‘সরকার নদী বান্দি দিলে কবরটা নিজের জমিত হইল হয়’
Published: 18th, February 2025 GMT
‘তিস্তা নদী মোর বাড়িঘর, জমি, সাগাই (আত্মীয়), শোদর (সহোদর) সউগ (সব) কারি নিচ্ছে। মেলা আবাদি জমি আছিল আজার (রাজার) হালে খাচনো। বড় গুষ্টি আছিল। সগাইকে হারে ফ্যালাইছি। মানষের কাছোত হাত পাতি খাই। শুনছি, নদী বান্দে দেবে। এলা কি জমিগুলা ফিরে পামো বাহে।’
কথাগুলো বলছিলেন দড়িকিশোরপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব আবদুল হামিদ শেখ। ক্রাচে ভর দিয়ে তিস্তা বাঁচাও আন্দোলনের কর্মসূচিতে এসেছেন তিনি। চারবার ভাঙনের শিকার হামিদ শেখ চার ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে কোনো রকমে সরকারি খাসজমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর আশা, আন্দোলনে আসা লোকজন বুঝি নদী বেঁধে দেবে। ভাঙনে হারানো ঘর ফিরে পাবেন তিনি।
একই গ্রামের পঁচাত্তর বছর বয়সী মো.
আখের আলী বলেন, ‘আগে তো হামার জোদ্দারি আছিল। বাড়িত কত মানুষ থাকছিল। নদী ভাঙতে ভাঙতে সবকিছু শ্যাষ হয়া গেইছে। হামারা মানষের বাড়িত থাকি। নদী বাদার মিটিংর কথা শুনি কষ্ট করি আসনো বাবা। এবার সরকার নদী বান্দি দিবে। তাহলে মোর কবরটা নিজের জমিত হইল হয়।’
আবদুল হামিদ আর আখের আলীর মতো ঘরবাড়িহারা নারির খামারের আবদুল হামিদ (৭০), জোবেদা বেওয়া (৬৪), শুকারু শেখ (৫৫)সহ হাজারো মানুষ এসেছেন এ সমাবেশে।
শিক্ষার্থী বিউটি বেগম জানায়, তার বাপদাদার ভিটেমাটি সব নদী ছিনিয়ে নিয়েছে। তিস্তা নদী তাদের পরিচয় ও অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে। সরকার তিস্তা মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে সব ফিরে পাওয়ার আশা তার।
বিউটির পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন গোড়াই পিয়ার চরের কৃষক আবদুল মতিন। তিনি বলেন, চরগুলোতে খুব কষ্ট করে ফসল আবাদ করি। কখনও নদীভাঙন আবার কখনও বানের পানিতে সব শেষ হয়ে যায়। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে আমরা নদীকূলের মানুষ সুখে জীবনযাপন করতে পারব।
থেতরাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান সরকার বলেন, পরিকল্পিতভাবে নদীশাসন করতে পারলে নদীর দুই পারের হাজার হাজার হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আসবে। কয়েক হাজার পরিবার ফিরে পাবে হারানো ভিটেবাড়ি। সেই সঙ্গে শিল্পকারখানাসহ কৃষিভিত্তিক এগ্রোভেট নগরী গড়ে উঠবে।
থেতরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুর আমিন সরকার বলেন, নদীটি বাঁধলে তিস্তাপারের মানুষের জীবনমান সমৃদ্ধ হবে।
ব্যবসায়ী আক্তারুজ্জামান দিলীপ বলেন, নদীশাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এখানে ব্যবসায়িক প্রসার ঘটবে। ব্রিটিশ আমলের পানিয়ালের ঘাটটি আবার ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রে পরিণত হবে। চরের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ভালো দাম পাবেন কৃষক।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের উপজেলা সমন্বয়ক মো. হায়দার আলী মিয়া বলেন, তিস্তাপারের মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছে, আশা করি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, তিস্তা মহাপ্রকল্প বাস্তবায়িত হলে অবহেলিত জনপদের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে, ভালো দাম পাবেন কৃষক।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পাহাড়ে ভূমিধসের শঙ্কা
আজ শ্রাবণের ১৬ তারিখ। প্রকৃতির নিয়মে এ মাসে বৃষ্টি বেশি ঝরে। আজও ঢাকার আকাশ মেঘলা। বুধবার রাত থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কখনও ঝুম বৃষ্টি কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি। তবে সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উপকূলীয় ও পাহাড়ি এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রয়েছে ভূমিধসের ঝুঁকি।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অতিভারী বৃষ্টির কারণে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু এলাকায় সাময়িক জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াসহ বাস, রিকশা ও সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
বঙ্গোপসাগরে উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নদী ও সমুদ্রবন্দর এলাকায় অবস্থানরত নৌযানগুলোকে সাবধানতার সঙ্গে চলাচলের নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারা দেশে আজ দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শুক্রবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
শনিবারও সারা দেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে অধিকাংশ এলাকায় এবং অন্যান্য বিভাগে অনেক জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রবিবার রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা ও বরিশাল বিভাগে অনেক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বৃষ্টিপাত।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বর্ধিত পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার ৬৮ মিলিমিটার। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সৈয়দপুরে ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঢাকা/ইভা