বন্দরে র্যাব পরিচয়ে প্রবাসীদের সর্বস্ব লুট, ডাকাত বশির গ্রেপ্তার
Published: 3rd, February 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের বন্দরে ভুয়া র্যাব পরিচয়ে প্রবাসীদের সর্বস্ব লুটের ঘটনায় কুখ্যাত ডাকাত মো. বশির আহমেদ (৫২) গ্রেপ্তার হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১, সিপিএসসি’র কোম্পানি কমান্ডার মো. ইশতিয়াক হোসাইন।
সোমবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব কমান্ডার মো. ইশতিয়াক হোসাইন জানান, গত ১৪ জানুয়ারি ভোরে কুমিল্লার বুড়িচং থানার আরাগ আনন্দপুর গ্রামের প্রবাসী আবু হানিফ (৩৫) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের প্রবাসী রাজিব ভূঁইয়া (৩৫) দুবাই থেকে দেশে ফেরেন।
ডলার ভাঙানোর পর দুপুরে এশিয়া লাইন বাসে করে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা হলে বন্দর থানাধীন কেওডালা এলাকায় একটি সাদা রঙের হাইয়েস গাড়ি বাসের গতিরোধ করে।
র্যাবের কটি পরিহিত ৩/৪ জন ব্যক্তি বাসে উঠে নিজেদের র্যাব সদস্য পরিচয় দিয়ে প্রবাসীদের বিরুদ্ধে মামলা থাকার কথা জানায়। এরপর জোরপূর্বক তাদের হাত-পা ও চোখ বেঁধে হাইয়েস গাড়িতে তুলে মারধর করে এবং নগদ ২১, লাখ ৩৫ হাজার টাকা, ব্রিটিশ ও অস্ট্রেলিয়ান পাউন্ড, মোবাইল ফোন, পাসপোর্টসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।
এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া এবং সংবাদমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি নিয়ে র্যাব-১১ ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের ভিত্তিতে বাগেরহাট জেলার মোংলা থানাধীন মোংলা গ্রাম থেকে কুখ্যাত ডাকাত মো.
র্যাবরে এই কর্মকর্তা আরও জানান, বশির আহমেদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানায় ভুয়া র্যাব পরিচয়ে দস্যুতার মামলা, ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ডাকাতির দুটি মামলা, ডিএমপির শাহজাহানপুর থানায় অস্ত্র ও ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা, ঝালকাঠি সদর থানায় ডাকাতির মামলা এবং দাউদকান্দি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার ডাকাত বশির আহমেদকে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।