুই ভাই। বাসটি গজারিয়া এলাকায় পৌঁছালে পুলিশের পোশাক পরা তিনজনসহ পাঁচজনের একটি দল ওই দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মাদক মামলার অজুহাত দেখিয়ে বাস থেকে নামিয়ে নেন। একপর্যায়ে তাঁদের হাতকড়া পরিয়ে একটি ‍মাইক্রোবাসে তোলা হয়। পরে তাদের চোখ বেঁধে মারধর করে ১৪৫ ভরি স্বর্ণালংকার, টাকা, মুঠোফোন, এটিএম কার্ড ও জাতীয় পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ওই দুই ব্যবসায়ীকে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার একটি এলাকায় হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়।

খবর পেয়ে মুন্সিগঞ্জ ডিবি পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান শুরু করে। ৯ ডিসেম্বর সকাল থেকে রাজধানীর কাফরুল, মিরপুর ও মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসব এলাকা থেকে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ওই পাঁচজনকে আটক করা হয়।

একপর্যায়ে তাঁদের কাছ থেকে ৯৪ ভরি ১৪ আনা সোনা, সোনা বিক্রির ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, ২ জোড়া হাতকড়া, ২টি ওয়াকিটকি, পুলিশের ৩ সেট ইউনিফর্ম ও ৭টি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়।

মুন্সিগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মেনহাজুল আলমের সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় গজারিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অবশিষ্ট সোনা ও পলাতক এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ডাকাতি হওয়া ৯৪ ভরি সোনা উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৫