মুম রহমান গল্পকার, ঔপন্যাসিক। অনুবাদক হিসেবে তার আলাদা পরিচিতি রয়েছে পাঠক সমাজে। পাশাপাশি তিনি শিল্প সমালোচক, নাট্যকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। গদ্যকার হিসেবে গণমাধ্যম সম্পাদকদের কাছেও তিনি সমাদৃত। প্রকাশিত গ্রন্থ ৫০-এর অধিক। শিক্ষকতা, বিজ্ঞাপন কর্মকর্তা, সাংবাদিকতা, এনজিও ইত্যাদি নানা পেশা ছেড়ে বর্তমানে পূর্ণকালীন লেখক। একুশে বইমেলাকে কেন্দ্র করে অনুবাদ প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন অলাত এহ্‌সান। 

অলাত এহ্‌সান: দেশে অনূদিত বইয়ের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনুবাদক হিসেবে আপনি কী বলেন? 

মুম রহমান: আমার অভিজ্ঞতা আপনাদের মতোই। আমিও লক্ষ্য করেছি, অনুবাদ হওয়া বই সংখ্যায় বাড়ছে এবং সেইসব বইয়ের প্রতি পাঠক, সমালোচক, প্রকাশক এবং ক্রেতা-বিক্রেতার আগ্রহ বাড়ছে।

আরো পড়ুন:

একুশে ফেব্রুয়ারি বইমেলা শুরু হবে সকাল ৭টায়

‘অনুমতি ছাড়া অনূদিত বই প্রকাশ সম্পূর্ণ অবৈধ’ 

অলাত এহ্‌সান: এ প্রসঙ্গে যে প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো- বইগুলোর অনুবাদ স্বত্ব। আমাদের এখানে অধিকাংশ অনূদিত বইয়ের অনুবাদ স্বত্ব নেয়া হয় না। এর কারণ কী বলে মনে করেন?

মুম রহমান: এর প্রথম কারণ অনেকটাই অর্থনৈতিক। এটা তো স্বীকার করতে হবে আমাদের দেশে একটা বই ছাপা হয় ৩০০ থেকে ৫০০ কপি। সব কপিও এক বছরে বিক্রি হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। এ ক্ষেত্রে বই ছাপানোর খরচ, অনুবাদকের পারিশ্রমিক দিয়ে প্রকাশককে লাভের মুখ দেখতে বেগ পেতে হয়। আদতে প্রকাশনা ব্যাপারটা এ দেশে এখনও বুটিক ইন্ডাস্ট্রি বা কুটিরশিল্প পর্যায়ে রয়ে গেছে। যেসব বই আমরা অনুবাদ করি, মূল ভাষায় বা ইংরেজিতে তা ছাপা হয় লাখ লাখ কপি। ফলে সেখান থেকে লেখক, প্রকাশক একটা বড় অঙ্কের আর্থিক সাফল্য আশা করতে পারেন। সচরাচর দেখা যায়, আমরা খুব আলোচিত বইগুলোই অনুবাদ করি। এইসব বইয়ের বৈশ্বিক বাজার বিশাল। কিন্তু বাংলাদেশে সেই বই ৫০০ বা বড় জোর ১০০০ কপি বিক্রি হতে পারে। এখন ১০০০ বই প্রকাশ করতে ১ বছরে ধরে নিন ১ লাখ টাকা লগ্নি করলেন, তাতে বছর শেষে কতো টাকাই-বা উঠে আসতে পারে? 

দ্বিতীয়ত আমাদের প্রকাশনা যেহেতু এখন বিশ্ব প্রকাশনার সঙ্গে সংযুক্ত নয়, আমাদের প্রকাশনা এখনও বড় মাপের ব্যবসায়িক পূঁজির নয়, সেহেতু বাইরের বইয়ের স্বত্ব কেনাটা চাইলেও সহজ নয়। ধরুন আমি বা আপনি সদ্য নোবেলজয়ী কোনো লেখকের বই অনুবাদ করতে চাই এবং কপিরাইট নিয়েই; তাহলেও কিন্তু ব্যাপারটা কঠিন। বিশ্বে বই প্রকাশনা পেশাদার এজেন্ট নির্ভর। সেই এজেন্টদের সঙ্গে আমাদের সংযোগ নেই। আর একজন সদ্য নোবেল লরিয়েটের কাছে পৌঁছানো, তার বইয়ের অনুবাদ স্বত্ব কেনা মোটেও সহজ নয়। আমি এখনও বাংলাদেশে দেখিনি, শুনিনি যে নোবেলজয়ী কোনো লেখকের অনুমতিসাপেক্ষে তার অনুবাদ দেশে প্রকাশিত হয়েছে। 

অলাত এহ্‌সান: অনুবাদ স্বত্ব না কেনায় আমাদের অনুবাদকেরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাচ্ছেন না। এমনকি উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, কলকাতায় কিছু বই অনুবাদ হয়, পাঠক সমাদর পায় এই কারণে। তাতে আমরা কি পিছিয়ে পড়ছি না? 

মুম রহমান: পিছিয়ে তো পড়েছি। সবচেয়ে বড় কথা, পাঠক হিসেবেই আমরা পিছিয়ে আছি। তারপর প্রকাশক, আন্তর্জাতিক অনুবাদ সংগঠকদের সঙ্গে যোগাযোগেও আমরা পিছিয়ে আছি। আর এই পিছিয়ে থাকার মূল কথাটা অর্থনৈতিক। এর ব্যাখ্যা আমি একটু আগেই দিয়েছি। যেখানে বই মূদ্রিত হয় ৫০০ কপি সেখানে অনুবাদককে যদি ১৫% রয়্যালটি দেন আর মূল লেখক বা যিনি অনুবাদ করেছেন তাকে যদি ১৫% দেন তাতে বইয়ের দাম হয়ে যাবে অনেক। তাছাড়া আপনি একজন বিদেশি লেখককে কতো টাকা দেবেন? আমরা একটা ভালো বিক্রি হওয়া বই থেকে সারা বছরে হয়তো ১০ হাজার টাকা রয়্যালটি পাই, ডলার বা পাউন্ডে তার পরিমাণ কতো? এখন একজন নোবেল লরিয়েট কিংবা বেস্ট সেলার লেখককে কি আপনি ২০০ বা ৪০০ ডলার বা পাউন্ডে সম্মানী দেবেন? ওটা তো ওদের কাছে খুচরো টাকার মতো। না হয় আপনি দিলেন, কিন্তু আপনি এ দেশের মার্কেট থেকে টাকা উঠিয়ে আনবেন কীভাবে? আপনি তো হাজার হাজার পাঠক, ক্রেতা তৈরি করতে পারেননি। 

অলাত এহ্‌সান: দেশে একটা বইয়ের পাঁচ-সাতটা পর্যন্ত অনুবাদ হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পাঠক কোনটা বেছে নেবেন? অনুবাদ স্বত্ব নিলে এমনটা হতো না। অনুবাদের মান নিয়েও কিছু বলার থাকত না।  

মুম রহমান: মান নির্ধারণ কে করবে? পাঠক তো? তো সেটা পাঠকই ঠিক করে নেবে, কোন অনুবাদটার মান কেমন? সে কার বই কিনে পড়বে। পাঠক হিসেবে আপনি-আমিও মতামত দিতে পারি, প্রচার করতে পারি অনুবাদের মান নিয়ে। আসলে যে কোনো দেশের যে কোনো ভাষার সাহিত্যিকের ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পাই পুরস্কার পাওয়ামাত্র তার বই অনূদিত হচ্ছে, ছাপা হচ্ছে। এটা বাণিজ্যিক কারণেই হয়। বাজারে যার চাহিদা আছে তার সাপ্লাই সবাই দিতে চায়। 

অলাত এহ্‌সান: অনুবাদ বইয়ের প্রকাশনা এখন বিকাশমান একটা ক্ষেত্রে। কিন্তু মানহীন প্রকাশনার কারণে পাঠক নিজেদের প্রতারিত বোধ করে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। তাহলে প্রকাশনাও মুখ থুবড়ে পড়তে পারে। আবার প্রকাশনীগুলোতে এখনো অনুবাদ বইয়ের পাণ্ডুলিপি দেখার মতো দুই ভাষাতেই দক্ষ ব্যক্তি কম। তাহলে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

মুম রহমান: আপনার নিশ্চয়ই ধারণা থাকার কথা এ দেশের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে। তারা লেখকের রয়্যালটি দিতেই গড়িমসি করে, দামাদামি করে, সেখানে আপনি আশা করতে পারেন না যে একেকটা প্রকাশনীতে অনুবাদ বইয়ের পাণ্ডুলিপি দেখার জন্য একেক ভাষার বিশেষজ্ঞ রাখবেন তারা। এটা অর্থনৈতিকভাবেও সম্ভব না, চিন্তাটাও অবাস্তব। এমন তো নয় যে আমাদের দেশে হাজার হাজার ড.

মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পয়দা হয়েছেন। এক সময় বলতো- যার হয় যক্ষা তার নাই রক্ষা। এখন যক্ষা কোনো রোগই না। আমাদের প্রকাশনার ক্ষেত্রে আপনি রক্ষা পাওয়ার যে প্রশ্ন তুলছেন তা একদিন আপোষেই উত্তর পেয়ে যাবেন। সহজ কথাটা হলো, আপনার বাজারে ক্রেতা থাকলে পণ্য আসবেই। বইকে যদি পণ্য ধরেন, আর পর্যাপ্ত বইয়ের ক্রেতা যদি থাকে তাহলে নানা দেশ থেকে নানা ভাষার অনুবাদক, বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসা যাবে। প্রকাশনাশিল্প রক্ষার একমাত্র উপায় পাঠক বৃদ্ধি করা। মানহীন হলে তা এমনিতেও টিকবে না। মানসম্মত অনুবাদ হলে এবং তার পর্যাপ্ত বাজার চাহিদা হলে প্রকাশকরা লগ্নি করবেন। তাতে পাঠক, প্রকাশক কেউই ঠকবেন না। 

অলাত এহ্‌সান: দেশে বই প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখক-প্রকাশক চুক্তি খুব একটা গুরুত্ব পায় না। অনুবাদের ক্ষেত্রেও কথাটা বলা যায়। অনেক ক্ষেত্রে অদক্ষ কাউকে দিয়ে, আবার ‘গুগল ট্রান্সলেট’ বলেও শোনা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রকাশকের ভূমিকা কেমন হওয়া দরকার মনে করেন?

মুম রহমান: প্রথমত প্রকাশককে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি সচেতন হতে হবে। আমাদের প্রকাশনায় জড়িত একটা বিরাট জনগোষ্ঠীর কিন্তু শিল্পসাহিত্য জ্ঞান নেই। প্রকাশকের কাজ তো বই ছাপা না। ভালো প্রোডাকশন, ভালো ছাপাখানা, ভালো কাগজ, চকচকে প্রচ্ছদ একটা বইকে ভালো চেহারা দেয়, কিন্তু বইয়ের ভেতরের খবর রাখাটা হলো প্রকাশকের আসল কাজ। সঠিক পাণ্ডুলিপি নির্বাচন করা প্রকাশকের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। ‘গুগল ট্রান্সলেট’ যদি কোন প্রকাশক ছেপেও থাকেন তাকে আমি প্রকাশক বলবো না, মূদ্রাকর বা বই ছাপা-বাঁধাইয়ের লোক বলবো।  

অলাত এহ্‌সান: অনুবাদগ্রন্থে একটা বিশেষ দিক চোখে পড়ছে, প্রবাসী অনেকে অনুবাদ করছেন। এটা দারুণ! কিন্তু যে আলাপটা নানাভাবে সামনে আসছে— প্রকাশকরা তাদের বই প্রকাশে খুশি হচ্ছেন দুই কারণে— ১. অনুবাদ বইয়ের বিক্রি ও ২. অনুবাদকের সম্মানী এড়ানোর সুযোগ। আপনি কী বলবেন? 

মুম রহমান: আপনার কথার সঙ্গে আমি এটুকু যোগ করবো, ভাষা জ্ঞান আর সাহিত্য জ্ঞান এক না। শিক্ষিত হলেই সাহিত্যিক হওয়া যায় না। আবার দুটো ভাষা জানলেই এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় অনুবাদ করা যায় না। অনুবাদ আসলে কেবল শব্দার্থ ধরে এগিয়ে যাওয়া নয়, বরং এটা আরো অনেক বেশি গভীরতর সাংস্কৃতিক, শৈল্পিক কর্মকাণ্ড। আপনি পোলান্ডে থাকলেন, সেখানে বিয়ে করলেন, সংসার পাতলেন, বাচ্চা-কাচ্চা হলো এবং আপনি ও আপনার শিশুরা অনুবাদ শুরু করে দিলেন, পোলিশ থেকে বাংলায় বা বাংলা থেকে পোলিশে— সেক্ষেত্রেও কিন্তু গ্যারান্টি দেয়া যায় না যে আপনি ও আপনার পরের প্রজন্ম ভালো অনুবাদক হবে। 

একটা জায়গায় বা সংস্কৃতি বলয়ে থাকলে হয়তো কিছু সুবিধা হয়, কিন্তু সবার আগে তো নিজের মাতৃভাষা; মা, মাটিকে চিনতে হয়। শেকড় মজবুত হতে হবে, নইলে গাছ টিকবে না। এরপর অনুবাদক হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট লেখক এবং সেই লেখকের প্রতি একান্ত আনুগত্য, প্রেম থাকা জরুরি। বইয়ের বিক্রি আর সম্মানী এড়ানোর ফায়দাটা তো প্রকাশক দেখেনই, সেটা শুধু অনুবাদ নয়, মৌলিক বইয়ের ক্ষেত্রেও। বাংলাবাজারে কারো কারো মুখে শুনেছি প্রবাসী লেখক ধরার জন্য নাকি এক শ্রেণীর প্রকাশক আছে যাদেরকে বলা হয় ‘মুরগি ধরা লেখক’। মানে এই লেখকদের অগল্প, অকিবতা, অপন্যাস বা অপঅনুবাদ প্রকাশকরা ছাপছেন লেখকদের কাছ থেকে ডলার নিয়ে কিংবা লেখকের আমন্ত্রণে বিদেশ ভ্রমণ করে। কিন্তু এগুলো খুবই খণ্ডচিত্র। এসব কখনো মূলধারা প্রকাশকরা করেন না। আপনি খাদ্য, ওষুধ, দরকারি পণ্য ব্যবসাতেও তো অসততা দেখেন, প্রকাশনায় কি থাকবে না? তারা আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুর লোক নন। উপরন্তু প্রবাসেও আমাদের অনেক বড় বড় লেখক আছেন। কাজেই ঢালাওভাবে সব কিছুকে খারাপ বলা যায় না। 

অলাত এহ্‌সান: প্রকাশনা ও লেখালেখির ক্ষেত্রে একটা বিরাট ঝুঁকি হয়ে গেছে বই পাইরেসি। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা দেখি না।

মুম রহমান: আপনার ধারণা নেই, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কী পরিমাণ শ্রম দিতে হয়। একটা বিশৃঙ্খলতার মধ্যে আমরা আছি। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি, চুরিসহ নিত্যনতুন উপায়ে অপরাধ হচ্ছে দেশে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো স্বভাবতই বড় বড় অপরাধ আর অন্যায় রোধেই ব্যস্ত থাকবে। বইয়ের পাইরেসি, সিনেমার পাইরেসি নিয়ে কাজ করতে গেলে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিসর আরো বড় করতে হবে। এ বিষয়ে আরো বিশেষজ্ঞ লোক নিয়োগ দিতে হবে। আগে তো ভাত, ডাল খাবো, পরে না হয় সালাদের কথা ভাববো। দেশে নানা ক্ষেত্রেই আগে নিরাপত্ত আসা জরুরি, তারপর না হয় বইয়ের কথা আসবে। 

তারা//

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বইম ল বই ম ম রহম ন বইয় র প বই ছ প অন দ ত আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 

ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”

এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি। 

গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।

কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”

ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”

এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”

ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”

এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”

জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”

বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”

উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।

তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সারা দেশে সাত দিনে যৌথ বাহিনীর অভিযানে আটক ২৮৮
  • জুলাইয়ে মব তৈরি করে ১৬ জনকে হত্যা, অজ্ঞাতনামা ৫১ লাশ উদ্ধার
  • শৈলকুপায় ইউপি কার্যালয়ে তালা, বিএনপি নেতাসহ আটক ৬
  • ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেয়ায় বিএনপি নেতা আটক
  • গোপালগঞ্জে এনসিপির অনেকের জীবননাশের হুমকি ছিল, আত্মরক্ষার্থে বলপ্রয়োগ করা হয়েছে
  • ‘ভূমিকম্পে ছিন্নভিন্ন হওয়া দেশকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার’
  • ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা 
  • কক্সবাজারে ৩৫ পুলিশ সদস্যের পোশাকে থাকবে ‘বডি ওর্ন ক্যামেরা’
  • ২৯ জুলাই-৮ আগস্ট ‘ফ্যাসিবাদী শক্তির’ নৈরাজ্যের আশঙ্কায় এসবির সতর্কতা
  • ২৯ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট সময়কালে ফ্যাসিবাদী শক্তি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে, এসবির প্রতিবেদন