গাইবান্ধার পলাশবাড়ি পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে দলের হেভিওয়েট নেতাদের নাম ব্যবহার করে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। তিনি চাকরি ও ব্যাংকের লোন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ, বাড়ি দখল ও হয়রানি করছেন।

আজ বুধবার গাইবান্ধা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন। এসময় তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, টাকা, বাড়ি উদ্ধারসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ও প্রশাসনের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী সেনাবাহিনীর সাবেক ওয়ারেন্ট অফিসার পলাশবাড়ির আসমতপুর এলাকার রফিকুল ইসলাম লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। এ সুবাদে আমাকে গরুর খামার করার জন্য তিন কোটি টাকার লোন পাইয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। সেই প্রস্তাবে রাজি হলে তিনি ২০২২ সালের ২৫ ও ২৮ আগস্ট দুই দফায় আমার কাছ থেকে ২৩ লাখ টাকা নেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও ব্যাংক থেকে লোন না পাওয়ায় হতাশ। আমি পরিবার নিয়ে এখন মানবেতর জীবন যাপন করছি। টাকার অভাবে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারছি না। এ নিয়ে প্রশাসনসহ দলের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে অভিযোগ জানিয়েও প্রতিকার পাইনি। বরং পরিবারের সদস্যদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন আবুল কালাম আজাদ।’

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর থেকে পলাশবাড়ি পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রতারণা-জালিয়াতি, হুমকি-ধমকি ও দখলদারিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তারা জানান, ৬ আগস্ট পলাশবাড়ীর কালিবাড়ি এলাকায় ব্যবসায়ী গোলাম আজমের সাত শতক জমিসহ বাড়ি দখল করেছেন আজাদ। এমনকি ২০০৭ সালেও আজাদ জমির জন্য তার বাবাকে ‘হত্যাচেষ্টা’ চালান। এছাড়াও চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মোছা.

শেলী বেগম, মোছা. শাপলা বেগম, সিমা খাতুন।

অভিযোগের বিষয়ে পলাশবাড়ী পৌর বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, তার নামে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। ৫ আগস্টের আগের ঘটনা সেখানে তুলে ধরা হয়েছে। বরং তিনি রফিকুল ইসলামের টাকার বিষয়ে বলেন, তার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার ঘটনায় আদালতে মামলা করেছেন তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা

হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।

চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।

শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো পড়ুন:

বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’

শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন  রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’

চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ