বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে মাদক প্রতিরোধে তরুণ সমাজের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার
Published: 3rd, February 2025 GMT
মাদকাসক্তি আধুনিক সভ্যতার বিপজ্জনক রোগ। এইডস, ক্যানসার ও হৃদরোগের মতো মাদকাসক্তিও ভয়াবহ রোগ। এটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও ক্ষতিকর। রোববার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির (বিইউ) স্থায়ী ক্যাম্পাস মিলনায়তনে ‘মাদকাসক্তি ও মাদক প্রতিরোধে তরুণ সমাজের ভূমিকা শীর্ষক’ এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।
ড্রিম বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেমিনারের সার্বিক সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ এবং বিজনেস ক্লাব।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড.
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুল হক। সেমিনার পরিচালনা করেন ইউনিভার্সিটির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জুয়াইরিয়া জাহান শায়মা, নাফিসুল হোসেন সতেজ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (গোয়েন্দা) খোরশেদ চঞ্চল বলেন, মাদকাসক্তি আধুনিক সভ্যতার বিপজ্জনক রোগ। মাদকের ভয়াল থাবায় ধ্বংসের পথে তরুণ প্রজন্ম।
শহর থেকে গ্রাম, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বত্রই মাদক পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালে। মাদকের কারণে বেড়ে যাচ্ছে সামাজিক অবক্ষয়। তরুণ সমাজ হারিয়ে ফেলছে তাদের নৈতিক মূল্যবোধ। এ ভয়াল মাদকের কারণে ভেঙে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন, নষ্ট হচ্ছে আস্থা-বিশ্বাস, পরিবার ও সমাজে তৈরি হচ্ছে নতুন আতঙ্ক।
মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস) এর সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, মাদকাসক্তি একটি বহুমাত্রিক জটিল সমস্যা। এ ব্যাধি দূর করতে দরকার সমন্বিত কর্ম প্রয়াস।
তিনি বলেন, দেশের উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীদের একটি বড় অংশ ইয়াবা ও আইস আসক্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ধনী পরিবারের অতি আদরের সন্তানরাই বেশি মাদকাসক্ত। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাই নয়, বর্তমানে কলেজ-স্কুলেও মাদক ঢুকে পড়েছে।
সমন্বিত সামাজিক প্রতিরোধ ছাড়া মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় জানিয়ে তিনি মাদক সমস্যার সমাধানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংগঠন, শিক্ষক, সব ধর্মীয় নেতারা, সুশীল সমাজ, অভিভাবকসহ সব শ্রেণি পেশার মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
সেমিনারে আলোচনায় অংশ নিয়ে অন্যান্য বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় ৭০ লাখ মানুষ বর্তমানে মাদক সেবন করে, যার আনুমানিক মূল্য প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। যা বাংলাদেশের মোট বাজেটের প্রায় এক চতুর্থাংশ এবং উন্নয়ন বাজেটের ৫৬ শতাংশ।
তারা আরও বলেন, বর্তমান বিশ্বে পারমাণবিক মারণান্ত্ররের চেয়েও ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে মাদক। যা প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের যুব সমাজকে। অকালে ঝড়ে যাচ্ছে অসংখ্য তাজা প্রাণ। দাম্পত্য জীবনের কলহের জের ধরে ভেঙে যাচ্ছে অসংখ্য সুখের সংসার। নেশার করাল গ্রাসে ধুঁকে ধুঁকে মরছে লাখ-কোটি তাজা প্রাণ। ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সর্বনাশা এ মাদক দাবানলের ন্যায় ছড়িয়ে পড়ছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিইউ’র ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বলেন, বর্তমানে বিইউ পরিবারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মাদকাসক্তি থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালকে মাদকমুক্ত রাখার জন্য এর কর্মকাণ্ড যত বিস্তৃত করা যাবে ততই আমাদের মঙ্গল।
মাদক ও ধূমপানের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে উপাচার্য বলেন, ইতোমধ্যে বিইউ’কে ধুমপানমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ যাতে নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভা শেষে অতিথি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে মাদকবিরোধী একটি র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল দ শ ইউন ভ র স ট র পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাসুমের বাম হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার আলামত থাকায় তার পরিবার অভিযোগ করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে কালনা মধুমতি সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর মাসুমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইজিবাইকের চালক সুজন শেখ তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।
আরো পড়ুন:
জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল
সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন
মাসুমের স্বজনরা জানিয়েছেন, শালনগর ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বিয়ের খবর পেয়ে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে তিনি ঢাকা থেকে লোহাগড়ায় আসেন। সকালে পরিবারের সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়, এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
মাসুম বিল্লাহর চাচা শরিফুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা শুনেছি, সকালে লোহাগড়া বাজারের একটি পার্লারে মেয়েটির সঙ্গে মাসুমের কথা হয়। এর পর মেয়েটির বাবার কাছ থেকে হুমকি পায় সে। পরে হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে মাসুমের মৃত্যুর খবর জানি। তার বাম হাতের নখ উপড়ানো ছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
মাসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া ইজিবাইক চালক সুজন বলেছেন, “ঘটনাস্থলে কোনো দুর্ঘটনার চিহ্ন ছিল না। তবে মনে হয়েছে, কেউ মাসুমকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।”
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম শনিবার (২ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”
ঢাকা/শরিফুল/রফিক