উসকানির কারণে সৃষ্ট পরিবেশের দায় উসকানিদাতাকেই নিতে হবে: জামায়াত আমির
Published: 7th, February 2025 GMT
আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেন, তাঁরা পালিয়ে গিয়েও দেশকে অস্থিতিশীল করতে মাঝেমধ্যে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকেন। উসকানির কারণে দেশে যে পরিবেশেরই সৃষ্টি হবে, তার দায় উসকানিদাতাকেই নিতে হবে।
আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইরে অবস্থিত ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে জেলা ও মহানগর জামায়াত আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন দলটির আমির। জনসভায় অংশ নিতে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নেতা–কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে অংশ নেন।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে মন্তব্য করে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, যতগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ছিল, তারা সব ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তারা পার্লামেন্ট, নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগসহ সবগুলোকে ধ্বংস করেছে।
দেশের চলমান পরিস্থিতির জন্য পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন জামায়াতের আমির। তিনি বলেন, ‘গত ৫ আগস্টে পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের জনগণ মনে করেছিলেন, তাঁদের জুলুম ও দুঃশাসন থেকে রক্ষা পেয়েছেন। কিন্তু তাঁরা পালিয়ে গিয়েও দুই–এক দিন আগে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য মাঝেমধ্যে উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড করেন। এ দেশের হাজার হাজার মানুষ খুন-গুম হলেন, পঙ্গু হলেন সেই সময় আপনারা যদি উসকানি দেন, এটা কি বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ মেনে নেবেন? উসকানির কারণে যত পরিবেশের সৃষ্টি হবে, এর দায় উসকানিদাতাকেই নিতে হবে।’
গত ১৫ বছরে দেশ থেকে ২৬ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতে তাঁরা সুন্দর সুন্দর কথা বলতেন। তাঁরা পালিয়ে যাওয়ার পর আত্মগোপন ও জেলে ঢোকায় তাঁদের অবৈধ সম্পদের খনি বের হয়ে আসছে। সরকারের কাছে আমাদের স্পষ্ট দাবি, জনগণের কাছ থেকে চুরি করে পাচার করা টাকা উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে।’
গত ৫৪ বছরে জাতিকে বিভিন্নভাবে ভাগ-বিভক্ত এবং টুকরা টুকরা করে বিভক্ত করে রাখা হয়েছিল উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সুকৌশলে এটি করেছে। আমরা সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু বিশ্বাস করি না। আমরা অহিংস ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই।’ চাঁদাবাজি, দখলদারি, ঘুষ–দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘৫ আগস্টে এতগুলো প্রাণ দেওয়ার পর কেন অপকর্ম হবে? মানুষকে স্বস্তিতে বাঁচতে দেন। এসব ধান্দাবাজি থেকে সরে না এলে তরুণ প্রজন্ম কিন্তু আপনাদের ছেড়ে দেবে না।’
বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জে শামীম পরিবারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তুলে ধরে জামায়াতের আমির বলেন, নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রাখা হয়েছিল। জামায়াতের আমির গোলাম আযমকে সাইনবোর্ড লাগিয়ে প্রবেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যিনি (শামীম ওসমান) নিষিদ্ধ করেছেন, তিনি এখন কোথায়?
জামায়াতে ইসলামী কালো টাকার জন্য রাজনীতি করে না বলে দাবি করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক ধান্দা, গদিতে কীভাবে যাব এবং কীভাবে থাকব। এখন গদিতে আছি, মেরেপিটে অবৈধভাবে কালো টাকার সন্ত্রাসী শক্তির বিনিময়ে আগামীতে কীভাবে ক্ষমতায় আসব, রাজনীতিতে ধান্দায় পরিণত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী এই ধান্দা ঘৃণা করে।’
রাজনৈতিক শক্তির মদদে নদী দখল ও দূষণ করা হচ্ছে উল্লেখ করেন জামায়াতের আমির, এগুলো সমাজ থেকে দূর করার তাগিদও দেন তিনি। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে জামায়াতে ইসলামী ওয়াদাবদ্ধ দাবি করে শফিকুর রহমান বলেন, ‘তোমাদের এই স্বপ্ন যত দিন বাস্তবায়ন না হবে, জামায়াতে ইসলামীর এই লড়াই–সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। এই লড়াইয়ে তোমাদের পাশে আছি, সঙ্গে আছি।’
জামায়াত মানবিক বাংলাদেশ উপহার দিতে চায় উল্লেখ করে আমির বলেন, ‘আমাদের মা–বোন ঘরে–বাইরেও থাকবে নিরাপদ, বাইরে নিরাপত্তার সঙ্গে পাবে মর্যাদা। পেশা ও কর্মস্থলে নিরাপদ থাকবে। আমরা সাম্যের বাংলাদেশ, ন্যায়নীতির বাংলাদেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ ও মানবিক বাংলাদেশ উপহার দিতে পারব।’
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির আবদুল জব্বার। সঞ্চালনা করেন মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মনোয়ার হোসেন ও জেলার সেক্রেটারি হাফিজুর রহমান। বক্তব্যে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যা, শিশু রিয়া গোপ হত্যার বিচারের দাবি জানান।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ মহানগরীর আমির নুরুল ইসলাম, সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা উত্তর মহানগরীর আমির সেলিম উদ্দিন, সেক্রেটারি মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, মঈন উদ্দিন আহমদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির মমিনুল হক সরকার প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত র আম র ন র য়ণগঞ জ র জন ত ইসল ম উসক ন আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
ফতুল্লায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ পাকিংয়ে তীব্র যানজট, জনদুর্ভোগ চরমে
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো যানজট। এ যানজটের কারণে মাত্র ৫ মিনিটের রাস্তা পেরুতে সময় লেগে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। ফলে প্রতিনিয়ত চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীকে।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগ কিংবা সিটি কর্পোরেশন এ যানজট থেকে জেলাবাসীকে পরিত্রাণ দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে দিন যতই বড়ছে ততই বাড়ছে নারায়ণগঞ্জবাসীর দুর্ভোগ।
নারায়ণগঞ্জে এমন কোন সড়ক নাই সেই সড়কে যানজট নাই। মূল সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি সব জায়গায়ই যানজট আর যানজট। তবে এ যানজটের পেছনে মূল সড়কের যানজটকেই দায়ি করছেন অনেকে।
তারা বলছেন, মূল সড়ক যদি যানজট মুক্ত থাকতো তাহলে এর আশেপাশের সড়কগুলো যানজটের সুষ্টি হতো না। মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণেই এর প্রভাব পড়ছে অন্য সড়কগুলোতেও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে শহরের চাইতে চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণে করেছে। এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কথা শুনলেই মানুষ আতকে উঠে। কারণ, যানজটের মাত্র পনেরো মিনিটের রাস্তা পাড় হতে সময় লাগে ঘন্টার পর ঘন্টা।
এ রাস্তায় এ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীকেও যানজটে আটতে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। একবার যানজটে আটকা পড়লেই দিন শেষ। কখন বাড়ী কিংবা অফিসে যাবেন তার কোন ঠিক নেই।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, এ যানজটের প্রধান কারণ হচ্ছে পঞ্চবটি-মুক্তারপুর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ। ফ্লাইওভারের কর্মযজ্ঞের ফলে যানবাহনগুলোকে একটু ধীর গতিতে যেতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।
তবে এ যানজটের আরও একটি বড় কারণ চোঁখে পড়ে, আর তা হলো পঞ্চবটি এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচে এবং চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কের দু’পাশে ট্রাক ও কভার্ডভ্যানগুলো অবৈধভাবে পাকিং করে রাখা।
এসব যানবাহনগুলো সড়কের দু’পাশে পার্কিং করে রাখার কারণে মূল সড়ক অনেকটাই সরো হয়ে যায়। ফলে এ সড়ক দিয়ে অন্যসব যানবাহনগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
অথচ, পঞ্চবটির খুব কাছেই রয়েছে ট্রাক ও কভার্ডভ্যান স্ট্যান্ড। যানবাহনের চালকরা ওই স্ট্যান্ডে গাড়ী না রেখে সড়কের পাশে অবৈধভাবে বাঁকাত্যাঁড়া গাড়ীগুলো রাখছেন। এর ফলে যে, ওই সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং যানজটের কবলে পড়ে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে, এ বিষয়ে যেন তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই।
তাদের ভাব-নমুনা দেখা মনে হয় যে, তারাই যেন এ সড়কটির মূল মালিক। না পুলিশে তাদের কিছু বলে, না তারা জনগণের কোন কথা শোনে। তারা তাদের ইচ্ছেমত গাড়ীগুলো রেখে যানজটের সৃষ্টি করছেন।
চাষাঢ়া-পঞ্চবটি সড়কে চলাচল করা ভুক্তভোগী পথচারিরা বলছেন, এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করাটা বর্তমানে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এত ভয়াবহ যানজট আমরা কখনোই চোঁখে দেখিনি। পঞ্চবটি ফ্লাইওভারের নিচে যেভাবে ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো রাখা হয় পুরো সড়কটা তারা কিনে নিয়েছে। পুলিশও কিছু বলে না।
এছাড়া চাষাঢ়া থকে পঞ্চবটি পর্যন্ত পুরো সড়কে দু’পাশেই তারা গাড়ীগুলো রাখছেন। রাস্তাটি পাশে এমনিতেই জায়গা কম, আবার যদি তারা এভাবে গাড়ী রাখেন তাহলে যানজটের সৃষ্টিতো হবেই। এ বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল বলেন, আসলে নিতাইগঞ্জ এলাকা থেকে ট্রাক স্ট্যান্ডটি সরিয়ে নেয়ার জন্য সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আইভী একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে পঞ্চবটি এলাকাতে সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে একটি ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তোলেন এবং সেখানে এ স্ট্যান্ডকে স্থানান্তর করেন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
এখন তারা কিছু গাড়ী ওই স্ট্যান্ডে রাখে বাকি গাড়ীগুলো সড়ক দখল করে এলোপাথারিভাবে রাখে। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলেও যেন কারো কোন কিছু বলার নেই। কারণ, এ সমস্যা নিয়ে বহুবার ডিসি-এসপির সাথে বসা হয়েছে, আলোচনা হয়েছে কিন্তু সুরাহা হয় নাই।
তবে, ৫ আগস্টে দেশে একটি বড় পরিবর্তনের পর আশা করছিলাম এবার হয়তো এর একটা সুরাহা হবে। কিন্তু না। সড়ক দখল করে রাখা ট্রাক-কভার্ডভ্যানগুলো বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে মানুষকে বাধ্য হয়েই যানজটের মত দুর্ভোগ দুর্দশাময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।
তারা বলেন, আসলে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য সেদিন ছাত্র-জনতা বুকের তাজা রক্ত দিয়ে এতবড় একটা পরিবর্তন নিয়ে এসেছিলো। কিন্তু দেশের মানুষ যদি সেই শান্তি শৃঙ্খলা ভোগই করতে না পারে, তাহলে এত প্রাণ দিয়ে কি লাভ হলো?
আমরা জানিন না, প্রশাসন আসলে কাদেরকে খুশি করাতে চাচ্ছেন? মুষ্টিম কিছু চালকদের জন্য হাজার হাজার মানুষের এ কষ্ট কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি করবো, তারা যেন খুব শীঘ্রই এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়। নারায়ণগঞ্জবাসীকে যেন কিছুটা স্বস্তি দেয়।
এ বিষয়ে টিআই করিম বলেন, ৫ আগস্টের পর নারায়ণগঞ্জে যানজটের যে ভয়াবহতা সৃষ্টি হয়েছিলো বর্তমানে তা কমে আসছে। আশাকরছি, আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। পঞ্চবটি সড়কে ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এজন্য এ রুটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্তায় যদি কোন চালক রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে গাড়ী পার্কিং করে তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।