জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীদের অপদস্থ করতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নারী আন্দোলনকারীদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছে আওয়ামী লীগ। তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা নারীদের শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণের হুমকি ও যৌন হয়রানি করেছে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন সংক্রান্ত ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে আওয়ামী লীগ সরকার সশস্ত্র কর্মীদের সংগঠিত করতে থাকে। আন্দোলন দমনের প্রাথমিক ধাপে আওয়ামী লীগ নেতাদের উসকানিতে লাঠিসোঁটা, ধারালো অস্ত্র এবং কিছু ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা।

আরো পড়ুন:

শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় ‘আন্দোলনে বিরতি’, যান চলাচল স্বাভাবিক

সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আহত আন্দোলনকারীদের আল্টিমেটাম

নারীদের আন্দোলনে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করতে তাদের ওপর যৌন নিপীড়ন করা হয় ও অপদস্থ করার চেষ্টা করা হয়।

এর মধ্যে কয়েকজন নারীকে বেআইনিভাবে আটক করা হয়। কয়েকজন নারী আন্দোলনকারী নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের শিকার হন।

এ ছাড়া, শিশুদেরও লক্ষ্যবস্তু করা হয়। আন্দোলন চলাকালে শিশুদের বিচারবহির্ভূত হত্যা, বেআইনিভাবে গ্রেপ্তার, অমানবিক পরিবেশে আটক, নির্যাতন ও ইচ্ছাকৃত অঙ্গহানি ঘটিয়েছে পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী।

নারীদের ওপর শারীরিক আক্রমণের পাশাপাশি যৌন নিপীড়নও হয়েছে নিয়মিত। নারী আন্দোলনকারীদের বারবার অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার করে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।

নারীদের ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের হুমকি দিয়েছে হামলাকারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ সদস্যরা।

প্রতিবেদনে একটি ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। আগস্টের শুরুতে ঢাকায় একদল পুরুষ বাঁশের লাঠি হাতে এক নারীকে আটকায় এবং জানতে চায় তিনি আন্দোলনকারী কি না। ওই নারীর ফোন ও ব্যাগ তল্লাশি শেষে তারা বাংলাদেশের পতাকা খুঁজে পায়। পরে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু করে—তার চুল ধরে টান দেয়, জামা ছিঁড়ে ফেলে এবং যৌন হয়রানি করে। পাশাপাশি তার গায়ে নখ দিয়ে আঁচড় কাটে এবং যৌন নিপীড়নমূলক গালাগাল করে যায়।

জুলাইয়ে ঢাকায় আরেক নারী আন্দোলনকারীর ওপর ছাত্রলীগের হামলার বর্ণনাও উঠে এসেছে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে। ওই নারী, তার মা এবং পরিবারের সব নারী সদস্যদের ধর্ষণের হুমকি দেয় দুই ছাত্রলীগ কর্মী। এরপর অশ্লীল মন্তব্য করে এবং যৌন হয়রানি করে। এই ঘটনার পর ভুক্তভোগী নারী ফোনে ধর্ষণের আরো হুমকি পান।

কুমিল্লায় ছাত্রলীগ কর্মীরা বেশ কয়েকজন নারীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে, যার মধ্যে দুজন শিক্ষার্থী ছিলেন। তারা ওই দুই শিক্ষার্থীকে আটকায়, যৌন হয়রানি করে এবং এরপর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ য ন হয়র ন দ র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে অপদস্থ বাবা, ছেলেকেও পিটিয়ে হত্যা

হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় দু’পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে অপদস্থ হওয়া বাবাকে রক্ষা করতে গিয়ে জাকির হোসেন (৩৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। এ সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ১০ জনকে আটক করেছে পুলিশ।

রবিবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের পিরিজপুর গ্রামে এ সংঘর্ষ ঘটে। 

নিহত জাকির হোসেন ওই গ্রামের পল্লী চিকিৎসক হারুনুর রশিদের ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে গনি মিয়া গং ও শাজাহান মিয়া গংয়ের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে পিরিজপুর পয়েন্টে গনি মিয়ার ছেলে হোসাইন মিয়া ও শাজাহান মিয়ার ছেলে মহসিন মিয়ার মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে।

সংঘর্ষ থামাতে স্থানীয় হারুনুর রশিদ নামে একজন এগিয়ে গেলে তাকে অপদস্থ করা হয়। তখন বাবাকে রক্ষায় তার ছেলে জাকির হোসেন দোকান থেকে বের হলে প্রতিপক্ষের লোকজন তার ওপর চড়াও হয়। তাদের মারপিটে গুরুতর আহত অবস্থায় জাকিরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আহতদের মধ্যে তজিমুল মিয়া (৫৫), রুবেল মিয়া (২৭) ও উজ্জ্বল মিয়া (৩০) নামে ৩ জনকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্য আহতরা বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য ময়না মিয়া বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের জমিসংক্রান্ত বিরোধ থেকেই এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।’’ 

রাতে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন আজমিরীগঞ্জ থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম।

ওসি বলেন, ‘‘ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে নারী-পুরুষ ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া গ্রাম থেকে কিছু দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।’’

ঢাকা/মামুন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে অপদস্থ বাবা, ছেলেকেও পিটিয়ে হত্যা