বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন তাদের কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় অভিযুক্ত করার ক্ষেত্রে আইনের শাসনের প্রতি সম্মান জানায়, তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

এইচআরডব্লিউ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন। গতকাল বুধবার এইচআরডব্লিউর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষতার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও বিক্ষোভের অধিকারকে স্বীকৃতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের আগস্টে আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিপীড়ক সরকার। ওই আন্দোলন দমন করতে গিয়ে পুলিশ, বর্ডার গার্ড (বিজিবি), র‍্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল।

এইচআরডব্লিউ বলেছে, নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা খাত সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্টের’ জন্য সরকার সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে মোতায়েন করেছে। অভিযানে প্রায় ২ হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগের সমর্থক।

এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, দশকের পর দশক ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো নিপীড়নের পর বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি করা উচিত হবে না এবং নিরপেক্ষ আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচার গুলি এবং গণহারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের মতো ঘটনা রয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত সর্বোচ্চ ১ হাজার ৪০০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে একটি ‘বিশৃঙ্খল চিত্র’ তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে ‘জাতীয় ক্ষত সারিয়ে তোলার জন্য জবাবদিহি ও ন্যায়বিচার জরুরি’।

এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ৭ ফেব্রুয়ারি সমর্থকের উদ্দেশে ভারত থেকে বক্তৃতা দেওয়ার ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। ওই ঘোষণা ঘিরে সাম্প্রতিক সংঘাত শুরু হয়। যেসব শিক্ষার্থীসহ অন্যরা শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন, তাঁরাই আবার বিক্ষোভ শুরু করেন। শেখ হাসিনার পরিবার ও দলের সদস্যদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বিক্ষোভকারীরা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িও গুঁড়িয়ে দেন।

বিবৃতি অনুযায়ী, এর এক দিন বাদে ৮ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থী ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের পর অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দেয়, ‘পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট’ ব্যক্তিদের এই অভিযানের লক্ষ্যবস্তু করা হবে। ওই ব্যক্তিদের ‘ডেভিল’ বা ‘শয়তান’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।

এইচআরডব্লিউ বলেছে, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও বিক্ষোভের অধিকার আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে সুরক্ষিত একটি মৌলিক অধিকার। অন্তর্বর্তী সরকারকে এই অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। এমনকি সাবেক কর্তৃত্ববাদী সরকারের সমর্থকেরাও যদি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও বিক্ষোভ করেন, তার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত সরকারের।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মানদণ্ড অনুযায়ী, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উচিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও বিক্ষোভের অধিকারকে রক্ষা করা এবং এই অধিকারকে এগিয়ে নেওয়া। একই সঙ্গে সমাবেশ ও বিক্ষোভ ঘিরে বলপ্রয়োগের আগে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে যতটা সম্ভব অহিংস পথ অবলম্বন করতে হবে।

অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়েছে, আগামী মার্চে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাব আনার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। ওই প্রস্তাবে কারিগরি সহায়তা, আরও তদন্ত, পর্যবেক্ষণ এবং জাতিসংঘভিত্তিক মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে।

মীনাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, শেখ হাসিনার সরকারের দমনপীড়নের কারণে বাংলাদেশের জনগণ ক্ষুব্ধ। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি তাঁদের প্রাপ্য। তবে এটা অধিকারের প্রতি সম্মান রেখেই করতে হবে। ‘মব’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সহিংসতাসহ সব ধরনের অপরাধের সাজা দিতে হবে। তবে সরকার যখন বিরোধীদের ‘ডেভিল’ হিসেবে আখ্যা দেয়, তখন তা নিরাপত্তা বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এইচআরডব ল উ ন শ চ ত কর সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’

স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”

বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।

বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।” 

উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”

উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।” 

তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।” 

তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।

রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।” 

উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।” 

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”

পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।” 

তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন। 

রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু 
  • বিএনপির শ্রমিক সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঢল
  • সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ৪৫% রাজনৈতিক
  • নির্বাচনে র‌্যাব-পুলিশের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনী যুক্ত করাসহ ১২ প্রস্তাব
  • ‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
  • ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ৬০০ সেনা নিহত