যশোরের কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কক্ষে ছাত্র-জনতার তালা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুরে চিংড়া বাজারসংলগ্ন এলাকায় এ সংঘর্ষ হয়।
এদিকে মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার জের ধরে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে বুধবার দিনভর হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাগরদাঁড়ী ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। গত ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন। তাঁর ছোট ভাই কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরও কাজী মুক্ত ইউপি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় ছাত্র-জনতা তাঁর পদত্যাগের দাবিতে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সমবেত হয়। এক পর্যায়ে তারা চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়। সংবাদ পেয়ে এলাকাবাসী সেখানে এসে তালা খুলে দেওয়ার দাবি জানান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে উভয় পক্ষের অন্তত ২২ জন আহত হন। পরে এলাকাবাসী তালা ভেঙে ফেলেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সাঈদ, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস হোসেন, সাগরদাঁড়ী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মেহেদী হাসান রনি, ছাত্রদল নেতা সাগর, আকাশ, নাঈম, রকি, গোলাম মোস্তফা এবং ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক কাজী মুজাহিদুল ইসলাম পান্না ও কাজী মাজহারুল ইসলাম সোনা। অন্য ব্যক্তিরা স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ও আলাদাভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
যশোর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মজনু হোসাইন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করছেন। এমন খবরে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দেয়। এ সময় চেয়ারম্যানের পক্ষের লোকজন এসে হামলা চালায়। এতে তাদের ১৪-১৫ জন আহত হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মুস্তাফিজুল ইসলাম মুক্ত বলেন, তিনি নিয়মিত পরিষদে আসছেন। বুধবার পরিষদ বন্ধ থাকার সুযোগে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁর কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় এলাকার সাধারণ মানুষ তালা খুলে দেওয়ার দাবিতে জড়ো হলে তাদের ওপর হামলা হয়। এতে তাঁর দুই ভাইসহ সাতজন আহত হয়েছে।
কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তের পর ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে সামাজিক দ্বন্দ্বের জেরে মঙ্গলবার সকালে হরিণাকুণ্ডুর চাঁদপুর ইউনিয়নের হাকিমপুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এতে আইনজীবীর সহকারী ও বিএনপি কর্মী মোশাররফ হোসেন নিহত হন। এ ঘটনায় ২০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন তাঁর স্ত্রী ময়না খাতুন।
এ ঘটনার জেরে বুধবার আসামিদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও গোয়াল ঘর থেকে গরু লুট করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দলু ও হানেফ গ্রুপের সমর্থকরা বিএনপি নেতা সাইদের ৫টি, আমিরুলের ৩টি, মইনের ২টি, আমিরুলের ৪টি, আব্দুল জব্বারের ৫টি ও আব্দুল আলীমের ৩টিসহ মোট ৩৭টি গরু নিয়ে গেছে।
বিএনপি নেতা সাইদের ভাষ্য, লুট করা গরুর দাম প্রায় কোটি টাকা। বাদীপক্ষের লোকজন তাঁর বাড়ি থেকে দুই লাখ ও সারের দোকান থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে গেছে। এ সময় দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বর্তমান গ্রামটি পুরুষশূন্য।
হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি এম এ রউফ খানের ভাষ্য, গরু লুট বা বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুরের কোনো তথ্য তাঁর কাছে নেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ছ ত রদল ল ইসল ম জন আহত স ঘর ষ ব এনপ উপজ ল এ সময়
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলের ৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টাঙ্গাইলে ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিতে বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। তবে, টাঙ্গাইল-৫ আসনের প্রার্থী পরে ঘোষণা করা হবে।
আরো পড়ুন:
কক্সবাজার-১ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী সালাহউদ্দিন
বিএনপির মনোনয়ন পেলেন নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর স্ত্রী
প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন, টাঙ্গাইল-২ (ভূঞাপুর-গোপালপুর) আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে ওবায়দুল হক নাসির, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য লুৎফর রহমান মতিন, টাঙ্গাইল-৬ (নাগরপুর-দেলদুয়ারে) আসনে উপজেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আউয়াল লাভলু, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনে জাতীয় নির্বাহী কমিটির শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী এবং টাঙ্গাইল-৮ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার পর টাঙ্গাইলের বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীর সর্থকদের উল্লাস করতে দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গাইলের ৮টি আসনের মধ্যে সব আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রার্থী ছিল। এর মধ্যে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে একাধিক প্রার্থী থাকলেও কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু এবং জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল ব্যাপক গণসংযোগে করেছেন। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধারণা ছিলো, টুকু ও ফরহাদের মধ্যে একজন টাঙ্গাইল-৫ আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন।
ঢাকা/কাওছার/রফিক