Prothomalo:
2025-09-18@04:58:04 GMT

নবীজি (সা.)-এর হাসি

Published: 22nd, February 2025 GMT

হাসি ও আনন্দ মানুষের ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে দেয়। নবীজির (সা.)হাসিখুশির ভঙ্গিও ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বের খুবই জরুরি অনুষঙ্গ। এ সম্পর্কিত হাদিসগুলো খণ্ডিত হলেও একেবারে অপ্রতুল নয়।

মহানবী (সা.)-এর আনন্দ তাঁর চেহারায় প্রকাশ পেতো। সাহাবিদের অনেকেই তাঁর আনন্দের টুকরো টুকরো ছবি তুলে ধরেছেন।

 আনন্দের প্রকাশ

মহানবী (সা.

)-এর আনন্দ প্রকাশের ধরন নিয়ে দুটি ঘটনার উল্লেখ করা যায়।

সিরাত পাঠকমাত্রই কাব ইবনে মালেকের (রা.) ঘটনা সম্পর্কে জানেন। তাবুক যুদ্ধে শরিক না থাকায় তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। পরে যখন আল্লাহ তাঁর তাওবা কবুল করেন। সে সময়ে নবীজির অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি নিজেই বলেছেন, আমি নবীজিকে সালাম দিলাম, আনন্দে তাঁর চেহারা ঝলমল করছিল। তিনি বললেন, ইতোমধ্যে তোমার কেটে যাওয়া জীবনের ওপর সুসংবাদ গ্রহণ করো...। (বুখারি, হাদিস: ৪৪১৮)

কাব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আনন্দিত হলে তাঁর চেহারা এমন আলোকিত হয় মনে হয় যেন এক টুকরো দীপ্তিমান চাঁদ। দেখামাত্রই আমরা তাঁর আনন্দ বুঝতে পারতাম। (বুখারি, হাদিস: ৪১৪১)

ইফকের ঘটনার পরে আয়েশা (রা.) নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময় নবীজির এমন আনন্দমুখ দেখতে পাওয়া যায়। আয়েশা (রা.) বলেছেন, কুরআন অবতীর্ণ হলে তিনি মাথা তুললেন। তাঁর চেহারায় আনন্দ উথলে উঠতে দেখলাম। তিনি হাত দিয়ে নিজের কপালের ঘাম মুছে বললেন, আয়েশা, সুসংবাদ গ্রহণ করো। আল্লাহ তোমার নির্দোষ হওয়ার ব্যাপারে আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ৬০৯২)

আরও পড়ুনসুরা ওয়াকিয়ায় কেয়ামত সম্পর্কে জানা যায়০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মুচকি হাসি

নবীজি (সা.)–কে আল্লাহ অসামান্য প্রভাব বিস্তার করার যে ক্ষমতা দান করেছিলেন, সেটির সঙ্গে তাঁর হাসি ছিল সামঞ্জস্যপূর্ণ। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে কখনো এমনভাবে হাসতে দেখিনি যাতে তাঁর মুখের আলজিভ দেখা যায়। তিনি বরং সবসময় মুচকি হাসতেন। (মুসলিম, হাদিস: ৪১৯)

অর্থাৎ, তিনি সংযম রেখে হাসতেন। নবী-জীবনের শেষ একটি মুহূর্তের বিবরণ তুলে ধরে আনাস (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) তাঁর কক্ষের পর্দা সরালেন। তারপর সাহাবিদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তারা নামাজ পড়ছে। তার চেহারা মনে হলো যেন বইয়ের সাদা পাতার মতো। তিনি মুচকি হাসলেন। (মুসলিম, হাদিস: ২৩২২)

নবীজির(সা.) সঙ্গে সাহাবিদের মজলিসের চিত্র বর্ণনা করতে গিয়ে জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, সাহাবিরা জাহেলি যুগের আলোচনা করে সশব্দে হাসতেন। কিন্তু রাসুল (সা.) কেবল মৃদু হাসতেন। (বুখারি, হাদিস: ১৯৩৬)

এই বর্ণনা থেকে জানা যায়, বিরোধী পক্ষের সমালোচনার সময়ও নবীজি (সা.) তাঁর সংযম হারাতেন না।

আরও পড়ুননফল দুই রাকাত নামাজের উৎস মৃত্যুর মুখে এক বন্দি সাহাবি০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

হাসিতে দাঁত দেখতে পাওয়া

হাসার সময় রাসুল (সা.)–এর দু পাশের দাঁত প্রকাশ পেত না বলেই জানা যায়।

একটি ঘটনায় দেখা যায়, রমজান মাসে এক ব্যক্তি স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.)তাঁকে এক ঝুড়ি খেজুর দিয়ে বললেন, এগুলো সদকা করে দাও। সে বলল, আমার চেয়ে গরিব কাউকে দেব? খোদার কসম, মদিনায় আমার চেয়ে গরিব কোনো পরিবার নেই। শুনে রাসুল (সা.) এমনভাবে হেসে দিলেন যে, তার দু পাশের দাঁত দেখা গেল। (জাদুল মায়াদ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১৮২)

এই হাদিসে হাসির বর্ণনা থেকে অনুমান করা যায়, হাসলে সাধারণত নবীজির (সা.) দু পাশের দাঁত দেখা যেত না।

হাসির বৈশিষ্ট্য

ইবনুল কাইয়িম (র.) বলেন, নবীজির (সা.)হাসি ছিলো মুচকি হাসি। তিনি সাধারণভাবেই মৃদু হাসতেন। হাসিতে দুই পাশের দাঁত দেখার ঘটনা ছিল স্বল্প। তিনি কেবল মুগ্ধ হলেই হাসতেন। নবীজির (সা.)অট্টহাসি দেওয়ার কোনো বর্ণনা কোথাও পাওয়া যায় না। (ফাতহুল বারী, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৫০৪)

নবীজি (সা.)সবসময় হাস্যোজ্জ্বল চেহারা ও প্রশস্ত হৃদয় নিয়ে মানুষকে স্বাগত জানাতেন। এমনকি এ কারণে প্রত্যেক সাহাবি ভাবতেন, তিনিই নবীজির (সা.)সবচেয়ে প্রিয়। জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ইসলাম গ্রহণের পর যখনই আমি তার কাছে যেতাম, তিনি আমাকে দেখলেই তিনি চেহারায় মুচকি হাসি ছড়িয়ে দিতেন। (বুখারি, হাদিস: ৩০৩৫)

আবদুল্লাহ ইবনে হারিস (রা.) বলেছেন, আমি কাউকে নবীজির (সা.)চেয়ে বেশি হাসিখুশি দেখিনি। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৮২১)

আরও পড়ুনকবর জিয়ারতে কী করব, কী করব না০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩

হাসির নির্দেশনা

হাসিমুখে কথা বলা কেবল সামাজিক শিষ্টাচারই নয়, এর বিনিময়ে মুসলমানের জন্য সওয়াবও রয়েছে। আবু যর (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) আমাকে বলেছেন, কোনো সৎকাজকে তুচ্ছ মনে কোরো না, যদি তা তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাতের মতো বিষয়ও হয়ে থাকে। তোমার ভাইয়ের সামনে তোমার মুচকি হাসিও সদকা। (মুসলিম, হাদিস: ২৬২৬)

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, নবীজি (সা.)বলেছেন, সকল নেক কাজ সদকা। তোমার কোনো ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও একটি নেক কাজ। (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৫৬)

মানুষ মাঝেমধ্যে কারণ ছাড়াও হাসে। নবীজি (সা.) অকারণে অধিক হাসতে নিরুৎসাহিত করেছেন। আবু হোরায়রা (রা.)–র বর্ণনা থেকে জানা যায়, নবীজি (সা.) বলেছেন, তোমরা বেশি হেসো না। কেননা, বেশি হাসি অন্তরকে নির্জীব করে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৭০)

আরও পড়ুনধৈর্য কাকে বলে০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প ট ম বর র আনন দ বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ