কক্সবাজারের সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও কর্মচারী–সংকটে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। ৫০ শয্যার এই হাসপাতালে এক্স-রেসহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ না থাকায় রোগীদের ছুটতে হয় জেলা সদরে।

হাসপাতালে চিকিৎসকের স্বল্পতা বিষয়ে চিকিৎসা কর্মকর্তা হোসেন মো. জুনাঈদ আনসারী প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে দৈনিক পাঁচ শতাধিক রোগীকে সেবা দেওয়ার মতো চিকিৎসক নেই। ২৭ পদের মধ্যে চিকিৎসক আছেন মাত্র ১০ জন। ২৯ নার্সের মধ্যে আছেন ৬ জন। পাঁচ পরিচ্ছন্নতাকর্মীর একজনও নেই। তাতে হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

চিকিৎসকেরা জানান, হাসপাতালে দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদ রয়েছে ১৩৫টি। এখন কর্মরত আছেন ৬২ জন। দীর্ঘদিন ধরে ৭৩টি পদ খালি পড়ে আছে। হাসপাতালে চিকিৎসক-কর্মচারীর সংকটের কথা তুলে ধরে আরএমও বলেন, একটি প্রকল্পের অধীনে বেসরকারি কয়েকটি সংস্থা রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাসপাতালে কয়েকজন চিকিৎসক ও কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে চিকিৎসক-কর্মচারীরা হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ফলে জানুয়ারি মাসের শুরু থেকে হাসপাতালে জরুরি সেবা, সিজার বিভাগ ও আলট্রাসনোগ্রাফি বিভাগ বন্ধ রয়েছে। রেডিওগ্রাফার না থাকায় এক বছর ধরে হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগ বন্ধ আছে। শ্বাসকষ্টের রোগীদের ঠিকমতো অক্সিজেন ও নেবুলাইজেশন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক ও অবেদনবিদ নেই। গত ডিসেম্বর মাসে গাইনি বিভিাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট কেয়া দাস বদলি হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। ফলে সিজারসহ নানা অপারেশন বন্ধ রয়েছে। এখন কেবল স্বাভাবিক প্রসব হচ্ছে।

এ ছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা গত জানুয়ারিতে বদলি হওয়ার পর সে পদে এখন পর্যন্ত কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি লাইনে দেড় শতাধিক রোগী চিকিৎসার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। অধিকাংশ রোগী উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চর্মরোগ ও সর্দি-কাশির সমস্যা নিয়ে এসেছেন। সেবা নিতে এসেছেন প্রসূতি নারীরাও। দুজন চিকিৎসক বিপুলসংখ্যক রোগীকে সেবা দিতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন।

পুরুষ লাইনে দাঁড়ানো বড়ঘোপ ইউনিয়নের ধুরুং বাজারের লবণচাষি আলী আহমদ (৫৫) বলেন, কয়েক বছর ধরে তিনি হাঁপানিতে ভুগছেন। শীতকালে রোগীর তীব্রতা বাড়ে। সকাল ৯টায় হাসপাতালে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। বেলা ১১টা পর্যন্ত চিকিৎসকের দেখা পাননি।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) কাজী করিম নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগী সেবা নিচ্ছেন। তবে জনবল কম থাকায় রোগীরা সেবা পাচ্ছেন না। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চর্মরোগ, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত প্রচুর শিশুরোগী আসে। তবে চিকিৎসক ও নার্সের ঘাটতি থাকায় সবাইকে ঠিকমতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

শূন্যপদে জনবল নিয়োগ দিতে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহলে যোগাযোগ চলছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) রেজাউল হাসান। তিনি বলেন, আগামী মার্চের আগেই জনবলসংকটের নিরসন হতে পারে। তখন রোগীরা পুরোপুরি স্বাস্থ্যসেবা পাবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক ও

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা কেটে যাক

লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকটি নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছিল, তার অবসান হবে আশা করা যায়। নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়ে দুই পক্ষই নীতিগতভাবে একমত হয়েছে যে ২০২৬ সালের রোজার আগে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব। 

সাম্প্রতিক কালে নানা বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপি নেতৃত্বের বিরোধ লক্ষ করা যাচ্ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে বিএনপি–দলীয় প্রার্থী ইশরাক হোসেনের শপথ ইস্যু সেই বিরোধকে আরও বাড়িয়ে দেয়। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সর্বশেষ বৈঠকে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি ও আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করে।

কিন্তু ঈদুল আজহার আগের রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণার ব্যাপারে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। এর আগে বিএনপির নেতৃত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ এনে তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। 

এমনই একটি পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের যুক্তরাজ্য সফরের সময় লন্ডনে তাঁর সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বৈঠকের ঘোষিত যৌথ বিবৃতিতে নির্বাচনের দিনক্ষণের বিষয়টি সামনে এলেও দুই পক্ষের আলোচনা কেবল এর মধ্যে সীমিত ছিল না। প্রধান উপদেষ্টার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী একটি সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠান ও সংস্কারের ধারাবাহিকতার ওপরও জোর দেন তঁারা। 

বৈঠকের ফলাফলকে প্রায় সব দলই স্বাগত জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি ঘোষণার ধরন নিয়ে আপত্তি জানালেও ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সরাসরি বিরোধিতা কেউ করেনি। আমরাও মনে করি, কোনো বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ দেখা দিলে আলোচনার মাধ্যমেই তা সমাধান করতে হবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ যারা সংস্কার ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে, সেটাও গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে হবে। লন্ডন বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার ও বিচারকাজ দৃশ্যমান করার ওপর জোর দিয়েছেন। ভবিষ্যতে যাতে দেশে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থার পুনরাগমন না ঘটে, সে জন্য রাষ্ট্র সংস্কারের কাজটি ত্বরান্বিত করা জরুরি। আবার অপরাধ করে যাতে কেউ পার না পায়, সে জন্য জুলাই-আগস্টের হত্যার বিচারও অপরিহার্য। কিন্তু এই দুটি বিষয়কে কোনোভাবে নির্বাচনের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা সমীচীন হবে না।

যেসব সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে নির্বাচন ও সংবিধানের বিষয়টি জড়িত নয়, সেগুলো সরকার নির্বাহী আদেশেও বাস্তবায়ন করা যায়। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে তেমন বাধা আসার কথা নয়। তবে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে মনে রাখতে হবে, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার অর্থ এই নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। এখন নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাই বড় চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সহযোগিতা না থাকলে সরকার একা কাজটি করতে পারবে না। 

ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর অন্তর্দলীয় ও আন্তদলীয় সংঘাতের যেসব খবর পাওয়া যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মেনে না চললে কোনো সংস্কারই কাজে আসবে না। আমরা আশা করি, দিন-তারিখের বিষয়ে সমঝোতার পর নির্বাচনের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন। রাজনীতিতে মত ও পথের পার্থক্য থাকবে; তাই বলে একে অপরকে ‘শত্রুজ্ঞান’ করার পুরোনো সংস্কৃতি থেকে তাদের বেরিয়ে আসতে হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ