শেরপুরে এক সাংবাদিককে ডেকে এনে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন দিয়েছেন ছাত্ররা। তাঁকে দেখতে এসে আদালত এলাকায় গ্রেপ্তার হয়েছেন অপর এক সাংবাদিক নেতা। পরে দু’জনকেই কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার দুই সাংবাদিক হলেন–মোশারফ হোসেন সরকার বাবু ও নূর হোসেন। 

এর মধ্যে বাবু নকলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং দু’টি জাতীয় দৈনিকের নকলা উপজেলা প্রতিনিধি। আর নূর হোসেন সাংগঠনিক সম্পাদক এবং স্থানীয় দৈনিকের জেলা প্রতিনিধি। বিশেষ ক্ষমতা আইন, নাশকতা এবং হত্যাসহ পৃথক মামলায় আজ সোমবার বাবু এবং রোববার নূর হোসেনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।

সাংবাদিক নেতারা জানান, শনিবার রাতে নকলার হলপট্টি মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক এসএম মাসুমসহ ১০-১৫ জন সাংবাদিক নূর হোসেনকে ফোন করে ডাকেন। পরে মারধর করে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাঁকে। 

রোববার বিকেলে নূর হোসেনকে আদালতে নিয়ে আসা হলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসেন বাবুসহ কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় আদালতের সামনে থেকে তাঁকে আটক করে পুলিশ। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেরপুরে সবুজ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাঁকে।

সমন্বয়ক এস এম মাসুম বলেন, সাংবাদিক নূর হোসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা ধরনের পোস্ট শেয়ার করে আসছিলেন। এর আগেও তাঁকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সংশোধন না হওয়ায় তাঁকে আইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে মারধর করা হয়নি।

জানা গেছে, বাবু নকলা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। গত বছর অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়ে পরাজিত হন তিনি।

নকলা থানার ওসি মো.

হাবিবুর রহমান বলেন, ছাত্ররা নূর হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। তাঁকে মারধরের বিষয়টি তিনি জানেন না। আর সদর থানার ওসি মো. জুবায়দুল আলম বলেন, আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বাবুকে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ