চাকরি বিধিমালার (সার্ভিস রুলস) দাবি জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দাবি আদায়ে কর্তৃপক্ষকে তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছেন তারা। আগামী ২০ ফ্রেব্রুয়ারির মধ্যে চাকরি বিধিমালা প্রণয়ন না হলে মেট্রোরেল সেবা বন্ধ করার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রেস রিলিজ অনুযায়ী, ডিএমটিসিএলের সরাসরি উন্মুক্ত নিয়োগের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি বিধিমালা প্রণয়নের জন্য জোরালো দাবি জানানো হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডিএমটিসিএলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ খসড়া চাকরি বিধিমালার ওপর বিশদ আলোচনা করেন এবং খসড়া চাকরি বিধিমালার সংশোধন সাপেক্ষে দ্রুত বোর্ড মিটিং আয়োজনের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরিবিধিমালা প্রণয়ন করবেন বলে আশ্বাস দেন।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মহোদয় স্মারক নং-২৮.

০০.০০০০.০০০.৬০.০০১.২৪.১২২, তারিখ-১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ এর (খ) অনুসারে স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি বিধিমালা প্রণয়ন করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। উক্ত নির্দেশনা মোতাবেক ডিএমটিসিএল কর্তৃক ৬০তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত ৭.৬, ৮.৩ ও ৯.৩ অনুযায়ী ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি বিধিমালা প্রণয়ন করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে প্রেরণ করার নির্দেশনা দেন। কিন্তু প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও কোনো এক রহস্যজনক কারণে আজ অবধি প্রণয়ন করা হয়নি। স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি বিধিমালা না থাকায় ডিএমটিসিএলের ২০০ জনেরও বেশি দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মকর্তা ও কর্মচারী চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ফলে মেট্রোরেল পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

এমতাবস্থায়, তিন কর্মদিবস অর্থাৎ ১৮, ১৯ এবং ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ চাকরি বিধিমালা প্রণয়ন না হলে, আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) থেকে মেট্রোরেল সেবা বন্ধ থাকবে এবং ঢাকাবাসী মেট্রোরেল সেবা থেকে বঞ্চিত হলে ডিএমটিসিএল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চূড়ান্তভাবে দায়ী থাকবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৭ সালে কি নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া যাবে

২০২২ সালে সর্বশেষ যে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার আসার পরে তা বাতিল করা হয়। কারণ, এই শিক্ষাক্রমের ব্যাপারে প্রবল জন–অসন্তোষ ছিল। বিপরীতে ঘোষণা দেওয়া হয়, ২০২৭ সালে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম চালু করা হবে। কিন্তু এ জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া আদৌ সম্ভব হবে কি না।

একটি শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করার জন্য কতটুকু সময় লাগতে পারে, সেটি বলা মুশকিল। কারণ, শিক্ষাক্রমের কতটা বদল করা হবে এবং কারা, কীভাবে এই সংস্কারের কাজ করবেন, তার ওপর সময়ের ব্যাপ্তি নির্ভর করে। অন্য দেশের শিক্ষাক্রম গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সময় বেশি লাগে; কারণ তখন এর ভালো-মন্দ পাইলটিং করে যাচাই করার দরকার হয়। শিক্ষাক্রম প্রণয়ন বা সংস্কারে অর্থের জোগানদাতা অন্য রাষ্ট্র বা বিদেশি সংস্থা হলেও সময় বেশি লাগতে পারে। আবার বিদ্যমান শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে কেবল সংশোধনের কাজ করলে সময় কম লাগে। ২০২৭ সালের শিক্ষাক্রমে বদল কতটুকু, কীভাবে আনা হবে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি।

শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।

২০২২ সালের শিক্ষাক্রম প্রণয়নের জন্য প্রায় চার বছর সময় লেগেছিল। এই শিক্ষাক্রমে পাঠদানের পদ্ধতি, শিখন কার্যক্রম ও মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় আমূল পরিবর্তন আনা হয়। মূলত ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থাকে অনুসরণ করে এই শিক্ষাক্রম প্রণীত হয়েছিল। অতীতের পাঠদানের পদ্ধতিতে শিক্ষকের লেকচার বা বক্তৃতাদানের প্রাধান্য ছিল। সে ক্ষেত্রে শিক্ষাদানের ব্যাপারটি ছিল একমুখী। নতুন পদ্ধতিতে শুরুতে শিক্ষার্থীদের বিষয় উপস্থাপনের সুযোগ রাখা হয়, যাতে এর মাধ্যমে শিক্ষক তাঁদের জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা নিতে পারেন। শিক্ষকের পড়ানোর কাজটি এর পরে শুরু করার নির্দেশনা ছিল।

 মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও আনা হয় ব্যাপক পরিবর্তন। গ্রেড ও নম্বরের বদলে যোগ্যতার স্তরভিত্তিক মূল্যায়নব্যবস্থা চালু করা হয়। অভিভাবকদের সবচেয়ে আপত্তি ছিল এখানে। তাঁরা জোর দিয়ে বলেছেন, নম্বর ও গ্রেড না থাকার কারণে বুঝতে পারছেন না শিক্ষার্থীর পড়াশোনার অবস্থা কী। তবে সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল শিক্ষাক্রমকে অনুসরণ করে রচিত পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন কনটেন্ট বা উপকরণ নিয়ে। যেমন সমাজ বইয়ের ক্ষেত্রে অনেকেই বলেছেন, সেখানে বাংলাদেশের ইতিহাসকে একপেশে করে তুলে ধরা হয়েছে। বিজ্ঞান বইয়ের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট থেকে হুবহু অনুকরণের অভিযোগ ছিল। এ ছাড়া পাঠ্যবইয়ের বানান ও তথ্যগত প্রচুরসংখ্যক ভুল নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।

আরও পড়ুনশিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই: পরিমার্জন ও সংস্কারের আগে যা বিবেচনায় নিতে হবে১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে পাঠ্যবই প্রণীত হয়। বর্তমানে ২০২৫ ও ২০২৬ সালে প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত যেসব পাঠ্যবই পড়ানো হয়েছে কিংবা ছাপার কাজ চলছে, সেগুলো মূলত ২০১২ সালের শিক্ষাক্রম অনুসরণ করে রচিত। পুরোনো বই কিছু সংশোধন করেই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সংশোধন-পরিমার্জনসহ অন্যান্য কাজে এবারও এত বেশি সময় লেগেছে যে আগামী শিক্ষাবছরে যথাসময়ে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া সম্ভব হবে কি না, সে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

এখন যদি পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে ২০২৭ সালে নতুন পাঠ্যবই প্রণয়ন করতে হয়, তবে আরও আগে এর রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা হাজির করার দরকার ছিল। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার এ কাজে হাত না দিয়ে নতুন সরকারের ওপর দায়িত্ব বর্তাতে চায়। সে ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যে শিক্ষাক্রম প্রণয়ন এবং সেই ভিত্তিতে পাঠ্যক্রম রচনা ও প্রকাশের উদ্যোগ নিলে লেজেগোবরে অবস্থা হবে। তা ছাড়া এনসিটিবির চেয়ারম্যান ও সদস্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোও ২০২৪-এর জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে শূন্য থেকেছে। এর ফলে নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের কাজটিও গতিশীল হয়নি। সুতরাং ভালো পরিবর্তন চাইলে আরেকটু সময় নেওয়া উচিত। আর শিক্ষাক্রমের ব্যাপারটিই এমন, একসঙ্গে সব কটি শ্রেণিতে এর প্রয়োগ করা যায় না—নিচের ক্লাস থেকে ধীরে ধীরে ওপরে উঠতে হয়।

শিক্ষাকে যুগোপযোগী রাখার স্বার্থেই শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তকের বদল আনতে হবে। তবে যেকোনো কিছু নতুন করে প্রতিষ্ঠা করার কাজটি সব সময় সহজ হয় না। বিদ্যমান কাঠামোকে বিবেচনায় নিয়েই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো হবে।

তারিক মনজুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কম্বাইন্ড ডিগ্রি কারিকুলাম বিলম্বে উদ্বেগ বাকৃবিতে
  • ২০২৭ সালে কি নতুন শিক্ষাক্রম পাওয়া যাবে