দেশে অব্যবস্থাপনার একটি বড় দৃষ্টান্ত হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। গত ৫৩ বছরে গড়ে ওঠা এই সমস্যার সমাধান দেড় বছরের সরকারের কাছে চাওয়াটা একটু বেশি হলেও যৌক্তিক ও যথার্থ। তবে এই চাওয়ার সঙ্গে পাওয়া মেলাতে সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু সেই সময় কি এই সরকারের আছে?

‘উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ অধিকারকেন্দ্রিক সংস্কার’ শীষ৴ক এক নাগরিক সংলাপে এ কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। আজ সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সাভি৴সেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘এই অল্প সময়ে আমরা যা করতে পারি, তা হচ্ছে খুব ভালো ও শক্তিশালী কিছু আইন তৈরি করে দিতে পারি; যা শুধু কাগজে–কলমে নয়, সামগ্রিকভাবে মানুষের আচরণ এবং মনস্তাস্ত্বিক পরিবত৴নেও ভূমিকা রাখবে। বত৴মানে আমরা বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু—এই চারটি দূষিত নদী বাঁচানোর একটি পরিকল্পনা করছি। এটাও অনেক লম্বা সময়ের কাজ। নদী হোক কিংবা সমাজ, পরিষ্কার করার জন্য সময়টুকু আমাদের দিতে হবে।’

নাগরিক সংলাপের ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়, দেশে প্রতিদিন আনুমানিক ২৫ হাজার টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। উপযুক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় প্রতিদিনের এই বর্জ্যের ৫৫ ভাগই সঠিক ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে যায়। এগুলো থেকে নির্গত হয় ক্ষতিকর গ্যাস। এতে দূষিত হয় বাতাস। দূষিত হয় মাটি ও পানিও।

ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বত৴মান পরিস্থিতি তুলে ধরেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমোডর মাহাবুবুর রহমান তালুকদার। তিনি বলেন, ‘আমাদের ল‍্যান্ডফিল্ডগুলোর ৮০ ভাগই ময়লা (বর্জ্য) দিয়ে ভরাট হয়ে আছে। আর সাত–আট বছর পরেই সেগুলোতে আর জায়গা থাকবে না। তাই আমাদের নাগরিক পর্যায় থেকেই সচেতনতা দরকার। গৃহস্থালির ময়লাগুলো পচনশীল ও অপচনশীল—এই দুই ভাগে আলাদা করা ছাড়াও প্লাস্টিক বজে৴৵র পুনর্ব৵হার নিশ্চিত করতে হবে।’

দেশের পৌরসভা ও নগর পর্যায়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরেন ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) সিনিয়র একাডেমিক কো–অর্ডিনেটর মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম। সমাধান নিয়ে তিনি বলেন, জৈব-অজৈব, চিকিৎসা, প্লাস্টিক, ইলেক্ট্রনিক, ইত্যাদি বর্জ্য আলাদাভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এতে কাজ সহজ হবে, ল্যান্ডফিল্ডের ওপর চাপ কমবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস হাসানুল বান্না বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা উল্লেখ আছে। পরিবেশ আদালত আইন আছে, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা আছে। এই আইনগুলোর আওতায় বত৴মানে মোট ১০২টি মামলা চলছে। তিনি বলেন, এত মামলা; কিন্তু কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আজ পয৴ন্ত হয়নি। তাই যথাযথ আইন তৈরি ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন, ‘সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তখনই সম্ভব হবে, যখন নাগরিক হিসেবে আমরা সচেতন হব। আর আইন তৈরির পাশাপাশি সরকারই পারে জনসচেতনতা তৈরি করতে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

হাদিকে গুলির ঘটনা আ.লীগের নির্বাচনবিরোধী ছকের অংশ: নাহিদ

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নির্বাচনবিরোধী ছকের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।

আরো পড়ুন:

জুলাই অভ্যুত্থানকে নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান

দুর্নীতি-সন্ত্রাসের অভিযোগ পেলে প্রার্থিতা বাতিল: নাহিদ 

নাহিদ ইসলাম বলেন, “হাদির ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, আওয়ামী লীগের নির্বাচনবিরোধী ছকের অংশ।”

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগকে নরমালাইজ করার চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা দেখছি।”

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় সব জায়গায় আওয়ামী লীগকে প্রতিহত করা, প্রশাসনিকভাবে প্রতিহত করা এবং ভারতের হস্তক্ষেপ বন্ধ করার কথা বলেছি।”

পতিতরা নির্বাচন ঠেকাতে চাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচনি পরিবেশ ফেরাতে হবে।”

নাহিদ বলেন, “আমরা সর্বাত্মকভাবে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখব বলেছি। হামলাকারী ও পরিকল্পনাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি।”

এর আগে সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৈঠকে তিনটি দলের দুজন করে প্রতিনিধি অংশ নেন।

বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন-দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ ও অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধি দলে ছিলেন-দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের।

এছাড়া এনসিপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন- দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ