আড়াই লাখ কোটি টাকার লেনদেন এস আলমের ব্যাংক হিসাবে
Published: 19th, February 2025 GMT
এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর ব্যাংক হিসাবে ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। সংস্থাটির সাত কর্মকর্তা গত এক মাসেও ১০টি কম্পিউটার ব্যবহার করে এস আলমের ওই লেনদেনের তথ্য চূড়ান্ত করতে পারেনি।
দেশের ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মানি লন্ডারিং ও কর ফাঁকি রোধবিষয়ক এক কর্মশালায় এনবিআরের শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান। আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে ‘মানি লন্ডারিং ও কর ফাঁকি রোধে পারস্পরিক সহযোগিতা’ শীর্ষক কর্মশালার আয়োজন করে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট।
কর্মশালায় সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব বলেন, ‘আমাদের কাছে একটি শিল্পগোষ্ঠীর ব্যাংক হিসাবে ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য আছে। সাতজন কর কর্মকর্তা এক মাসেও ১০টি কম্পিউটারে ওই লেনদেনের তথ্য এন্ট্রির কাজ শেষ করতে পারেননি। গত বছরের ৩০ জুন ওই শিল্পগোষ্ঠীর ব্যাংক হিসাবে স্থিতি ছিল ৩৬ হাজার কোটি টাকা। যার বিপরীতে সুদ পেয়েছেন ৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। অথচ এসব অর্থের বড় অংশই ওই শিল্পগোষ্ঠীর আয়কর নথিতে দেখানো হয়নি। এখন আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।’
কর্মশালা শেষে এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে আহসান হাবিব প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন, কর্মশালায় তিনি একটি শিল্পগোষ্ঠীর ব্যাংক লেনদেনের যে তথ্যের কথা বলেছেন, সেটি এস আলমের লেনদেনের তথ্য।
কর্মশালায় সন্দেহভাজন কর ফাঁকিবাজদের সম্পর্কে সঠিক ও দ্রুত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানান আহসান হাবিব। তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘অলিগার্করা আর ফিরে আসবে না। আপনারা ভুলে যান, কীভাবে চাকরি পেয়েছেন। আপনারা সন্দেহভাজন কর ফাঁকিবাজদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।’ কর্মশালায় এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কর ফাঁকির তথ্য দিতে কিছু ব্যাংক কর্মকর্তার গড়িমসিরও অভিযোগ করেন।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, এনবিআরের চাহিদা অনুসারে তথ্য দেওয়া ব্যাংকের আইনি দায়িত্ব। তথ্য না দিলে আইনে কঠোর হওয়ার কথা বলা আছে। সেটি হলে ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠান হিসেবে খেলাপি হয়ে যাবে। তখন ওই সব ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে।
অনুষ্ঠানে বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনার খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকের ব্যাংক হিসাব বিবরণী এনে দেখেছি, প্রতিদিন বিপুল অর্থ উত্তোলন হচ্ছে। কিন্তু কোথায় যাচ্ছে, জানি না। জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিতে পারেন না ব্যাংক কর্মকর্তারা।’
গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্তে নেমেছে এনবিআরের কেন্দ্রীয় কর গোয়েন্দা সেল। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী ও ব্যবসায়ীদের কর ফাঁকি খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন কর গোয়েন্দারা। ওই ব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে আছে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ছয়জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরো আটজনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।”
আরো পড়ুন:
সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত: আইএসপিআর
ঢামেক হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার
তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।”
বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ।”
তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল