ঐহিত্যবাহী ৭০০ পরিবারের মেহারন দালাল বাড়ি
Published: 13th, January 2025 GMT
চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় ভাতারা খালের তীরে এক বাড়িতে ৭০০ পরিবারে ১০ হাজার লোক বসবাস করছে। তাদের ভোটে একটি ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়। গ্রামের নাম মেহারন। এটি উপজেলার নায়েরগাও দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে অবস্থিত।
সোমবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে মেহারন গ্রামে গেলে পরিবারটির বিষয়ে জানা যায়।
স্থানীয়রা জানান, ধনাগোদা নদী থেকে আসা বোয়ালজুরী খালের শাখা ভাতারা খাল। এর তীর ঘেঁষে মেহারন বিলের সঙ্গে মিশে দুটি প্রাচীন জমিদার বাড়ি ঘিরে গড়ে উঠেছে মেহারন দালাল বাড়ি। যেখানে ভোটার ৩ হাজারেরও বেশি।
সেখানকার বাসিন্দা সুবল দাস জানান, মেহারন দালাল বাড়ির সঠিক ইতিহাস নিয়ে নানামুখী বক্তব্য থাকলেও আনুমানিক ৪০০ বছর আগে মতলবের কাশিমপুর এলাকার জমিদার ও কুমিল্লার গৌরীপুর এলাকার জমিদারের মধ্যে বিবাদ থেকে রণক্ষেত্র তৈরি হয়। সেই রণক্ষেত্র শব্দটি ‘মহারণ’ নামেও পরিচিত। আর এই মহারণ থেকে মেহারন নামের উৎপত্তি।
তিনি আরও জানান, এক সময় কুমিল্লার লাকসামের জমিদার এসে মতলবের আলীয়ারা গ্রামে বসে খাজনা আদায় করতেন। তবে অনেকটা দূরের হওয়ায় ওই জমিদারদের এখানকার চাষিরা খাজনা দিতে চাইতেন না। তখন লাকসামের জমিদার কালীবাবু মেহারন গ্রামের জমিদার দ্বারিকানাথ দাস ও বৈকুণ্ঠ দাসকে খাজনা তোলার দায়িত্ব দেন। এরপর থেকে মেহারনের জমিদাররা আলীয়ারা ও নারায়ণপুর গ্রামের খাজনা উঠাতেন। এর ভাগ লাকসামের জমিদারকেও দিতেন। জমিদারদের ব্রিটিশরা উপাধি দেয় ‘দালাল’ বলে। এ জন্য এ বাড়ির নাম ‘মেহারন দালাল বাড়ি’। কথিত রয়েছে, জমিদার দ্বারিকানাথ দাস, বৈকুণ্ঠ দাস ও গিরিশচন্দ্র দাস যখন খাজনা আদায় করতেন, তখন স্থানীয় লোকজন তাদের ‘দালাল’ বলে ডাকতেন। সেই থেকে মেহারনের জমিদারদের নামের সঙ্গে ‘দালাল’ তকমাটি যুক্ত হয়। বর্তমানে মেহারনবাসীর অনেকে সেই জমিদারদের বংশধর।
রিপন দাস জানান, দ্বারিকানাথ দাসরা চার ভাই হলেও বুদ্ধি ও মেধার দাপটে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হয়ে উঠে ছিলেন দ্বারিকানাথ দাস। তিনি তার চার ছেলের জন্য দুটি ভবন নির্মাণ করেন ১২৭ বছর আগে। দুইতলা ওই দুটি ভবনের প্রতি তলায় একজন করে মোট চার ভাইয়ের পরিবার থাকতেন। এর একটি ১৩৩৫ বঙ্গাব্দে এবং অপরটি ১৩৪৪ বঙ্গাব্দে নির্মিত হয়েছিল। দালালদের ৪র্থ প্রজন্ম এখনও বাড়িটিতে বসবাস করছেন।
দ্বারিকানাথ দাসের নাতির বৌ লাকি রানী দাস বলেন, ‘‘পরিবারের পুরুষ লোকেরা ঢাকায় মাছের কাজে জড়িত। মহিলারা এখানে বসবাস করছি। লোকজন নানা সময় এসে দালাল বাড়ির ইতিহাস জানতে চায় এবং জমিদার ভবনের ছাদে যেতে চাইলে আমরা দেখাই। আমাদের কাছে ভালোই লাগে।’’
মতলব উপজেলা যুব ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব চন্দন বিশ্বাস জানান, কালের সাক্ষী হয়ে দুটি ভবনকে ঘিরে প্রায় দেড় কিলোমিটার জুড়ে ছোট ছোট টিনের ঘর, আধা পাকা টিনের ঘর ও বেশ কিছু দালানও গড়ে উঠেছে। এছাড়াও বাড়িটিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়, ছোট-বড় মিলিয়ে আটটি মন্দির এবং ৬০টির মতো টিউবওয়েল আছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে শান্তিপূর্ণভাবে মন্দিরে পূজার্চনায় ব্যস্ত থাকেন মেহারনের দালাল বাড়ির বাসিন্দারা।
মতলব উপজেলা যুব ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সমীর ভট্টাচার্য জানান, দালাল বাড়ির সবাই সনাতন হিন্দু ধর্মালম্বী এবং এরা অধিকাংশই জেলে। তবে চাহিদা মেটাতে এখানে মুদি দোকান হতে শুরু করে সবজি বাজার গড়ে উঠেছে। যেখানের ক্রেতা-বিক্রেতা সব এখানকার মানুষ। এ বাড়ির সড়ক অত্যন্ত সরু এবং এক ঘরের ভিতর দিয়ে অন্য ঘরে যাওয়ার চলাচলের পথ। শান্ত নিরিবিলি এ গ্রামের প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রে এখানকার ছেলেদের বিয়ে হয়।
মেহারন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাধব চন্দ্র দাস জানান, জরাজীর্ণ অবস্থাতেও স্কুলটিতে পড়ালেখা চলছে। বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়ায় ক্লাস নেওয়ার ইচ্ছা থেকেও তা হচ্ছে না। ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণীর ১১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য এখানে শিক্ষক মাত্র ৫ জন। খেলার মাঠ এবং ভবনটি সংস্কার প্রয়োজন। স্কুল ভবনের জমি মন্দিরের নামে হওয়ায় স্কুলটি এমপিওভুক্তিও করা যাচ্ছে না।
নায়েরগাও দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ভরত চন্দ্র দাস বলেন, মেহারন দালাল বাড়ির নানামুখী সমস্যা রয়েছে। এরমধ্যে সেনিটাইজেশন ব্যবস্থা, টিউবওয়েল, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, উন্নত রাস্তা, মন্দির সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা পাওয়ার জন্য প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
নায়েরগাও দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস ছালাম মৃধা মামুন বলেন, ‘‘রাস্তা মেরামতসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধানে প্রশাসনের সহায়তা চাই। আমি দায়িত্ব নিয়ে বেশ কয়েকবার রাস্তা মেরামতের উদ্যোগ নিয়েও নানা প্রতিবন্ধকতায় করা হয়ে ওঠেনি। স্কুলটির সমস্যার কথাও প্রশাসনকে অবগত করেছি।’’
এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন জানান, দ্রুতই মেহারন গ্রাম পরিদর্শন করে তাদের স্কুলের সমস্যা এবং সব সমস্যা সমাধানে জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে উদ্যোগ নেবেন।
ঢাকা/জয়/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ছয়জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরো আটজনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।”
আরো পড়ুন:
সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত: আইএসপিআর
ঢামেক হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার
তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।”
বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ।”
তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল