আরও একটি আইসিসি টুর্নামেন্ট দরজায় কড়া নাড়ছে। যেখানে বিশ্বের সেরা আটটি দল অংশ নিবে। তাদের তারকারা নিজেদের সেরাটা দিয়ে বিশ্বমঞ্চে জানান দিবেন শ্রেষ্ঠত্বের। নজর থাকবে এমন বেশ কিছু তারকার দিকে। চলুন দেখে নেওয়া যাক এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কোন কোন তারকা আলো ছড়াবেন।

ফখর জামান (পাকিস্তান):
সাঈদ আনোয়ারের পর পাকিস্তানের সীমিত ওভারের ক্রিকেটের সেরা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে বিবেচনা করা হয় ফখর জামানকে। মূলত প্রয়োজনের মুহূর্তে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার তার সামর্থের কারণেই এমন তকমা পাচ্ছেন তিনি। বিস্ফোরক স্ট্রোক প্লেয়ার তিনি।

২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনি ওয়ানডেতে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যান হিসেবে সর্বোচ্চ ২১০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভারতের বিপক্ষেও তিনি ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন সেঞ্চুরিটি করেছিলেন। গেল জুনে ইনজুরিতে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু পুরোপুরি সেরে উঠে ত্রিদেশীয় সিরিজে খেলেছেন। এবার আরও একটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে আলো ছড়ানোর পালা তার।

আরো পড়ুন:

আগামী বিপিএল নিয়ে কাজ শুরু, ‘সুখবর’ দিলেন ফারুক

প্রস্তুতি ম্যাচেই বিশ্বাসের ঘাটতি

ড্যারিল মিচেল (নিউ জিল্যান্ড):
নিউ জিল্যান্ডের সামনে ২৫ বছর পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আরও একটি শিরোপা জয়ের সুযোগ। আর সেই যাত্রায় তাদের কাণ্ডারি হতে পারেন ড্যারিল মিচেল। এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার এশিয়ার কন্ডিশনে খুব ভালো করেন। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ৬৯ গড়ে করেছিলেন ৫৫২ রান। পাকিস্তানের মাটিতে ৫১.

৭০ গড়ে করেছেন ৫১৭ রান। সবশেষ ত্রিদেশীয় সিরিজে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তারা। সেখানে তিন ম্যাচের দুটিতে আত্মপ্রত্যয়ী হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছিলেন। মিডল ওভারে তিনি বেশ কার্যকরী ব্যাটিং করেন। এবার চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিজেকে আরও একবার প্রমাণ করার পালা।

হেনরিখ ক্লাসেন (দক্ষিণ আফ্রিকা):
তার বিধ্বংসী ব্যাটিং প্রতিপক্ষের আত্মবিশ্বাস গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। মিডল অর্ডারে তিনি একজন প্রভাব বিস্তারকারী ব্যাটসম্যান। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে কমপক্ষে ৫০০ বল খেলে সেরা গড় তোলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছেন ক্লাসেন। বড়সর শারীরিক গঠন ও বাহুর প্রবল শক্তিকে কাজে লাগিয়ে অনায়েসে বল মাঠের বাইরে পাঠাতে পারেন তিনি। স্পিনারদের বিপক্ষে খেলতে পারেন দারুণ সব পুল শট। তাতে করে প্রতিপক্ষরা রান নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আরও একবার আইসিসির মঞ্চে এবার ক্লাসেন শো দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেটপ্রেমীরা।

শ্রেয়াস আয়ার (ভারত):
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির এবারের আসরে যাদের দিকে নজর থাকবে তার মধ্যে ভারতের শ্রেয়াস আয়ার অন্যতম। সম্প্রতি তার দারুণ পারফরম্যান্সে ভর করে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছে ভারত। মিডল অর্ডারে তিনি দারুণ কার্যকর ব্যাটিং করেন। সম্প্রতি ১২৩.১ স্ট্রাইক রেটে মিডল অর্ডারে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেছেন ১৮১ রান। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা সুবিধা করতে না পারলে মিডল অর্ডারে তার মতো একজন আগ্রাসী ব্যাটসম্যান হাল ধরতে পারবেন এবং দলের প্রয়োজন মেটাতে পারবেন।

বেন ডাকেট (ইংল্যান্ড):
টপ অর্ডারে উড়ন্ত সূচনা এনে দিতে বেন ডাকেট বেশ কার্যকর। ফিল সল্টের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে বাম-ডানের দারুণ কম্বিনেশন করেন তিনি। পাকিস্তান ও আরব আমিরাতে তার মতো ব্যাটসম্যান বেশ কার্যকর হবেন। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ডের হয়ে দারুণ ভূমিকা রাখতে পারবেন বলেই বিশ্বাস ক্রিকেটবোদ্ধাদের। তার দারুণ সূচনার ওপর ভর করে হ্যারি ব্রুক, জো রুট ও জস বাটলাররা ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।

সদ্য শেষ হওয়া ভারতের বিপক্ষের তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১২২.৪২ স্ট্রাইক রেটে ১৩১ রান করেছিলেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে এবার তার ব্যাটের কারিশমা দেখার পালা।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব য টসম য ন ক র যকর

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস নয়, উদ্দেশ্য আরও বেশি কিছু

নব্বয়ের দশক থেকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর কৌশলগত লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। আর তা হলো, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করা। যখন ওয়াশিংটন ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে অসলো শান্তিচুক্তি করেছিল, তখনও তিনি লক্ষ্য থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। 

তিনি ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তিচুক্তির সমালোচনা করলেও ধারাবাহিকভাবে ‘ইরানি হুমকি’ তুলে ধরেছিলেন। এমনকি যখন বিষয়টি বিশ্বব্যাপী বা আঞ্চলিক অগ্রাধিকার ছিল না, তখনও নেতানিয়াহু ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে কথা বলতে একাই দাঁড়িয়েছিলেন। 
নেতানিয়াহু সর্বদা চেয়েছেন ইহুদি ইতিহাসে তাঁর ছাপ রেখে যেতে। ইরানি পারমাণবিক হুমকি ধ্বংস করা নেতা হিসেবে নিজেকে তিনি স্মরণীয় করতে চেয়েছেন। 

পরিকল্পনা ব্যর্থ, উচ্চাকাঙ্ক্ষা পুনরুজ্জীবিত 
২০১০ সালের মধ্যে নেতানিয়াহু এবং তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এহুদ বারাক সেনাবাহিনীকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় হামলার প্রস্তুতি নিতে বলেন। পাশাপাশি তারা ইরানি বিজ্ঞানীদের হত্যা করার নির্দেশ দেন। তবে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পিছু হটার কারণে সেই অভিযান স্থগিত হয়ে যায়। তৎকালীন চিফ অব স্টাফ গাবি আশকেনাজি, শিন বেট প্রধান ইউভাল ডিস্কিন ও মোসাদপ্রধান মেইর দাগান সবাই সতর্ক করে দিয়েছিলেন, মার্কিন সমর্থন ছাড়া ইরানে আঘাত করার সামরিক ক্ষমতা ইসরায়েলের নেই। 

এহুদ বারাকের সতর্কবার্তায় মার্কিন প্রশাসন কূটনীতির দিকে ঝুঁকে তেহরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে এতে ক্ষুব্ধ হন নেতানিয়াহু। কিন্তু তাঁর ইরানে বোমা হামলার স্বপ্ন কখনও ম্লান হয়নি। তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চে নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন। এমনকি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদকে বোমার একটি কার্টুন দেখিয়ে তিনি সতর্ক করেছিলেন, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সীমারেখা অতিক্রম করছে। 

সর্বশেষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে নেতানিয়াহু কিছুটা সফলতার দেখা পান। তিনি ট্রাম্পকে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে যেতে রাজি করাতে সফল হন। রাজনৈতিক ও সামরিক গতি বজায় রাখতে তিনি সামরিক বাহিনীকে বহিরাগত সাহায্য ছাড়াই ইরানের ওপর হামলার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। এই নীতি বাক্যটি তিনি প্রায়ই পুনরাবৃত্তি করেন, ‘বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্রের ভাগ্য অপরিচিতদের ওপর ছেড়ে দেওয়া যাবে না, এমনকি তারা আমাদের মিত্র হলেও।’ 

এর পর তেল আবিব গুপ্তহত্যা এবং সাইবার আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। ২০২০ সালে ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহের হত্যাকাণ্ডে একটি বার্তা ছিল, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ একটি নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। 

প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ কখনও থামেনি। নেতানিয়াহু এই সংঘাতের স্থপতি হিসেবেই রয়েছেন। নাফতালি বেনেট-ইয়ার ল্যাপিড সরকারের অধীনে নেসেটে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পরও তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনেট নেতানিয়াহুর অবস্থানকে সমর্থন করে গেছেন। এভাবে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের দৈনন্দিন রাজনৈতিক জীবনে ইরানবিষয়ক ফাইলটি গেঁথে দিয়েছেন। কোনো প্রধানমন্ত্রী এটি উপেক্ষা করতে পারবেন না। 

গুপ্ত হামলা থেকে প্রকাশ্য যুদ্ধ 
হামাসের ইসরায়েলে আক্রমণ তেল আবিবের ভয়কে আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। নেতানিয়াহু সরকার একাধিক ফ্রন্টে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। গাজা, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং গোপনে ইরানে হামলা চালায় তারা। 

তেল আবিব বিশ্বাস করে, ২০১০ সালে ইরানে আঘাত না করে তারা একটি কৌশলগত ভুল করেছিল। এখন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো আরও বেশি সুরক্ষিত এবং এর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী। কিছু ইসরায়েলি বিশ্লেষক যুক্তি দেন, যদি তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করে, তাহলে তারা এবং তার মিত্ররা আরও সাহসী হয়ে উঠবে। 

বর্তমান যুদ্ধ নেতানিয়াহুর কয়েক দশক ধরে চলা উন্মাদনার চূড়ান্ত পরিণতি। ইসরায়েলি মিডিয়া এখন স্বীকার করছে, অপারেশন ‘লায়নস কারেজ’ ইরানি বিজ্ঞানী, পারমাণবিক স্থাপনা, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) অবকাঠামো এবং সামরিক বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করে চলছে। কিন্তু উচ্চাকাঙ্ক্ষা আরও গভীর।

শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তনের নীলনকশা 
ইসরায়েলি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ও কৌশলগত পরিকল্পনাকারীদের নথিভুক্ত তথ্য বলছে, ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো ইরানের শাসন ব্যবস্থা পরিবর্তন। দেশটির ইসলামী প্রজাতন্ত্র ভেঙে ফেলা, একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিরোধ অক্ষের অস্তিত্ব মুছে ফেলা। এ ছাড়া ইরানের নেতৃত্বের ওপর হামলা এবং জ্বালানি তেল অবকাঠামোর ওপর আক্রমণের মাধ্যমে দেশটির অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা উস্কে দেওয়া। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলো বিশাল, তবে তেল আবিব এটিকে একটি ঐতিহাসিক সূচনা হিসেবে দেখছে। 

এটি আর ছায়াযুদ্ধ নয়। প্রথমবারের মতো, ইসরায়েল প্রকাশ্যে ইরানি ভূখণ্ডের গভীরে আক্রমণ করেছে। তেহরানও সরাসরি হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে। পশ্চিমা শক্তিগুলো দেশটিকে রক্ষা করার জন্য ছুটে এসেছে। 

ইসরায়েল বাজি ধরছে, তারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রকে ভেঙে ফেলতে পারে এবং আগামী কয়েক দশক ধরে পশ্চিম এশিয়ার শক্তির সমীকরণ নতুন করে লিখতে পারে।

তবে হিসাবটি এত সরল নয়। কারণ, ইরান এখনও বিচ্ছিন্ন নয়। নেতানিয়াহু হয়তো অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভুগছেন। প্রতিরোধ অক্ষ হিজবুল্লাহ থেকে হুতি এবং ইরাকি ছোট ভোট উপদল পর্যন্ত তেহরানের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। এই অঞ্চলটি আরও বিস্তৃত সংঘাতের জন্য প্রস্তুত। 

নেতানিয়াহু একটি জানালা দেখতে পাচ্ছেন। তেহরান কেবল একটি নয়, বরং অনেকগুলো সীমারেখা অতিক্রম করতে দেখছে। পশ্চিম এশিয়ার বাকি অংশ এমন একটি যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছে, যা মানচিত্রটি নতুন করে আঁকতে পারে। 

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ