আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার সময় চট্টগ্রামে ৫ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে দায়ের হয় দুর্নীতি মামলা। এর মধ্যে শুধু আসলাম চৌধুরী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধেই হয়েছে তিনটি মামলা। বাকি দুটির মধ্যে একটি আনোয়ারার সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম ও তাঁর স্ত্রী নাজনিন নিজামের বিরুদ্ধে এবং অপরটি দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতা আলী আব্বাসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা। তিনটি মামলায় চার্জশিট হওয়ার পর এখন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ আদালতে বিচারাধীন। আসলাম চৌধুরীর সম্পদের মামলাটি দুদক ঢাকা থেকে তদন্ত চলমান। সরওয়ার জামাল নিজামের মামলাটি দুদক চট্টগ্রামে তদন্তাধীন রয়েছে। জামায়াতের চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামশুল ইসলামের বিরুদ্ধে আইআইইউসির অর্থ আত্মসাৎ অভিযোগের অনুসন্ধান ও মামলা করার সুপারিশ ঝুলে গেছে।
কিন্তু ৫ আগস্টের পর সরওয়ার জামান নিজামের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলাটি দুদক ঢাকা থেকে অধিকতর তদন্ত করার জন্য ফেরত পাঠায় চট্টগ্রামে। ২০০৮ সালের ২৮ ফেরুয়ারি দায়ের হওয়া মামলাটি এখন অধিকতর তদন্ত চলছে। যদিও তদন্ত শেষ করে ২০২৪ সালের ৩০ জুন মামলার সাক্ষ্য স্মারক দুদক ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তা গ্রহণ না করে ১২ সেপ্টেম্বর নথি ফেরত পাঠানো হয়। সাক্ষ্য-স্মারকে সরওয়ার জামান নিজাম ও তাঁর স্ত্রী নাজনিন নিজামের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯৩ লাখ ৫১ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পায় দুদক। এর বাইরে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা লায়ন আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে দুদক। গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২-এ মামলাটি হয়। এতে ১৫ কোটি ২৬ লাখ ৯২ হাজার ৪১৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক খাতের দুর্নীতির অভিযোগে আসলাম চৌধুরী, আমজাদ হোসেন চৌধুরী, জামিলা নাজনিল মাওলা, জসিম উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা আদালতে বিচারাধীন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মেসার্স আব্বাস ট্রেডিংয়ের মালিক আলী আব্বাসের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার বিচার চলছে আদালতে। 
অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) থেকে ১৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সীতাকুণ্ড থানায় জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য আ ন ম শামসুল ইসলামসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ জমা পড়ে দূদকেও। প্রাথমিক অনুসন্ধানে নেমে প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক। ৫ আগস্টের আগে ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থ লোপাটের ঘটনায় দুর্নীতি মামলা দায়ের করার অনুমতি চেয়ে চট্টগ্রাম থেকে সুপারিশ পাঠানো হয় ঢাকার দূদক কার্যালয়ে। কিন্তু আগস্টের পটপরিবর্তনের পর দুদক কমিশনে পরিবর্তন আসে। ঢাকার নতুন কমিশন আইইউউউসি’র ঘটনায় পাঠানো মামলার সুপারিশ ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে ফেরত পাঠায় চট্টগ্রাম অফিসে। বিল-ভাউচার আরো ভালো করে যাচাই বাছাই করার পরামর্শ দেয় কমিশন। সেই আলোকে দুদক চট্টগ্রামের অনুসন্ধা নতুন করে ফের করা হচ্ছে।
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপ-পরিচালক মো.

নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ‘আইইউইউসি’র অর্থ লোপাটের প্রাথমিক অনুসন্ধান করে মামলা করার সুপারিশ করে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছিল। কমিশন যে বিল-ভাউচারের আলোকে অর্থ আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে তা আরো যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই আলোকে কাজ করছেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা। এছাড়া আসলাম চৌধুরী, আলী আব্বাসের মামলা এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।’
দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক মো. আতিকুর আলম বলেন, ‘আসলাম চৌধুরী জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের মামলাটি চট্টগ্রাম কার্যালয়ে রেকর্ড হলেও মামলাটির তদন্ত হচ্ছে ঢাকার কার্যালয় থেকে। তাই এটির সর্বশেষ কী অবস্থায় আছে তা জানা নেই।’
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আসল ম চ ধ র সরওয় র জ ম তদন ত ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

যমুনা সেতুর যানজট এড়াতে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে যানবাহনের চাপ

ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতি পথে যমুনা সেতু-সংলগ্ন মহাসড়কে তীব্র যানজট। তাই অনেকে পাবনার কাজীরহাট ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। কাজীরহাট-আরিচা ফেরিঘাটে ভোগান্তি ছাড়াই যানবাহন পারাপার হচ্ছে। আগের ৪টি ফেরির সঙ্গে আরও ২টি যুক্ত হওয়ায় এই নৌপথে মোট ৬টি ফেরি চলাচল করছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) ও বাস কাউন্টারগুলোর সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে যমুনা সেতু-সংলগ্ন সড়কে যানজট শুরু হয়। শুক্র ও গতকাল শনিবার যানজট তীব্রতর হয়। এর মধ্যে শনিবারের যানজটে পাবনা-ঢাকা পথে যাতায়াতকারী অনেক বাস আটকে পড়ে। এতে পাবনা, বেড়াসহ বিভিন্ন বাস কাউন্টারে ঢাকাগামী বাসের সংকট দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকাগামী বাস ও ব্যক্তিগত ছোট গাড়িগুলো যমুনা সেতুর যানজট এড়াতে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথের ফেরি পারাপার বেছে নেয়। এতে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত কাজীরহাট ফেরিঘাটে ঢাকাগামী বিভিন্ন যানবাহনের চাপ আছে।

বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ জানায়, ‘আগে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে ৪টি ফেরি চলাচল করত। ঈদ উপলক্ষে এখন আরও ২টি ফেরি বাড়িয়ে মোট ৬টি ফেরি করা হয়েছে। এগুলো হলো ২টি রো রো ফেরি শাহ আলী ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান এবং ৪টি সেমি রো রো ফেরি বাইগার, গৌরী, চিত্রা ও ধানসিঁড়ি। এই ৬টি ফেরি দিয়ে নির্বিঘ্নে যানবাহনের চাপ সামলানো যাচ্ছে। বাসসহ যানবাহনগুলোকে ফেরিঘাটে বেশি দেরি করতে হচ্ছে না।’

কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে ঢাকামুখী আলহামরা পরিবহনের যাত্রী আবু হানিফ বলেন, ফেরিতে ওঠানামা মিলিয়ে আড়াই ঘণ্টার মতো সময় লেগেছে। আর আরিচা থেকে ঢাকা পর্যন্ত তেমন যানজট ছিল না। খুব ভালোভাবে ঢাকা পৌঁছাতে পেরেছেন। অথচ আরও দুই ঘণ্টা আগে রওনা দিয়েও তাঁর পরিচিত একটি পরিবারকে যমুনা সেতু-সংলগ্ন সড়কে ৫-৬ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়।

বিআইডব্লিউটিসির কাজীরহাট ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি চাপ ছিল শনিবার। আমাদের বেশ বেগ পোহাতে হলেও যানবাহনগুলো ভালোভাবে পার করে দিয়েছি। শনিবার আমাদের এই ঘাট হয়ে ফেরিতে ১০১টি বাস, ৪০১টি ছোট গাড়ি ও ৮০টি ট্রাক পার হয়েছে। আর আজ রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৫টি বাস, ১৬টি ট্রাক, ৪২টি ছোট গাড়ি ও ২০০টি মোটরসাইকেল পার হয়েছে।’

বেড়া ও ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী আলহামরা পরিবহনের বেড়া শাখার ব্যবস্থাপক বরকত আলী বলেন, ‘যমুনা সেতুর যানজটে আমাদের কয়েকটি বাস এখনো আটকে আছে। এতে নির্ধারিত সময়ে শুধু আমাদের বাসই নয়, অন্য কোম্পানির বাসগুলোও ঢাকার উদ্দেশে ছাড়তে পারছে না। আর কোনো বাস ঢাকা থেকে বেড়া এসে পৌঁছানোর পর সেই বাস এখন থেকে আমরা কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে ঢাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। বতর্মান অবস্থায় এই পথে যাতায়াতে যাত্রীরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ