চমৎকার গাড়ির বহর, ঘোড়ার গাড়িতে কনের আগমন, সুন্দর সাজে সকল বর- সব মিলিয়ে এক জমকালো আয়োজন। যেখানে ১২ যুগল ব্যতিক্রম পরিবেশে যৌতুকবিহীন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রংপুর নগরীর রূপকথা থিমপার্ক কনভেনশন হলে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই ব্যতিক্রম বিয়ের আয়োজন করা হয়। ‘বিয়ে আপনার-খরচ আমাদের’ এই স্লোগানে অনুষ্ঠিত বিয়ের যাবতীয় খরচ বহন করেছে সংস্থাটি। 

বর-কনের পোশাক, সাজসজ্জা, রেজিস্ট্রেশন, অতিথিদের আপ্যায়নসহ নতুন সংসার শুরুর উপহারও দেওয়া হয়েছে।

ফাউন্ডেশন জানায়, রংপুর বিভাগে ৯০ জন বর-কনে এই আয়োজনে অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন। যাচাই-বাছাই শেষে ১২ যুগলকে বিয়ের জন্য নির্বাচিত করা হয়। তবে শর্ত ছিল দুটি-কোনো যৌতুক নেওয়া যাবে না এবং মোহরানা সম্পূর্ণ পরিশোধ করতে হবে।

নবদম্পতি বর শাহরিয়ার ইসলাম লিখন ও কনে শারমিন সুলতানার সঙ্গে আলাপ হয়। কনে শারমিন বলেন, “এমন স্বপ্নের বিয়ের আয়োজন হবে, কখনো ভাবিনি। এই আয়োজন কেবল আমাদের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্য এক উদাহরণ হয়ে থাকল।”

অনুষ্ঠানে আসা কনে মনিরা ইসলামের মা ফরিদা আক্তার বলেন, “বিয়ে নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিল, আজ তা দূর হলো। বিনা খরচে এমন সুন্দর আয়োজনের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”

আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, “যৌতুকের কুপ্রথা দূর করা এবং দেনমোহরের লোভ দেখিয়ে প্রতারণা ঠেকাতেই আমাদের এই উদ্যোগ। আর্থিক সংকটের কারণে যেন কেউ বিয়ে করতে না পারে, এমনটি আমরা হতে দেব না।” 

তিনি জানান, পরবর্তী আয়োজন ঢাকায় করা হবে।

নবদম্পতিদের জন্য তোশক, বালিশ, হাঁড়ি-পাতিল, প্লেট-বাটিসহ গৃহস্থালি সামগ্রী উপহার দেওয়া হয়েছে। তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ উপহার ছিল কক্সবাজারে হানিমুন প্যাকেজ ও পরবর্তী সময়ে বিবাহ-পরবর্তী কাউন্সেলিং সেবা।

ঢাকা/আমিরুল/টিপু 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া

আজ ১১ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মুক্তদিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রাম, ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ আর অসংখ্য নীরব ত্যাগের মধ্যদিয়ে পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের কুষ্টিয়া থেকে বিতাড়িত করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। কালেক্টরেট চত্বরে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। 

মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই কুষ্টিয়া ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের প্রথম দিকে এখানে ইপিআর, পুলিশ এবং সাধারণ মানুষ মিলে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইল শত্রুমুক্ত হয় ১১ ডিসেম্বর

৩৬ ঘণ্টার যুদ্ধে শত্রুমুক্ত হয় মাদারীপুর

কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই প্রতিরোধে যোগ দেন, যা পরবর্তীতে সুসংগঠিত মুক্তিযোদ্ধা বাহিনীতে রূপ নেয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো ৯ মাস জুড়ে কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে গেরিলা হামলা, সম্মুখযুদ্ধ ও প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় চূড়ান্ত মুক্তির পথ।

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৬ এপ্রিল থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কুষ্টিয়া জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ২২টি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ও সংঘর্ষ সংঘটিত হয়। মিরপুর, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, খোকসা, কুমারখালীসহ বিভিন্ন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুর সুসজ্জিত ঘাঁটির বিরুদ্ধে প্রাণপণ লড়াই চালান। পাকবাহিনীর ক্যাম্প, ব্রিজ, সড়ক ও রসদ সরবরাহ লাইনে ধারাবাহিক আক্রমণ চালিয়ে তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়া হয়। প্রতিটি যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ শহীদ হন। পাকিস্তানি বাহিনীরও বিপুল ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তারা কুষ্টিয়ায় অবস্থান টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়।

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া শহরের প্রবেশমুখ, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও স্থাপনার আশপাশে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের সঙ্গে চূড়ান্ত লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। ভোর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে গোলাগুলি, মর্টার শেল ও ভারী অস্ত্রের প্রচণ্ড গর্জনে পুরো শহর কেঁপে ওঠে। কৌশলগত স্থানে অবস্থান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর প্রতিরক্ষা ভেঙে দেন। এক পর্যায়ে পাকিস্তানি বাহিনী ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে ও আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়। তাদের অনেকেই প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়। ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে কুষ্টিয়া শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয় এবং দিনটিকেই ‘কুষ্টিয়া মুক্ত দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১১ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত কুষ্টিয়া শহরের কালেক্টরেট চত্বরে তৎকালীন রাজনৈতিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। এ সময় প্রাদেশিক পরিষদের জোনাল চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ চৌধুরীসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ উপস্থিত থেকে শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানান। এই পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই প্রতীকীভাবে স্বাধীন কুষ্টিয়ার জন্ম এবং মুক্তাঞ্চল হিসেবে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালুর সূচনা ঘটে। ।

প্রতি বছরের মতো এবারো কুষ্টিয়া মুক্তদিবস উপলক্ষে কালেক্টরেট চত্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পুষ্পস্তবক অর্পণ, শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া-মোনাজাত, র‌্যালি পরবর্তী শহীদ স্মৃতিস্মম্ভ চত্বরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দিবসটি উপলক্ষে পৃথক কর্মসূচি পালন করছে। শহীদ পরিবার ও জীবিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের সামনে যুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরছেন। 

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সব কার্যক্রম স্থগিত
  • রিয়ালের ৪ তারকা ফুটবলার নিষিদ্ধ
  • ২২টি যুদ্ধের পর শত্রুমুক্ত হয় কুষ্টিয়া