কচ্ছপগতির বাবরেই সর্বনাশ পাকিস্তানের—বলছেন আকরামরা
Published: 20th, February 2025 GMT
লক্ষ্য ৩২১ রান। প্রয়োজনীয় রান রেট ৬.৪২। এই রান তাড়া করে জিততে হলে প্রথম পাওয়ারপ্লে ভালোভাবে কাজে লাগাতে হতো। শুরু থেকে চালিয়ে খেলা সম্ভব না হলেও থিতু হওয়ার পরপরই প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর চড়াও হতে হতোই।
কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাকিস্তানের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা খেলেছেন ঘুমপাড়ানি ইনিংস। মিডল ও লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছেন দ্রুত রান তোলার সীমাহীন চাপ। তাতে পরিণতি যা হওয়ার তা–ই হয়েছে। করাচিতে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৬০ রানে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায়ের শঙ্কায় স্বাগতিক পাকিস্তান।
পাকিস্তানের হয়ে কাল টপ অর্ডারে ব্যাটিং করেছেন সৌদ শাকিল, বাবর আজম ও অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। শাকিল ও রিজওয়ান মিলে খেলেছেন ৩৩ বল, রান করেছেন মাত্র ৯।
বাবর অবশ্য ফিফটি করেছেন। কিন্তু তাঁর ৬৪ রান করতে লেগেছে ৯০ বল। ডট দিয়েছেন ৫২টি। অর্থাৎ ৫৭.
পাকিস্তানের প্রয়োজনীয় রান রেট যখন হু হু করে বাড়ছিল, তখন বাবরের এমন ব্যাটিং অনেকের কাছে স্বার্থপরের মতো লাগাই স্বাভাবিক। পাকিস্তান কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম, ভারতের সাবেক স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও সাবেক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ কাইফ স্বাগতিকদের বড় হারের পেছনে বাবরের মন্থর গতির ব্যাটিংয়ের দায় দেখছেন।
ইউটিউব চ্যানেল স্পোর্টস সেন্ট্রালের ম্যাচ–পরবর্তী বিশ্লেষণ অনুষ্ঠানে ওয়াসিম আকরাম বলেছেন, ‘ম্যাচ শুরুর আগে আমি বলেছিলাম বাবর আজম যেন রান রেট নিয়ে না ভাবে। সে যতটা সম্ভব সময় নিক এবং পাকিস্তানের ব্যাটিং তাকে ঘিরে আবর্তিত হোক। কিন্তু আমার তো মনে হয় সে কথাটা সিরিয়াসলি নিয়ে ফেলেছে এবং সেটাই করেছে। তাই বলে আমি ওকে এতগুলো ডট দিতে বলিনি।’
৬৯ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর সহ-অধিনায়ক আগা সালমানের সঙ্গে ৫৯ বলে ৫৮ রানের জুটি গড়েন বাবর। কিন্তু এই জুটিতেও তিনি ধীরলয়ে ব্যাটিং করেছেন। ফিফটি পূরণ করেছেন ৮১ বলে। কিন্তু পরিস্থিতির দাবি মিটিয়ে সালমান ঠিকই চালিয়ে খেলেছেন। ২৮ বলে করেছেন ৪২ রান।
বাবর ও সালমানের ইনিংস দুটির পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে রবিচন্দ্রন অশ্বিন কচ্ছপ ও খরগোশের দৌড় প্রতিযোগিতা নিয়ে ঈশপের রূপকথার গল্পকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।
২০১৩ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিজয়ী অশ্বিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘সালমান আলী আগার ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ফিফটির পথে বাবরের যাত্রা যেন কচ্ছপ ও খরগোশের গল্পের সেরা চিত্রায়ণ।’
২০০২ সালে ভারতের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিজয়ী দলের সদস্য মোহাম্মদ কাইফের কাছে বাবরের ব্যাটিং সেকেলে মনে হয়েছে, ‘বাবর এখনো ৮০-এর দশকের ওয়ানডে ক্রিকেট খেলছে। অনিয়মিত স্পিনারদের বিপক্ষে মাত্র দুটি বাউন্ডারি মেরেছে, মাঝের ওভারগুলোতেও অল্প রান এসেছে। এটা (এ ধরনের ব্যাটিং) আধুনিক ক্রিকেটে কোনো কাজে আসে না।’
এ ছাড়া ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ‘ওয়ান ক্রিকেট’-এর সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, ‘১৯৯৬ সালের পর পাকিস্তানে প্রথম আইসিসির ইভেন্ট। কিন্তু বাবর আজম ও ফখর জামানের স্ট্রাইক রেট অতীতের (সেই সময়ের) ব্যাটারদের চেয়ে খারাপ।’
পাকিস্তানের পরের ম্যাচ আগামী রোববার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে। ভারত আজ বাংলাদেশকে হারালে দুবাইয়ের ওই ম্যাচটি পাকিস্তানের জন্য একরকম নকআউট ম্যাচ হয়ে যাবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ছয়জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরো আটজনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।”
আরো পড়ুন:
সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত: আইএসপিআর
ঢামেক হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার
তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।”
বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ।”
তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল