অনুগত সাবেক তরুণ সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তা দল সাজালেন ট্রাম্প
Published: 17th, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে প্রশাসনের শীর্ষ কিছু পদে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের বসিয়েছিলেন। ঊর্ধ্বতন এসব সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাইন-ইলেভেনের পর ইরাক ও আফগানিস্তানে নেতৃস্থানীয় পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এখন ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন মাঠপর্যায়ের একদল সাবেক সেনা এবং তরুণ কর্মকর্তা। তাঁরা আমেরিকার তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের (জিডব্লিউওটি) পরিকল্পনা করার পরিবর্তে যুদ্ধ পরিচালনা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছিলেন।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস এবং জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড—ইরাক ও আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালনকালে তাঁরা সবাই নিম্ন থেকে মধ্যম স্তরের সেনাসদস্য ছিলেন। শুধু ওয়ালৎসের বয়স ৫০ বছরের বেশি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিশেষ শাখা গ্রিন বেরেটের সদস্য ছিলেন।
উল্লিখিত ব্যক্তিদের নিয়ে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা দলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গঠিত হয়েছে। তাঁরা একটি তরুণ প্রজন্মের সাবেক সেনাসদস্যদের প্রতিনিধিত্ব করেন, যাঁদের প্রায় সময় মোহমুক্ত, প্রথাগত ইনস্টিটিউশনের বিষয়ে সন্দিহান বলে মনে করা হয়। এসব সেনার অনেকে মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যের অমীমাংসিত যুদ্ধে বছরের পর বছর (ইনস্টিটিউশন) তাঁদের ব্যর্থ করা হয়েছে।
ট্রাম্প যাঁদের নিয়োগ দিয়েছেন তাঁদের অনেকে, বিশেষ করে গ্যাবার্ড ও হেগসেথ (কংগ্রেসের) সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইকারী কর্মকর্তাদের তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাঁরা মন্ত্রী পর্যায়ের দায়িত্ব পালনের অযোগ্য।
হেগসেথ ও ভ্যান্স গত সপ্তাহে ব্রাসেলসে ন্যাটো এবং মিউনিখে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় নিজেদের বেশ ভালোভাবেই তুলে ধরেছেন। তাঁরা উভয়ে এমন সব কথাবার্তা বলছেন, যা ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির পক্ষে যায়। সাবেক সেনা কর্মকর্তা হেগসেথ ‘ইউরোপকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য নিজেদের দায়িত্ব’ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ন্যাটো সদস্যদের কাছ থেকে তিনি প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
মেরিন কোরের সাবেক সদস্য ভ্যান্স (মিউনিখের নিরাপত্তা সম্মেলনে) ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্দেশে একটি জ্বালাময়ী বক্তৃতা দেন। বক্তৃতায় তিনি রাশিয়া ও চীনের হুমকিকে এতটা গুরুত্ব দেননি। বাক্স্বাধীনতার দমন ও অতি ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় ইউরোপীয় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সরকারকে অভিযুক্ত করেছেন তিনি।
‘মিথ্যা অজুহাতে যুদ্ধে পাঠানোর অভিযোগ’কংগ্রেসে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান—উভয় পার্টির সদস্যরা স্বীকার করেছেন, বৃহত্তর সমাজের হতাশার জবাবে জিডব্লিউওটির সাবেক এসব সদস্য ও কর্মকর্তারা অনন্য রকমের শক্তিশালী বার্তাবাহক হতে পারেন।
ইরাক ও আফগানিস্তানে তিনবার দায়িত্ব পালনকারী সাবেক আর্মি রেঞ্জার ডেমোক্রেটিক প্রতিনিধি জেসন ক্রো বলেন, রাজনৈতিকভাবে বললে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ করা সাবেক সদস্যরা রাজনীতির বিষয়ে তুলনামূলক বেশি সন্দেহভাজন। আর তাঁরাই সেই সব মানুষ, যাঁরা উপলব্ধি করছেন যে অনেক ক্ষেত্রেই মিথ্যা অজুহাতে তাঁদের (যুদ্ধে) পাঠানো হয়েছিল।
‘স্যালুট ও আদেশ তামিল’ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে (তৎকালীন) বর্তমান ও অবসরপ্রাপ্ত অনেক তিন ও চার তারকা জেনারেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এসব কর্মকর্তার মধ্যে প্রথম প্রতিরক্ষা সচিব জিম ম্যাটিস, জয়েন্ট চিফস চেয়ারম্যান জেনারেল মার্ক মিলি অথবা তাঁর চিফ অব স্টাফ জন কেলির কথা বলা যায়। তাঁদের তৎপরতা প্রায় সময় ট্রাম্পকে হতাশ করেছিল।
ট্রাম্প বলয়ের ঘনিষ্ঠ সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, হেগসেথ ও গ্যাবার্ডকে বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ হলো, তাঁরা জেনারেল ছিলেন না।
এই কর্মকর্তা বলেন, নিম্ন র্যাঙ্কের কর্মকর্তা ও তালিকাভুক্ত সেনাদের শীর্ষ পদে নিয়োগ দেওয়ার মধ্যে দিয়ে চার তারকার মতো প্রথাগত এলিটদের সরাসরি প্রত্যাখ্যান ট্রাম্পের জন্য কিছুটা সুবিধাজনক হবে। এসব কর্মকর্তা তাঁর (ট্রাম্পের) ধামাধরা হিসেবে কাজ করবেন।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) এমন মানুষ খুঁজছেন, যাঁরা তাঁকে স্যালুট ও তাঁর আদেশ তামিল করতে চান। এসব মানুষকে গত পাঁচ থেকে সাত বছর জীবিকার জন্য চাকরি করতে হয়েছে। বিপরীত দিকে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের, যাঁরা বিভিন্ন বোর্ডে ছিলেন এবং আয়েশ করে নানা সুবিধা নিয়েছেন।’
নতুন প্রজন্মের এসব সাবেক সেনাসদস্যকে সম্ভবত ন্যাটোর মতো ঐতিহ্যবাহী বহুজাতিক সামরিক জোটে কায়েমি স্বার্থ নেই, যা ট্রাম্পের আগের প্রশাসনের জেনারেলদের ছিল। তাঁরা ন্যাটোর স্বার্থ রক্ষা করতে চাইতেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মো. রাব্বি মিয়া (২০) নামের এক তরুণ আহত হওয়ার ঘটনায় ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে। গুলির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে আহত রাব্বির মা জোহরা খাতুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
গুলিবিদ্ধ রাব্বি উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে রাব্বি পরিবারের সঙ্গে নবীনগর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝিকাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন। তিনি পেশায় একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নবীনগর উপজেলার টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. আতাউর রহমান (৪৮), জাহিদ মিয়া (১৯), জুবায়েদ মুন্সী (১৯), মো. আহসান উল্লাহ (৪৪) ও মো. জসিম উদ্দিন (৪৪)। তাঁরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খুরশিদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ নভেম্বর টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. সানি (২০) ও একই পাড়ার মো. জিসানের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও তর্ক হয়। একপর্যায়ে ঝগড়ার সময় সানি জিসানকে ছুরিকাঘাত করেন। এ ঘটনার জেরে উভয় পক্ষ সালিস ডাকে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে নবীনগর পৌর এলাকার কালীবাড়ি মোড়ের জমিদারবাড়ির মাঠে সানিসহ তাঁর লোকজন ও জিসানসহ তাঁর লোকজন সালিসে বসেন।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত রাব্বি সানির পক্ষের সমর্থক। তবে সালিসের রায়ে সানি ও তাঁর লোকজন সম্মত হননি। সালিস ছেড়ে ওঠার সময় জিসানসহ তাঁর লোকজন সানির লোকজনের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে জিসান বন্দুক বের করে গুলি করেন। এতে রাব্বি গুলিবিদ্ধ হন এবং প্রতিপক্ষের হামলায় সানি আহত হন।
গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন রাব্বিকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, তরুণের বুকের বাঁ পাশের পাঁজরে গুলি লেগেছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গুলির ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।