মুলতানে পাকিস্তানের বড় লিডের দিনে ফিরে এল বাংলাদেশ
Published: 18th, January 2025 GMT
মুলতান টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে পাকিস্তান। ‘স্লো এন্ড লো’ উইকেটে দ্বিতীয় দিন শেষেই ২০২ রানের লিড নিয়েছে স্বাগতিকরা। তবে এই খবর ছাপিয়ে মুলতান টেস্ট এখন আলোচনায় পাকিস্তানের মাটিতে একদিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট (১৯টি) পতনের রেকর্ডে। আর তাতেই ফিরে আসছে ২২ বছরের পুরোনো এক স্মৃতি। যেখানে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের নামটি!
পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত মুলতান টেস্টটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অত্যন্ত দুঃখের একটা দিন। সেই ম্যাচে স্বাগতিকরা ২৬১ রানের লক্ষ্যে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ১৬৪ রানে হারিয়ে ফেলেছিল ৭টি উইকেট । এরপরও মাস্টার ব্যাটসম্যান ইনজামাম-উল-হকের হার না মানা ১৩৮ রানের উপর ভর করে নাটকীয়ভাবে ১ উইকেটে ম্যাচটা জিতে যায়।
সেই ম্যাচেই একদিনে ১৮ উইকেটের পতন হয়েছিল। যেটি ছিল পাকিস্তানের মাটিতে কোন টেস্টের একদিনে সবচেয়ে বেশি উইকেট পতনের রেকর্ড, যা অক্ষত ছিল ২২ বছর। শনিবার (১৮ জানুয়ারি, ২০২৫) তাতে ছেদ পড়লো। একদিনেই ১৯ উইকেটের পতন হলো। যার মাঝে ৯টি পাকিস্তানের এবং ১০টি ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশ সফরে আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশ, বিজয় দেখলো বিশ্ব
শনিবার ৪ উইকেটে ১৪৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা পাকিস্তান অলআউট হয় ২৩০ রানে। ৫১ রান নিয়ে খেলা শুরু করা রিজওয়ান ইনিংস টেনে নেন ৭১ পর্যন্ত। ৫৪ রানে দিন শুরু করা আরেক ব্যাটসম্যান সাউদ শাকিল খেলেন ৮৪ রানের ইনিংস। সফরকারীদের পক্ষে জেডেন সিলস আর জোমেল ওয়ারিকেন নেন ৩টি করে উইকেট।
ব্যাট করতে নেমে ৫১ রানে ৭ উইকেট হারানো ক্যারিবিয়ানরা শেষ চার ব্যাটসম্যানের কল্যাণে স্কোরবোর্ডে ১৩৭ রান জড়ো করে। দশে নামা ওয়ারিকেন অপরাজিত ছিলেন ৩১ রানে আর সিলসের ব্যাট থেকে আসে ২২ রান। নোমান আলি নেন ৫টি উইকেট, অন্যদিকে আরেক স্পিনার সাজিদ খানের শিকার ৪ উইকেট।
সফরকারীদের ব্যাটিং ব্যার্থতায় ছোট পুঁজি নিয়েও ৯৩ রানের বড় লিড পেয়ে যায় পাকিস্তান। শান মাসুদের দল দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দিন শেষ করে ৩ উইকেটের বিনিময়ে ১০৯ রান করে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইক ট একদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।
মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?
তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।
সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?
সরকারের পক্ষ থেকে রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।
এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন, সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!
এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]