বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর অবকাঠামো খাতের চেয়েও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলে আসছে। তবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) বরাদ্দে সেই প্রতিফলিত হচ্ছে না।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় যে বরাদ্দ ছিল, তা আরও কমানো হচ্ছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্যসেবায় বরাদ্দ নেমে আসছে প্রায় অর্ধেকে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় উন্নয়ন বাজেটে খাতভিত্তিক যে অগ্রাধিকার ছিল, মোটামুটি সেটিই বহাল রাখা হচ্ছে আরএডিপিতে। 

পরিকল্পনা কমিশনের চূড়ান্ত করা আরএডিপির খসড়ায় দেখা যায়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বরাদ্দ কমানো হচ্ছে ৫ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা। আরএডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে এ বিভাগের বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড.

সৈয়দ আব্দুল হামিদ মনে করেন, বাজেট কাটছাঁটের জন্য যত খারাপ পরিস্থিতিই থাকুক না কেন, স্বাস্থ্যের বরাদ্দে হাত দেওয়া উচিত নয়। সমকালকে তিনি আরও বলেন, জনস্বাস্থ্য নিয়ে কোনো সরকারই ভাবেনি। এ কারণে এই খাতের এমন দুরবস্থা। সবচেয়ে বড় কথা, জনসেবায় স্বাস্থ্য খাতকে সরকারের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তা না হলে এ খাত যে তিমেরে আছে, সে তিমেরেই থেকে যাবে। 

সংশোধিত এডিপিতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় বরাদ্দ কমানো হচ্ছে ৫৫৪ কোটি টাকা। বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা। একইভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণলায়ের বরাদ্দ কমানো হয়েছে ৬২০ কোটি টাকা। আরএডিপিতে এ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ দাঁড়াচ্ছে ১২ হাজার ১২৯ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে যা ছিল ১২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। 

সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরের আরএডিপি বরাদ্দ মূল এডিপির চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা কম। এতে চলতি অর্থবছর উন্নয়ন বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৬ কোটি টাকা। মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। সরকারি বরাদ্দ এবং উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া ঋণ– দুই উৎসেই বরাদ্দ কমানো হয়েছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় আরএডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। চলতি মাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় আরএডিপি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। 

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কতটা প্রয়োজনীয়–তা পর্যালোচনা করছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্প বাদ পড়েছে। আরও কিছু প্রকল্প বাদ পড়তে পারে। কয়েকটির কাজ আপাতত স্থগিত রয়েছে। কিছু প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হয়েছে। বরাদ্দ কমানোর পেছনে এ অর্থবছরের গত সাত মাসে এডিপি বাস্তবায়নে স্থবির পরিস্থিতিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।  পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, মূল এডিপির তুলনায় সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ অনেক কম চেয়েছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এডিপি ও আরএডিপিতে বরাদ্দ চাহিদার এত বেশি ব্যবধান আগে কখনও দেখা যায়নি।  

সূত্র মতে, বরাদ্দে অগ্রাধিকার খাত নির্ধারণে আরএডিপিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আগের মতোই সবচেয়ে বেশি রবাদ্দ রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্য। তবে কাটছাঁটে এ বিভাগের বরাদ্দ কমেছে ১ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। বরাদ্দে দ্বিতীয় অগ্রাধিকার খাত অক্ষুণ্ন থাকলেও বিদ্যুৎ বিভাগের বরাদ্দ কমেছে ১২ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এড প ব ভ গ র বর দ দ ১২ হ জ র প রকল প সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল বাবদ ৩২১ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের পুরো সময়ের প্রায় সমান। গত অর্থবছরে (২০২৩–২৪) মোট ৩৩৭ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মানে হলো, এবার প্রথম ৯ মাসেই গত অর্থবছরের কাছাকাছি ঋণ পরিশোধ হয়ে গেছে।

আজ বুধবার বিকেলে প্রকাশিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তৈরি জুলাই–মার্চ মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে। সেখানে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের এই তথ্য পাওয়া গেছে।

ইআরডির তথ্য অনুসারে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই–মার্চ) দেশে মোট প্রায় ৪৮১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি ঋণ এসেছে। এ সময়ে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়েছে অর্থছাড়ের প্রায় দুই–তৃতীয়াংশের সমান।

অন্যদিকে আলোচ্য ৯ মাসে বিদেশি ঋণ বাবদ পরিশোধের মধ্যে আসলের পরিমাণ ২০১ কোটি ডলার। আর সুদ বাবদ ১২০ কোটি ডলার পরিশোধ হয়েছে। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ২৫৭ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪ কোটি ডলার বেশি পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশ সরকারকে।

এদিকে গত জুলাই–মার্চ সময়ে ৩০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বিদেশি সহায়তার প্রতিশ্রুতি পেয়েছে বাংলাদেশ, যা গতবারের একই সময়ে পাওয়া প্রতিশ্রুতির অর্ধেকের কম। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে ৭২৪ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গিয়েছিল।

জুলাই–মার্চ সময়ে সবচেয়ে বেশি ১২২ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক ১০৭ কোটি ডলার ও জাপান ৮৯ কোটি ডলার দিয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিদেশি ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৪ শতাংশ
  • চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে বিদেশি ঋণ শোধ ৩০০ কোটি ডলার ছাড়াল
  • তৃতীয় প্রান্তিকে মুনাফা কমেছে স্কয়ার ফার্মার
  • ৯ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা
  • শিক্ষার মানোন্নয়নে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ প্রয়োজন
  • ২০২৭ সালের জুনের পর ‘করছাড়’ থাকবে না
  • ৯ মাসে ৪,৬০০ কোটি টাকার ব্যবসা ওয়ালটনের
  • যমুনা অয়েলের মুনাফা বেড়েছে ৩৮ শতাংশ