চাকরিতে কোটা সংস্কারে শুরু হওয়া আন্দোলন দেশে অভূতপূর্ব একটি অভ্যুত্থানের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই সেই আন্দোলন শুরু করেছিলেন। দুঃখজনক হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাতেই এখনো অযৌক্তিক কোটাপদ্ধতি থেকে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নিয়ে বিতর্ক আগেও ছিল, এখন আরও বেশি জোরালো হয়েছে। ইতিমধ্যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি আশাব্যঞ্জক।
ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য আলাদা কোটা সংরক্ষিত আছে, যেটি পোষ্য কোটা নামে পরিচিত। আর্থসামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা শিক্ষক–কর্মকর্তাদের সন্তানেরা কেন এই কোটাসুবিধা ভোগ করবেন, তা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন ওঠে। কারণ, কোটা হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য। তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর মতো একেবারে নিম্নশ্রেণির কর্মচারীদের জন্য সেটি ভেবে দেখা যেতে পারে। কারণ, সেসব পরিবার শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে থাকে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম পরিচ্ছন্নতাকর্মীই থেকে যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনের মুখে পোষ্য কোটা বাদ দেওয়া হলেও সেই সব নিম্নশ্রেণির কর্মচারীর কথা বিবেচনা করে তাঁদের জন্য সামান্য কোটা রাখা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদের মুখে সেই কোটাও বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এবার শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুখোমুখি অবস্থানের মুখে পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শিক্ষক-কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক যে সুবিধা রয়েছে, সেটা বিবেচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথাও উল্লেখ করা হয় সিদ্ধান্তে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েকজন শিক্ষার্থী পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনশনে বসার পর সোমবার এ ঘোষণা দেন উপাচার্য। ওই ঘোষণায় অনির্ধারিতসংখ্যক পোষ্য কোটার পরিবর্তে ৪০টি কোটার কথা উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া একজন ব্যক্তি একবারের জন্য এ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা ওই অনশন ভাঙেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এবং পরদিন তাঁরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। সেখানে কর্মকর্তা–কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে পুরো পোষ্য কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আবার বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটা বাতিলের ঘোষণার পর আনন্দ প্রকাশ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে তাঁরা এখন সন্দেহ প্রকাশ করছেন।
যা–ই হোক, আমরা আশা করব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উভয় পক্ষের সঙ্গে বসে এবং সবার সম্মতি নিয়ে একটি যৌক্তিক সমাধানে আসবে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। আমরা মনে করি, পোষ্য কোটা নিয়ে প্রশ্নের সুরাহা হওয়া উচিত। বৈষম্যমূলক কোনো কোটাব্যবস্থা থাকতে পারে না। যুক্তিতর্ক ও আলোচনার মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশিদের বন্দর দেওয়ার সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দরের স্থাপনা দেশি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে শুরু হওয়া অনশন চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
সকালে শতাধিক শ্রমিক প্রেসক্লাব চত্বরে জড়ো হন। একে একে বক্তব্য দেন শ্রমিক সংগঠনের বিভিন্ন নেতা-কর্মী। তাঁরা দাবি করেন, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব সক্ষমতায় সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এখানে বিদেশি অপারেটরের প্রয়োজন নেই।
স্কপের যুগ্ম সমন্বয়ক রিজওয়ানুর রহমান খান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিজস্ব ব্যবস্থাপনাতেই ভালোভাবে চলছে। বছরে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা করে এই প্রতিষ্ঠান। এমন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। ফলে সরকারকে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।
কর্মসূচিতে বক্তারা অভিযোগ করেন, লাভজনক প্রতিষ্ঠান হয়েও নিউমুরিং টার্মিনাল ও লালদিয়া চর বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তাঁরা বলেন, চট্টগ্রামের মানুষ কোনোভাবেই এটি সফল হতে দেবে না। বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়া মানে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে খেলা।
অনশন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বাম গণতান্ত্রিক জোট চট্টগ্রাম জেলা পরিচালনা পরিষদের সমন্বয়ক শফি উদ্দিন কবির বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার কাউকে না জানিয়ে বিদেশিদের হাতে বন্দর তুলে দেওয়ার চুক্তি করেছিল। বর্তমান সরকারও সেটি পর্যালোচনা না করে বাস্তবায়ন করছে। এটি দেশের মানুষের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ ও পরিচালনার জন্য বিদেশি অপারেটর নিয়োগ নিয়ে দেশে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদে শুরু হওয়া সেই প্রক্রিয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও এগিয়ে নিচ্ছে।
এর আগে গত ২২ অক্টোবর ইজারা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে স্কপ। সমাবেশ শেষে বন্দর এলাকার দিকে মিছিল নিয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ওই কর্মসূচি থেকেই আজকের গণ–অনশনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ২৭ অক্টোবর ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা।