স্বাধীন বাংলাদেশে আজ নতুন করে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী সূর্য সেনকে নিয়ে নাট্য নির্মাণ কেন? শুধুই কি ইতিহাসের কাহিনি উপস্থাপন? না। বাংলাদেশের স্বনামধন্য নাট্যদল ঢাকা পদাতিকের আগে তাদের নাট্য প্রযোজনায় যে প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে তাতে তা মনে হয় না। ঢাকা পদাতিক তাদের ৩৮তম এ প্রযোজনায় বিপ্লবী নায়ক সূর্য সেনকে নতুন প্রজন্মের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। চরিত্র ইতিহাস বিপ্লবের মন্থনে অনাগত জাতিসত্তাকে নতুন করে মুক্তির পথ নির্দেশ করে। সূর্যসেন ইতিহাসের পুনরুত্থানে একটি প্রতীক। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন বিশিষ্ট নাট্যজন মাসুম আজিজ।
অভিনেতা নির্দেশক মাসুম আজিজ ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর আকস্মিকভাবে মারা গেলে নাটকটির নির্দেশনার দায়িত্ব পালন করেন দলের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও বিশিষ্ট অভিনেতা নাদের চৌধুরী। ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি নাটকটির উদ্বোধন প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুরু হয়েছিল ‘নাট্যযাত্রা’। নাটকটিতে উপজীব্য করা হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী সূর্য সেনের প্রহসনমূলক বিচারকে। যে বিচারের ফলে সূর্য সেনকে ফাঁসির নামে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সূর্য সেন ১৯১৬ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের ছাত্রকালীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন।
তারপর চট্টগ্রামে এসে বিপ্লবী দল গঠন করেন। তারকেশ্বর দস্তিদার, কল্পনা দত্ত, প্রীতিলতা প্রমুখ মিলে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তুলেন। ১৯৩০ সালের দিকে সূর্য সেনের নির্দেশে প্রীতিলতা ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ করতে ৫৩ জন ইংরেজ হতাহত হন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সূর্য সেন মোস্ট ওয়ান্টেডে পড়েন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সূর্য সেন আগ্নেয়াস্ত্রসহ ধরা পড়েন। অস্ত্রাগার লুণ্ঠন মামলার আসামি দেখিয়ে ১২১/১২১-এর ধারা অনুযায়ী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ২ জুন থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত বিচারের নামে প্রহসন চলে। ব্রিটিশরা সূর্য সেনের ওপর বর্বরোচিত অত্যাচার করে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে দাঁত ভেঙে ফেলে এবং শরীরের হাড় ভেঙে দেয়। হাতুড়ি দিয়ে নির্মমভাবে পেটাতে পেটাতে তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলে। পরে অর্ধমৃতদেহ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিয়ে ফাঁসি কার্যকরের ঘোষণা করে। যুগে যুগে বিপ্লবী সূর্য সেন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রেরণা হয়ে উঠেছে। নাটকটি প্রসেনিয়াম মঞ্চে উপস্থাপিত।
গত ২৯ জানুয়ারি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নাটকের একটি প্রদর্শনী হয়েছে। দর্শকরা বেশ উপভোগ করেছে প্রদর্শনীটি। অভিনয়শিল্পীরা যে যার জায়গা থেকে সেরাটি দিয়েছেন। নাটকটিতে চল্লিশের অধিক চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। এর মধ্যে সূর্য সেন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাদের চৌধুরী। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন– মাহবুবা হক কুমকুম, মিল্টন আহমেদ, হাসনাহেনা শিল্পী, মাহাবুবুর রহমান, সাবিহা জামান, শ্যামল হাসান, কাজী আমিনুর, আক্তার হোসেন প্রমুখ।
নবনির্দেশনার অনুভূতি জানিয়ে নাদের চৌধুরী বলেন, “ট্রায়াল অব সূর্য সেন’ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন নিয়ে ঐতিহাসিক একটি নাটক। এর রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রয়াত মাসুম আজিজ ভাই। পরবর্তী সময়ে এ নাটকের কিছু কিছু জায়গায় প্রয়োজনসাপেক্ষে অলংকরণ করে নবনির্দেশনার কাজটি আমি করেছি। ঐতিহাসিক এ নাটক আমাদের এখনকার জেনারেশনের দেখা উচিত।” 
  
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন টকট
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’