‘আমার এতিম ভাতিজার খুনিদের বিচার হবে তো?’
Published: 13th, February 2025 GMT
‘ছোটবেলায় মাকে হারাইছে আবুল কাশেম। বছর পাঁচেক আগে মরছে তার বাপে। দাদার কাছেই সে বড় হইছে। তিন বছর আগে সেও মারা গেছে। এখন সুইটি নামে ছোট এক বোন আছে। কাশেমের মতো এমন অসহায় পোলাকে নির্মমভাবে কারা মারল! আমার এই এতিম ভাতিজার খুনিদের বিচার হবে তো?’
গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলায় আহত আবুল কাশেমের (১৭) মৃত্যুতে আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন তাঁর ফুফু নাসিমা আক্তার। গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাঁর মৃত্যু হয়।
গাজীপুর মহানগরের দক্ষিণ কলমেশ্বর গ্রামের প্রয়াত হাজি জামাল চিশতি ও রেখা আক্তার দম্পতির ছেলে আবুল কাশেম। গত শুক্রবার রাতে ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মোজাম্মেল হকের বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালায়। খবর পেয়ে গাজীপুরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা হামলাকারীদের প্রতিহত করতে যান। এ সময় তাদের ওপর হামলা হয়। এতে আবুল কাশেমসহ ১৫ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো.
গতকাল বিকেলে আবুল কাশেমের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দক্ষিণ কলমেশ্বর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। রাত ৮টার দিকে কাশেমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁর ফুফু নাসিমা আক্তার আহাজারি করছেন। তাঁকে ঘিরে আছেন স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তারা জানান, স্থানীয় একটি প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন আবুল কাশেম। মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রির কাজও করতেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিয়েছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফুফু নাসিমা বলেন, ‘পোলাডা নিজেই রান্না কইরা খাইত। পৈতৃক সূত্রে একখণ্ড জমি পাইছিল। সেখানে তিন-চারটা রুম বানাইয়া ভাড়া দিছিল। এর থেকে যা আসত, তাই দিয়া চলত। মাঝেমধ্যে কাজও করত। পোলাডারে ওরা বাঁচতে দিল না।’
তিনি জানান, প্রয়াত জামালের দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান আবুল কাশেম। তার সৎভাইয়েরা মরদেহ আনতে ঢাকায় গেছে।
এদিকে রাত ৮টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা গাজীপুর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। সেখানে আবুল কাশেমের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
আবুল কাশেমের মৃত্যুর পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ লেখেন, ‘গাজীপুরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত কাশেম শহীদ হয়ে গেছেন। প্রতিবিপ্লবের প্রথম শহীদ আমার এই ভাই। ইন্টেরিম, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করো, করতে হবে।’ পরে আরেক পোস্টে তিনি ঘোষণা দেন, রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জানাজা হবে। এর পর আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে কফিন মিছিল হবে শহীদ মিনার থেকেই। দেশের প্রত্যেক জেলা, উপজেলা, ইউনিয়নে, গ্রামে কাশেমের গায়েবানা জানাজা এবং আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে খাটিয়া মিছিল করার আহ্বান জানান হাসনাত।
এদিকে আবুল কাশেমের কফিন নিয়ে বুধবার রাতে মিছিল হয়েছে। মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ছিল। মিছিল থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির শীর্ষ নেতারা।
গতকাল রাত ৯টার কিছু আগে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে আবুল কাশেমের মরদেহ শহীদ মিনারে আনা হয়। এর পর শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের পতাকায় মোড়ানো মরদেহটি রাখা হয়। সেখানে তাঁর প্রথম জানাজা হয়।
জানাজা শুরুর আগে কাতারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্য সচিব আরিফ সোহেল।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মো. রাব্বি মিয়া (২০) নামের এক তরুণ আহত হওয়ার ঘটনায় ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে। গুলির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে আহত রাব্বির মা জোহরা খাতুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
গুলিবিদ্ধ রাব্বি উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে রাব্বি পরিবারের সঙ্গে নবীনগর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝিকাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন। তিনি পেশায় একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নবীনগর উপজেলার টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. আতাউর রহমান (৪৮), জাহিদ মিয়া (১৯), জুবায়েদ মুন্সী (১৯), মো. আহসান উল্লাহ (৪৪) ও মো. জসিম উদ্দিন (৪৪)। তাঁরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খুরশিদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ নভেম্বর টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. সানি (২০) ও একই পাড়ার মো. জিসানের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও তর্ক হয়। একপর্যায়ে ঝগড়ার সময় সানি জিসানকে ছুরিকাঘাত করেন। এ ঘটনার জেরে উভয় পক্ষ সালিস ডাকে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে নবীনগর পৌর এলাকার কালীবাড়ি মোড়ের জমিদারবাড়ির মাঠে সানিসহ তাঁর লোকজন ও জিসানসহ তাঁর লোকজন সালিসে বসেন।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত রাব্বি সানির পক্ষের সমর্থক। তবে সালিসের রায়ে সানি ও তাঁর লোকজন সম্মত হননি। সালিস ছেড়ে ওঠার সময় জিসানসহ তাঁর লোকজন সানির লোকজনের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে জিসান বন্দুক বের করে গুলি করেন। এতে রাব্বি গুলিবিদ্ধ হন এবং প্রতিপক্ষের হামলায় সানি আহত হন।
গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন রাব্বিকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, তরুণের বুকের বাঁ পাশের পাঁজরে গুলি লেগেছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গুলির ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।