আরও প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করলেন ট্রাম্প ও মাস্ক
Published: 15th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টা ইলন মাস্ক মার্কিন আমলাতন্ত্রে বড় ধরনের কাটছাঁটের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবে গতকাল শুক্রবার ৯ হাজার ৫০০ জনের বেশি কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ফেডারেল সরকারের ভূমি ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে প্রবীণ সেনাদের দেখভাল পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিযুক্ত কর্মীরা এ তালিকায় আছেন।
স্বরাষ্ট্র, জ্বালানি, প্রবীণবিষয়ক, কৃষি এবং স্বাস্থ্য ও মানবসেবা বিভাগের কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়েছে। চাকরির এক বছর হয়নি, এমন কর্মীদের নিশানা করা হয়েছে।
স্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থা কনজ্যুমার ফাইন্যান্সিয়াল প্রটেকশন ব্যুরোর মতো কিছু সংস্থার কার্যক্রম একরকম বন্ধ হয়ে গেছে। এসব সংস্থায় নির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তিতে থাকা কর্মীদেরও ছাঁটাই করা হয়েছে।
কর সংগ্রহকারী ইন্টারনাল রেভেনিউ সার্ভিস আগামী সপ্তাহে কয়েক হাজার কর্মীকে বরখাস্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি বলেছেন, এ পদক্ষেপের কারণে ১৫ এপ্রিল আয়কর দাখিলের সময়সীমার আগে মার্কিন নাগরিকদের সম্পদ সংকুচিত হতে পারে।
রয়টার্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ট্রাম্প ও মাস্কের প্রস্তাবে সায় দিয়ে যে ৭৫ হাজার কর্মী স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, তার থেকে ছাঁটাইয়ের এ ঘটনা আলাদা।
ট্রাম্প বলেছেন, ফেডারেল সরকার খুব বেশি চাপে আছে এবং অপচয় , জালিয়াতির কারণে প্রচুর অর্থ নষ্ট হচ্ছে। ফেডারেল সরকারের প্রায় ৩৬ লাখ কোটি ডলার ঋণ আছে এবং গত বছর ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলারের ঘাটতি আছে।
ডেমোক্র্যাট দলের কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য বলেছেন, ফেডারেল খরচের ওপর আইনসভার যে সাংবিধানিক কর্তৃত্ব আছে, তা ক্ষুণ্ন করছেন ট্রাম্প। যদিও কংগ্রেসের উভয় কক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকা রিপাবলিকানরা ব্যাপকভাবে এই পদক্ষেপগুলোকে সমর্থন করেছেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনে যুক্ত করা নতুন বিভাগ ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েনসি’র প্রধান করেছেন ইলন মাস্ককে। এ ধনকুবের যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বাজেটের এক লাখ কোটি ডলার সাশ্রয় করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গত বছর এ বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি ডলার। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাবদ ব্যয় হয় বাজেটের ৫ শতাংশের কম।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী মাস্কের বল প্রয়োগের মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকেরা। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কার্যক্রমের ওপর তিনি ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট শুক্রবার এসব সমালোচনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিশিয়েনসিকে আর্থিক নিরীক্ষার সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি। বেসেন্টের দাবি, এ বিভাগের কর্মীরা বিভিন্ন সংস্থায় গিয়ে নিরীক্ষার কাজ করছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র কর ম কর ছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।