মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করে প্রণীত খসড়া অধ্যাদেশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অংশীজন সভা স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে এ সভা স্থগিত করা হয়। আজ বুধবার সকাল ১১টায় মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ সভা হওয়ার কথা ছিল। 

জানা গেছে, অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন সভার বিষয়ে অবহিত নন। তাদের অনেকেই সভায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে যোগযোগ করেছেন। এমন পরিস্থিতি রাতে সভা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিদ্যামান আইন সংশোধন করে প্রণীত খসড়ায় রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের (সক্রিয়) পরিচিতি ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ রাখা হলেও অন্য সবার পরিচয় ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাদ দেওয়া হয়েছে মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবিত করা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানের বিষয়টিও। এছাড়া পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের ক্রমবিন্যাসও পুননির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খসড়া অধ্যাদেশের বিষয়ে ইমেইলের মাধ্যমে মতামত সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়। 

সূত্র জানায়, ২৬টি মতামত মন্ত্রণালয়ে জমা হয়েছে। এতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ করার প্রস্তাবকে ‘অপমানজনক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তাদের ভাষ্য, সরকার আইনের আলোকে অতীতে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ খসড়া অধ্যাদেশ বহালের পক্ষেও মত দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ১৬ ফেব্রুয়ারি অংশীজন সভা আহ্বান করে মন্ত্রণালয়। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ