চুরি করতে গিয়ে চিনে ফেলায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয় ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ওহাব মাতুব্বরকে (৭৩)। মঙ্গলবার সকাল ১১টার সময় সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল জলিল।

এই হত্যার রহস্য উদঘাটন ও জড়িত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন, ভাঙ্গা উপজেলার আলেখারকান্দার রাজ্জাক কাজীর ছেলে আমিন কাজী (৪০), সদরপুর উপজেলার চর ব্রাহ্মন্দী গ্রামের কাইয়ুম হাওলাদার ছেলে অভি হাওলাদার (২৪) ও হাজেরিয়া হাজীরকান্দি গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে আব্দুর রহমান (২০)।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, পুলিশ প্রথমে চুরি হওয়া বাড়ির প্রতিবেশী সন্দেহভাজন আমিনকে গ্রেপ্তার করে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তার দেয়া তথ্যমতে ১৩ জানুয়ারি দিনভর অভিযান চালিয়ে বাকি দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে আসামিদের আদালতে পাঠানো হবে।

তিনি জানান, আসামিরা ভেবেছিল যেহেতু বাড়ির মালিক অনেক বড়লোক বাড়িতে মূল্যবান মালামাল পাবে। সে উদ্দেশ্যে চুরি করতে ঢুকে ছিল। বাড়িতে চুরি করার চেষ্টার এক পর্যায়ে কেয়ারটেকার দেখে ফেলায় তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। তবে তারা বাড়িতে তেমন কোনো মালামাল পায়নি। 

নিহত ওহাব মাতুব্বর দীর্ঘদিন প্রবাসী ছিল। অবিবাহিত থাকায় বৃদ্ধ বয়সে তার সঙ্গে তেমন কারো যোগাযোগ ছিল না। তাকে ১ জানুয়ারি ভোরে হত্যা করা হয়।

এর আগে, গত ৮ জানুয়ারি রাতে ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের আলেখারকান্দা গ্রাম থেকে ডাক্তার জামাল উদ্দিন খলিফার বাড়ির কেয়ারটেকার ওহাব মাতুব্বরের হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

জামাল উদ্দিন কয়েক মাস আগে মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার পর তার ৩ তলা বাড়িটি ফাঁকা থাকতো। তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। তাই ওই বাড়ির দেখভাল করার জন্য ওহাব মাতুব্বর বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। ওই বাড়িতেই বসবাস করতেন তিনি।

ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ওহাব মাতুব্বরের বোন নুরজাহান বেগম ভাইকে শীতের পিঠা খাওয়াতে আসলে বাড়ি অন্ধকার দেখতে পেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তা নেন। এক পর্যায়ে বাড়ি থেকে গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ