প্রথমেই অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এ কারণে যে তারা জনমতের তোয়াক্কা করে। অতীতে রাজনৈতিক সরকারগুলো জনমতের তোয়াক্কা করেনি। সংবাদমাধ্যম থেকে নাগরিক সমাজ, বিরোধী দল থেকে বিদেশি কূটনীতিক—কে কী বললেন, তারা আমলে নেওয়ার প্রয়োজনবোধ করত না। সংবিধানের কাঠামোগত দুর্বলতার চেয়েও বড় বিপদ মানসিক স্বেচ্ছাচারিতা। যেই সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রে টমাস জেফারসনকে প্রেসিডেন্ট বানায়, সেই সংবিধানের ভিত্তিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রেসিডেন্ট হন। যেই সংবিধান ভারতে জওহরলাল নেহরুকে প্রধানমন্ত্রী বানায়, সেই সংবিধান বলে নরেন্দ্র মোদিও প্রধানমন্ত্রী হন। সংবিধানের গণতন্ত্রায়ণের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করছি না; কিন্তু সেই সংবিধান হেফাজতের দায়িত্ব কার হাতে, সেটি তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। 

অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে মোট ১১টি কমিশন গঠন করে, যার প্রতিবেদন অনেক আগেই পেশ করা হয়েছে; কিন্তু সংবিধান ও নির্বাচনসংক্রান্ত সংস্কার কমিশন ছাড়া অন্যগুলো তেমন আলোচনায় আসেনি। সরকারও এত দিন আগ্রহ দেখায়নি। কয়েকটি কমিশনের প্রধান এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে উষ্মাও প্রকাশ করেছেন। তঁারা প্রশ্ন তুলেছেন, সরকার যদি এসব সুপারিশ আমলেই না নেবে, তঁারা পণ্ডশ্রম করলেন কেন। 

দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের চৈতন্য ফিরে এসেছে। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ১০টি কমিশনের (সংবিধানসংক্রান্ত কমিশন ছাড়া) আরও ২৪৬টি সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৩৬৭টি সুপারিশ আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হলো। এর মধ্যে ৩৭টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ৩৬৭টি সুপারিশের মধ্যে মাত্র ৩৭টি বাস্তবায়িত হয়েছে, যা ১০ শতাংশের কম। 

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সুপারিশ বাস্তবায়নের ওপর আরও জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে; কিন্তু সরকারের হাতে তো খুব বেশি সময় নেই। মাত্র ছয় মাস। নির্বাচনী মাঠ তপ্ত হলে রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেদিকেই ঝাঁপিয়ে পড়বে। অন্য কোনো বিষয়ে তাদের মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ কমই থাকবে। 

রাজনৈতিক দলের নেতারা সভা–সেমিনারে যা–ই বলুন না কেন, ভেতরে–ভেতরে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধন করেছে। এতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় ‘সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী’ যুক্ত করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না। প্রস্তাবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন।

কাগজ–কলমে কী লেখা থাকল, তার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, এই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। সে জন্য প্রয়োজন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা। নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কেউ অন্যের অধিকার খর্ব করবে না, প্রতিটি দলকে এই ‘শপথ’ নিতে হবে। 

ইভিএমে ভোট নিয়ে বহু বছর ধরে বিতর্ক ছিল। বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ইভিএমের বিরুদ্ধে ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। ইসি ইভিএম বাতিল করে পুরোনো বিতর্ক ও বিপুল অর্থের অপচয় থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। বিদেশ থেকে আনা কোটি কোটি টাকার ইভিএম অকেজো অবস্থায় গুদামে পড়ে আছে। 

নির্বাচন কমিশনার মো.

সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, ‘না’ ভোটের বিধানটা হবে যদি কোথাও একজন প্রার্থী হন, তাহলে তিনি বিনা ভোটে নির্বাচিত হবেন না। সার্বিকভাবে ‘না’ ভোট নয়। যদি কোনো কনস্টিটিউয়েন্সিতে (আসন) মাত্র একজন ক্যান্ডিডেট (প্রার্থী) হন, তাঁকেও নির্বাচনে যেতে হবে। তাঁর বিপক্ষে ‘না’ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সেখানে যদি ‘না’ বিজিত হয়, তাহলে দ্বিতীয় ধাপে আর ভোট হবে না। তখন ব্যক্তি প্রার্থী নির্বাচিত বলে বিবেচিত হবে।

একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না’ ভোট চালুর এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে না। কেবল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার দায় এড়ানোর জন্য এটি হতে পারে না। না ভোট চালু করলে সব আসনেই করতে হবে। 

ইসির প্রস্তাবে যে দলের অনুদান ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া এবং দাতার আয়কর বিবরণীতে সেটি দেখানোর বিধান করার কথা বলা হয়েছে, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো সর্বক্ষেত্রে সরকার ও প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি চায়, সেখানে তাদের জবাবদিহি থাকবে না কেন? 

ইসির এসব প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যাবে। অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলে এগুলো আইনের অংশ হবে।

আরওপিও সংশোধনের পর ইসি নির্বাচনের রোডম্যাপ বা পথনকশা ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিগগিরই এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। রোডম্যাপ ঘোষণার পর সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক আলোচনা করবে ইসি। ইসিতে শতাধিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। আশা করি, এ বিষয়েও তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। অন্যথায় আবারও নির্বাচন কমিশনকে ঘেরাওয়ের মুখে পড়তে হতে পারে। 

নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজেও গতি এসেছে। কথা ছিল জুলাই সনদ জুলাইয়ের মধ্যে ঘোষণা হবে। কিন্তু সেটি হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আরও এক মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে। 

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ার অঙ্গীকার অংশে কিছু পরিবর্তন আনছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। নতুন সমন্বিত খসড়ায় জুলাই সনদকে বিশেষ মর্যাদা ও আইনি ভিত্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। 

খসড়ায় বলা হয়, জুলাই সনদের কোনো শব্দ, বাক্য ও নীতিমালা বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে, সে ক্ষেত্রে সনদই প্রাধান্য পাবে। সনদের বৈধতা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না।

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে বিতর্ক ছিল, আশা করা যায় শিগগিরই তার অবসান ঘটবে। খসড়ায় প্রথমে দুই বছরের মধ্যে পরবর্তী সংসদ বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছিল। এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ বেশির ভাগ দল এতে আপত্তি জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো নির্বাচিত সরকার তথা সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল যদি বাস্তবায়ন না করে, তখন কিছুই করার থাকবে না। 

মোটাদাগে জুলাই জাতীয় সনদের খসড়ায় তিনটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে আছে এই সনদের পটভূমি। দ্বিতীয় অংশে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার উল্লেখ রয়েছে। আর তৃতীয় অংশে থাকছে সনদ তথা সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার।

প্রথম দুই ধাপ নিয়ে তেমন বিরোধ না থাকলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি ও আইনি ভিত্তি নিয়েই বিতর্ক ছিল। কেউ কেউ নতুন সংবিধান সভা বা গণভোটের মাধ্যমে এটি অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার দাবি তুলেছিল। নির্বাচনের ঘোষিত সময়সীমার (ফেব্রুয়ারি ২০২৬) মধ্যে এর কোনোটি সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি তৈরি করতে হবে। 

তবে কাগজ–কলমে কী লেখা থাকল, তার ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, এই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না। সে জন্য প্রয়োজন নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা। নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কেউ অন্যের অধিকার খর্ব করবে না, প্রতিটি দলকে এই ‘শপথ’ নিতে হবে। 

আর যদি তারা অতীতের মতো জবরদস্তি, পেশি শক্তি, কালোটাকার ব্যবহার করতে থাকে, তাহলে প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী ইতিহাসের সেরা নির্বাচনের আশা দুরাশা হয়েই থেকে যাবে।  

সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি

[email protected]

* মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ প রস ত ব র প রস ত ই সনদ র দলগ ল র উপদ ষ ট সরক র র ঐকমত য র জন য ব তর ক খসড় য় প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট

জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে জাতির সঙ্গে প্রতারণা বলে আখ্যা দিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। এই ভাষণ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে দেশকে দীর্ঘস্থায়ী সংকটে ঠেলে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন তাঁরা।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে বাম জোটের নেতারা এমন মন্তব্য করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির (জাতীয় নাগরিক পার্টি) একমত হওয়াকেই যদি সবার ঐকমত্য বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে তা এত দিন ধরে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠককেই প্রশ্নবিদ্ধ করে।’

বাম জোটের নেতারা বলেন, সনদ বাস্তবায়নের জন্য ঐকমত্য কমিশন যে প্রস্তাব দিয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণেও একই কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে জনগণের প্রকৃত মতামত উঠে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের যে ন্যূনতম সংস্কারটুকু করার সুযোগ জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছিল, তা–ও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ১৮০ দিন জাতীয় সংসদ দ্বৈত সত্তা নিয়ে চলবে অর্থাৎ একই সঙ্গে সংসদ ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে কাজ করার যে কথা বলা হয়েছে; এটাও সংবিধান পরিপন্থী। এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনে কোনো আলোচনা হয়নি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও কোনো ঐকমত্য হয়নি।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ নিয়ে যে কথা প্রধান উপদেষ্টা ভাষণে বলেছেন, তা একদেশদর্শী ও সংবিধানসম্মত নয়। সংবিধানে আদেশ জারি বা গণভোটের কোনো বিধান নেই। রাষ্ট্রপতি কেবল অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করে সংবিধান পরিপন্থী কাজ করা হয়েছে।

বাম জোটের নেতারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে গণভোট ও আদেশ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে, তাতে দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের (দ্বিমতের) উল্লেখ থাকছে না। ঐকমত্য কমিশনে সংবিধানসংক্রান্ত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ৩০টিতে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেছেন—এ তথ্যও সঠিক নয়। ৩০টি প্রস্তাবে সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, এ রকম প্রস্তাব ১১টির বেশি নয়।

এ ছাড়া বিবৃতিতে লালদিয়ার চরে ডেনমার্কের কোম্পানিকে বন্দর নির্মাণ এবং পানগাঁও টার্মিনাল সুইজারল্যান্ডের কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের উদ্যোগে আগামী রোববার দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে তড়িঘড়ি করে কেন সরকার একের পর এক আমাদের লাভজনক বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে অতি তৎপর হয়ে উঠেছে, তা দেশবাসীর মনে গভীর সন্দেহ সৃষ্টি করছে। এ ধরনের প্রকল্পে ভূরাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক নানা ঝুঁকি থাকে। দেশের নানা মহল থেকে বারবার সেই আশঙ্কা ব্যক্ত করা হলেও সরকার সেদিকে কর্ণপাত না করে আগের স্বৈরাচার সরকারের বন্দর ইজারা দেওয়ার পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।’

বাম জোটের নেতাদের বিবৃতিতে উঠে আসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি। তাঁরা বলেন, মব সন্ত্রাস লাগামছাড়া, নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে, উগ্র মৌলবাদী তৎপরতা সমাজজীবনকে বিষিয়ে তুলছে, দিনদুপুরে ফিল্মি কায়দায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কারখানা বন্ধ হচ্ছে, শ্রমিক ছাঁটাই হচ্ছে, মানুষের বেঁচে থাকার উপায়ের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। আর এই সুযোগে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি নানা ধরনের গুপ্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে জনজীবনে এক চরম নিরাপত্তাহীন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। সরকারের গত ১৫ মাসের কর্মকাণ্ডই এই পতিত শক্তিকে জনপরিসরে স্থান করে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ বাম জোটের নেতাদের।

গণভোট ও উচ্চকক্ষ অপ্রয়োজনীয় এবং জাতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে—এমন শঙ্কার কথা জানিয়ে বাম জোটের নেতারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সংবিধান সংশোধনের এখতিয়ার কেবল একটি নির্বাচিত জাতীয় সংসদেরই। তাই কালবিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করুন। দেশের বন্দরসহ জাতীয় সম্পদ বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার এখতিয়ারবহির্ভূত কাজ থেকে বিরত থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলো প্রতিকারে উদ্যোগ নিন।’

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আবদুল আলীর পক্ষ থেকে বিবৃতিটি পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সফল নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক উত্তরণের অর্ধেকপথ পার করা সম্ভব হবে: মান্না
  • কী হবে যদি গণভোটে ‘না’ জয়ী হয়
  • প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ জাতির সঙ্গে প্রতারণা: বাম জোট
  • ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি রুখতে বামপন্থি সরকার গড়তে হবে: সেলিম
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে কোন দলের দাবি কতটা রাখা হলো