লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বীতা ছিল চরমে। মাঠের লড়াইয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর দু’জন গোলের জন্য, শিরোপার জন্য ও পুরস্কারের জন্য একে অপরের সঙ্গে লড়াই করেছেন। তবে দু’জনের মধ্যে সম্মানবোধ অক্ষুন্ন ছিল। এক সাক্ষাৎকারে এমনই দাবি করেছেন রোনালদো।
দু’জন একসঙ্গে ১৫বার ব্যালন ডি’অরের মঞ্চ ভাগাভাগি করেছেন। অনুষ্ঠানে পাশাপাশি বসেছেন। টুকটাক কথা বলেছেন। সেই স্মৃতি হাতড়ে রোনালদো জানিয়েছেন, ইংরেজি না জানা মেসির অনুবাদকের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।
রোনালদো বলেন, ‘মেসির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর দৌরাত্ম্য ছিল। কখনোই তার সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক ছিল না। আমরা ১৫ বছর পুরস্কারের মঞ্চ ভাগাভাগি করেছি। সবসময় সৌহার্দ্য বজায় রেখে চলেছি। আমার মনে পড়ে, তার জন্য ইংরেজি অনুবাদও করে দিয়েছি। এটা সত্যিই মজার স্মৃতি।’
রোনালদো তার সাক্ষাৎকারে আরও জানিয়েছেন, দু’জন সবসময়ই দু’জনার ক্লাব, জাতীয় দলকে সবচেয়ে আপন ভেবে খেলেছেন। এটা তাদের দু’জনকেই আরও শানিত হতে সহায়তা করেছে। এমন অনেক বছর ছিল, যেখানে সে সব ম্যাচ খেলতে চেয়েছে, অনেক গোল করতে চেয়েছে, সবকিছু জিততে চেয়েছি। আবার আমিও একই কাজ করেছি। ক্যাম্প ন্যুতে আমাকে তিরস্কার করা হতো, তারপরও আমি সেখানে খেলতে পছন্দ করতাম।’
রোনালদো তার দীর্ঘ ফুটবল ক্যারিয়ারে স্পোর্টিং সিপি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে দুই মেয়াদে, জুভেন্টাস, রিয়াল মাদ্রিদ ও আল নাসরে খেলেছেন। তবে রিয়াল মাদ্রিদকে হৃদয়ের ক্লাব বলে উল্লেখ করেছেন, ‘রিয়াল মাদ্রিদ সবসময় আমার হৃদয়ে থাকবে। আমি রিয়ালেই সবচেয়ে ভালো ছিলাম। দারুণ মুহূর্ত সেখানে কাটিয়েছি, যে কারণে ভক্তরা আমাকে মনে রাখবে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাজে যোগ দেওয়ার দুদিনের মাথায় আয়েশা দুই হাজার টাকা চুরি করে: পুলিশ
মোহাম্মদপুরে চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় জড়িত গৃহকর্মী আয়েশা কাজে যুক্ত হওয়ার দ্বিতীয় দিন বাসা থেকে দুই হাজার টাকা চুরি করে। গৃহকর্মের আড়ালে চুরি করার অভ্যাস তার পূর্ব থেকেই ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএন মো. নজরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আয়েশা ঘটনার তিনদিন পূর্বে ওই বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। কাজে যোগ দেওয়ার পূর্বে তার নাম, ঠিকানা ও যোগাযোগের ফোন নম্বর বাসায় কারও কাছে ছিল না। আয়েশাকে সনাক্ত করার জন্য পুলিশ ভবনের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে। কিন্তু কাজে আসা-যাওয়ার সময় সে মুখ ঢেকে রাখতো বিধায় তার চেহারা সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তার বাসার ঠিকানাও কেউ জানতো না।
এক পর্যায়ে, আয়েশা সম্পর্কে তথ্য না পেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় গত এক বছরে গৃহকর্মী কর্তৃক চুরির ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে গলায় পোড়া দাগ এবং জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় থাকে আয়েশা নামের এক গৃহকর্মীর খোঁজ পাওয়া যায়। আয়েশা গত জুলাই মাসে মোহাম্মদপুর থানার হুমায়ুন রোডের এক বাসায় চুরির ঘটনায় জড়িত ছিল। ওই বাসা থেকে আয়েশার সঙ্গে যোগাযোগের একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়। সেই সূত্র ধরেই পুলিশ গভীর তদন্তে নামে। তদন্তের এক পর্যায়ে আয়েশার স্বামী রাব্বীকে সনাক্ত করা হয় এবং জানা যায় তার স্ত্রীর নাম আয়েশা, সে মানুষের বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে। তারা মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পে ভাড়া বাসায় থাকে। এভাবে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারী আয়েশার পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ।
এক পর্যায়ে প্রাপ্ত তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় এডিসি মোহাম্মদপুরের নেতৃত্বে থাকা পুলিশের আভিযানিক টিম ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার চরকারা গ্রামে রাব্বীর দাদার বাড়িতে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) অভিযান পরিচালনা করে। সেখান থেকে আয়েশা ও রাব্বীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কক্ষ তল্লাশি করে আয়েশার চুরি করা একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা ঘটনার সাথে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। আয়েশা জানিয়েছে, কাজে যুক্ত হওয়ার দ্বিতীয় দিনে সে বাসা থেকে দুই হাজার টাকা চুরি করে। এ নিয়ে গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ আয়েশাকে প্রশ্ন করলে বাকবিতণ্ডা হয়। লায়লা আফরোজ আয়েশাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখান। চতুর্থ দিন কাজে আসার সময় আয়েশা বাসা থেকে একটা সুইচ গিয়ার চাকু নিয়ে আসে। ঘটনার দিন টাকা চুরি নিয়ে তাদের মধ্যে আবারও কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আয়েশা লায়লা আফরোজকে সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তাদের মেয়ে নাফিসা তার মাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তাকেও ছুরিকাঘাত করা হয়। ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মা ও মেয়ে দুজনেই মারা যান। এ সময় আয়েশা নিজেও আহত হয় এবং রক্তমাখা কাপড় পাল্টিয়ে নাফিসার স্কুল ড্রেস পরে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। যাওয়ার সময় ব্যাকপ্যাকে একটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন এবং আরও কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যায়।
বাসা থেকে বের হয়ে আয়েশা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের ভেতরে গিয়ে পুনরায় কাপড় বদলে সাভারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পরবর্তীতে সে চুরি করা ফোন ও রক্তাক্ত কাপড় সিংগাইর ব্রীজ থেকে নদীতে ফেলে দেয় বলে জানায় পুলিশ।
উল্লেখ্য, গত ৮ ডিসেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের একটি বাসায় গৃহকর্মী কর্তৃক লায়লা আফরোজ ও তার মেয়ে নাফিসা নৃসংশভাবে খুন হন। এ ঘটনায় নিহত লায়লার স্বামী বাদি হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ঘটনার পরপরই পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান এবং প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও জড়িত প্রধান সন্দেহভাজন গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করেন।
ঢাকা/এমআর//