চট্টগ্রামের রাউজানে এলোপাতাড়ি গুলিতে আহত হয়েছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা পিয়ার মোহাম্মদ চৌধুরী বাবু (৩৫)। গতকাল শনিবার উপজেলার পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের উত্তর গুজরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
পিয়ার রাউজান সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খানখানাবাদ গ্রামের মাওলানা নুর মোহাম্মদের ছেলে। তিনি রাউজান কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আধিপত্য নিয়ে পিয়ারের সঙ্গে বিরোধ চলছে বিএনপি নেতা গিয়াস কাদের চৌধুরীর আরেক অনুসারী দলটির কর্মী মো.

রায়হানের। এরই জেরে রায়হানের নেতৃত্বে ১০-১৫ জন গুজরা গ্রামের শ্রীশ্রী অন্নদা ঠাকুর আদ্যপীঠ রামকৃষ্ণ সংঘ মন্দির সংলগ্ন পুকুর পাড়ে পিয়ারকে গুলি করে মৃত ভেবে ফেলে যায়।
পিয়ারের সঙ্গে থাকা মোহাম্মদ আরাফাত জানান, গত বৃহস্পতিবার হজরত চাঁদ শাহ (রা.)-এর বার্ষিক ওরস নিয়ে পিয়ারের সঙ্গে রায়হানের ঝামেলা হয়। সকালে মন্দিরের সামনের পুকুরের সেচ কাজ দেখার সময় তিনটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় এসে রায়হান, দিদার, সাজ্জাদসহ ১০-১৫ অস্ত্রধারী গুলি করে পালিয়ে যায়। পরে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পরে বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পূর্ব রাউজান ও কদলপুর ইউনিয়নে অবৈধ পাহাড় কাটা এবং চাঁদার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে পিয়ার ও রায়হানের মধ্যে কয়েক মাস ধরেই বিরোধ চলছে। দু’পক্ষই এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
পিয়ারের মা মোরশেদা বেগম বলেন, ‘পিয়ার রোজা ছিল। সকালে পুকুর সেচের কাজ দেখার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। বেলা ১১টার পর খবর পাই, তাকে গুলি করা হয়েছে। আমি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
রাউজান উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা জানান, পিয়ারের ঊরু, তলপেটসহ একাধিক স্থানে গুলি লেগেছে। নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে পাঠানো হয়েছে।
মন্দিরের পুরোহিত তপন চক্রবর্তী বলেন, মন্দিরের সামনের পুকুরে ঘাট তৈরিতে সরকারি বরাদ্দ এসেছে। সাব-কন্ট্রাক্টর হিসেবে পিয়ার কাজ শুরুর জন্য পানি সেচ দিচ্ছেন। সেটি দেখতে এলে শনিবার তাঁকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা।’
রাউজান থানার ওসি মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, ঘটনাস্থলে সাত রাউন্ড গুলির খোসা পেয়েছেন তারা। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মন দ র

এছাড়াও পড়ুন:

চাঁদাবাজ রিয়াদের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ মিশনপাড়া

নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশনপাড়ায় চাঁদাবাজি, দখলবাজি, হুমকি ও হয়রানিমূলক মামলার ভয়ঙ্কর এক চক্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রিয়াদ  দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে দোকান বসানো পর্যন্ত সবকিছুতেই চাঁদা দাবি করেন তিনি ও তাঁর অনুসারীরা।

চাঁদা না দিলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা, পরে দেওয়া হয় সাজানো মামলা। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন রয়েছে রহস্যজনকভাবে নীরব।

স্থানীয়রা বলছেন, রিয়াদ নিজে কোনো রাজনৈতিক আদর্শের লোক না হলেও, একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তাঁদের ব্যবহার করেন নিজের স্বার্থে।

রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় রিয়াদ এতটাই দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করেন যে, থানায় একাধিক অভিযোগের পরও তাঁর বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার অন্যতম আসামিও এই রিয়াদ। সেইসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় তাঁর নামে একাধিক চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মামলা রয়েছে।

এমনকি তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়েছে বলে জানা যায়। কিন্তু তারপরও তিনি দিব্যি এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আদায় করে চলেছেন চাঁদা, দখল করে নিচ্ছেন জমি, দোকান।

মিশনপাড়ায় বর্তমানে যেসব ভবন নির্মাণাধীন রয়েছে, তার মধ্যে প্রায় প্রতিটির কাজেই বাধা দেওয়া হয়েছে রিয়াদের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাড়ির মালিক বলেন, “আমরা পরিবার নিয়ে এখানে থাকি।

নিজের পৈতৃক জমিতে ভবন নির্মাণ করছি। হঠাৎ একদিন ৪-৫ জন যুবক এসে জানায়, বসের অনুমতি ছাড়া কাজ হবে না। পরে রিয়াদ নিজেই ফোন করে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। না দিলে মালামাল ফেলে দেওয়া, শ্রমিকদের মারধরের হুমকি দেয়।”

এই অভিজ্ঞতা শুধু একজনের নয়। অন্তত ৮-১০ জন ভবন মালিক এবং কয়েকজন ঠিকাদার একই ধরনের ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন। তাঁদের ভাষ্য, রিয়াদের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিয়মিতভাবে ১ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে। কেউ না মানলে থেমে যায় কাজ, চলে হামলা-মামলা আর হয়রানির স্বীকারে।

মিশনপাড়ার বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, রিয়াদ এলাকায় একটি ভয়ঙ্কর ‘মিনি মাফিয়া নেটওয়ার্ক’ গড়ে তুলেছেন। ভবন নির্মাণ, দোকান বসানো, এমনকি ফুটপাতে ব্যবসা করতেও তাঁকে চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় চলতে থাকে ভয় দেখানো, ভাঙচুর, এমনকি জীবননাশের হুমকি। অনেকেই বলেন, তাঁরা যেন জিম্মি হয়ে পড়েছেন রিয়াদ ও তাঁর চক্রের হাতে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, “আমার পৈতৃক জমিতে ভবন করতে গিয়ে বিপদে পড়েছি। ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। না দিলে শ্রমিকদের মারধর করবে বলে হুমকি দিয়েছে। থানায় গিয়ে অভিযোগ করলাম, কিন্তু কিছুই হয়নি। বরং রিয়াদ খবর পেয়ে হুমকি দিয়ে চাঁদার পরিমান বাড়িয়ে দিচ্ছে।”

একজন ঠিকাদার বলেন, “ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে আমাদের এখন বেশি খরচ হয় রিয়াদকে সামলাতে। কোনো আইন-শৃঙ্খলা নেই। যে যেখানে ইচ্ছা চাঁদা চাচ্ছে, না দিলে মামলা, মারধর। কোথাও নালিশ করতে পারি না, বরং নালিশ করলেই বিপদ আরও বাড়ে।”

আরেকজন ঠিকাদার বলেন, “রিয়াদ এখন এলাকাবাসীর গলার কাঁটা। কাজ শুরু করলেই তার লোকজন এসে বলে, বসের অনুমতি লাগবে। চাঁদা না দিলে মালামাল উধাও, শ্রমিক পালায়, পরে থানায় গিয়ে দেখি আমার নামে নাকি মারামারির মামলা!”

ভুক্তভোগীরা জানান, শুধু ভীতি ও চাঁদাবাজি নয়, রিয়াদ ও তাঁর সহযোগীরা একটি সংঘবদ্ধ আইনি হয়রানির চক্রও তৈরি করেছেন। কেউ তাঁদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে বা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে উল্টো তাঁদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। পরবর্তীতে সেই মামলা আপোষে নিষ্পত্তির জন্য আবারও দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রিয়াদের এতোসব অপরাধ কর্মকাণ্ড সত্ত্বেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের মনে প্রশ্নের জন্ম নিয়েছে, কেন এই নীরবতা? তাঁর নামে একাধিক মামলা ও ওয়ারেন্ট থাকার পরও কীভাবে তিনি খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ান? পুলিশ কি ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে আড়াল করছে?

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমরা অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন। অপরাধী হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে এলাকাবাসীর দাবি ভিন্ন।

তাঁরা বলছেন, শুধু অভিযোগ নয়, ভিডিও প্রমাণ, অডিও ক্লিপস, এমনকি লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার পাননি তাঁরা। বরং অভিযোগ জানানোর পর হুমকির মাত্রা বেড়ে যায়। অনেকে ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন বা কাজ বন্ধ রেখেছেন।

রিয়াদের বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে গেলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

স্থানীয় কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কাছেও বহুবার গেছেন এলাকাবাসী। কিন্তু কেউই কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসেননি। বরং অনেকে অভিযোগ করেন, রিয়াদ একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক গ্রুপের ‘অঘোষিত কার্যকর্তা’ হিসেবে কাজ করেন, এবং সেই পরিচয়ের কারণেই তাঁকে ঘিরে রয়েছে এক ধরনের অদৃশ্য নিরাপত্তা।

মিশনপাড়ার এই অবস্থা এখন পুরো নারায়ণগঞ্জ শহরের নিরাপত্তা ও সুশাসনের জন্য ভয়ঙ্কর এক সংকেত হয়ে উঠেছে। নাগরিক সমাজের প্রশ্ন , যদি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও একাধিক মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার না করা হয়, তবে আইনের শাসন কোথায়? 

সচেতন মহলের দাবি, এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রিয়াদ ও তাঁর চক্র আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। তখন শুধু মিশনপাড়া নয়, নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রতিটি প্রান্তেই গড়ে উঠবে এমন চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট।

এখনই সময় রিয়াদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার, নয়তো ঘটতে পারে ভয়ংকর অপ্রীতিকর কোন ঘটনা। আক্রান্ত হতে পারে ভুক্তভোগীরা।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ