সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে মাছ বিক্রিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পুলিশ ও সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হয়েছেন।

সোমবার বিকেলে উপজেলার টুকেরবাজার এলাকার বউবাজারে এ সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কে প্রায় তিন ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৩০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার বউবাজারে মাছ বিক্রি নিয়ে এক ক্রেতার সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হয় স্থানীয় এক বিক্রেতার। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর জেরে সোমবার দুপুর থেকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে উপজেলার দুটি গ্রামের প্রায় ৪ হাজার মানুষ। এ সময় উভয় পক্ষ পরস্পরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ করে।

স্থানীয় মুরুব্বি ও পুলিশ মধ্যস্থতার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। সংঘর্ষের সময় সংশ্লিষ্ট থানার এসআই শরীফ নেওয়াজ, মধ্যস্থতা চেষ্টাকারী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান লাল মিয়া, পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াদ আলী ও সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে দু’জনকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিকেল ৩টার পর যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিকেল ৫টার পর এলাকা ছেড়ে যান উভয় গ্রামের মানুষ। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি ওজায়ের আল মাহমুদ জানান, তুচ্ছ ঘটনায় দুটি গ্রামের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এর আগে গত বছরের ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর একই এলাকার থানাবাজারে মোবাইল ফোন চার্জ দেওয়াকে কেন্দ্র করে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামের বাসিন্দারা সংঘর্ষে জড়ান। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ আহত পর স থ ত স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গভীর রাতে থানায় গিয়ে স্বামীর আত্মসমর্পণ, পরে ভাড়া বাসা থেকে স্ত্রীর লাশ উদ্ধার
  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা