নতুন ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’ ঢাকায় আসছে
Published: 23rd, February 2025 GMT
১৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তি পেয়েছে ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’ সিরিজের নতুন ছবি ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’। মুক্তির আগে থেকেই আলোচনার ঝড় তোলা ছবিটি মুক্তির পর বক্স অফিস মাতিয়ে চলেছে। এবার বাংলাদেশের ভক্তরাও নড়েচড়ে বসতে পারেন। আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশের স্টার সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেতে চলেছে কাঙ্ক্ষিত এই ছবি। একই দিনে আরও একটি ছবি মুক্তি দিচ্ছে স্টার সিনেপ্লেক্স। সেটি হলো আলোচিত জাপানি অ্যানিমেশন ছবি ‘মাই হিরো একাডেমিয়া: ইউ আর নেক্সট’। মাল্টিপ্লেক্সটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’
২০২৫ সালের প্রথম সুপারহিরো সিনেমা হিসেবে পর্দায় এসেছে ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ব্রেভ নিউ ওয়ার্ল্ড’। মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের ৩৫তম সিনেমা এটি। স্টিভ রজার্সের অবসরের পর ক্যাপ্টেন আমেরিকার দায়িত্ব পেয়েছেন স্যাম উইলসন। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নতুন জেগে ওঠা ‘তিয়ামুত’ দ্বীপের আধিপত্য নিয়ে বিশ্বরাজনীতির চাপে কীভাবে ক্যাপ্টেন আমেরিকার দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন স্যাম? সেই প্রশ্নের উত্তর থাকবে এই সিনেমায়। এই সিনেমায় প্রথমবারের মতো দেখা যাবে রেড হাল্ককে। অভিনেতা উইলিয়াম হার্টের মৃত্যুতে সেই চরিত্রে অভিনয় করছেন ‘ইন্ডিয়ানা জোনস’খ্যাত অভিনেতা হ্যারিসন ফোর্ড।
জুলিয়াস ওনাহ পরিচালিত এই সিনেমার গল্প শুরু হবে ‘দ্য ফ্যালকন অ্যান্ড দ্য উইন্টার সোলজার’ সিরিজের পর থেকে। সেখানে স্যাম উইলসন স্টিভ রজার্সের দেওয়া ঢালটি গ্রহণ করেন। সেই সিরিজের সফলতা দেখে আশা করা হচ্ছে, সিনেমাটি তার ফ্যানবেজের কাছ থেকে শক্তিশালী সমর্থন পাবে। বিশ্বব্যাপী ভক্তরা এই সিনেমাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করছেন। বিশেষ করে নতুন ক্যাপ্টেন আমেরিকার ভূমিকায় অ্যান্থনি ম্যাকির অভিনয় এবং হ্যারিসন ফোর্ডের রেড হাল্ক চরিত্র নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। বক্স অফিসে দারুণ সূচনা করেছে ছবিটি।
‘মাই হিরো একাডেমিয়া: ইউ আর নেক্সট’
অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের দুনিয়ায় জাপান পৃথিবীকে কম কিছু দেয়নি। ওসামু তেজুকা তো কেবল শুরু! এরপর হায়াও মিয়াঝাকি, ইসাও তাকাহাতা, কাতসুহিরো ওতমো—এমন আরও কত নামই রয়ে গেছে বাকি। হালের আরেকটি জনপ্রিয় ছবি ‘মাই হিরো একাডেমিয়া ম্যাঙ্গা’। এ–যাবৎ মুক্তি পাওয়া এই সিরিজের দুটি ছবি জাপানে দারুণ সাড়া পেয়েছে। মন জিতে নিয়েছে জাপানের বাইরের বিভিন্ন দেশের দর্শকদেরও।
এবার এসেছে আরেকটি ছবি ‘মাই হিরো একাডেমিয়া: ইউ আর নেক্সট’, যা জনপ্রিয় মাই হিরো একাডেমিয়া সিরিজের দ্বিতীয় ফিচার ফিল্ম। এটি কোহেই হোরিকোশির তৈরি মাঙ্গা সিরিজের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত। অ্যাকশন ফ্যান্টাসি ঘরানার এই সিনেমা পরিচালনা করেছেন টেনসাই ওকামুরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য প ট ন আম র ক এই স ন ম এক ড ম য়
এছাড়াও পড়ুন:
ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে ৬৮% কারখানা
দেশের তৈরি পোশাক খাতের ৩৮৫টি কারখানার ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন ন্যূনতম মজুরি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেছে ৬৮ শতাংশ কারখানা। বাকি ৩২ শতাংশ বিভিন্ন কারণে সরকারের সর্বশেষ ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এসব কারখানার মধ্যে ২২ শতাংশ আগের চেয়ে মজুরি বাড়িয়েছে।
সাসটেইনেবল টেক্সটাইল ইনিশিয়েটিভ: টুগেদার ফর চেঞ্জ (স্টিচ) এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে এ গবেষণা করে। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে জরিপ করা হয়। স্টিচ একটি বহুদেশভিত্তিক কর্মসূচি, যা তৈরি পোশাক এবং বস্ত্র খাতের সরবরাহ চেইনে থাকা শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে কাজ করে। নেদারল্যান্ডস সরকারের সহায়তায় বাংলাদেশে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভ, মনডিয়া এফএনভি এবং ফেয়ার ওয়্যার ফাউন্ডেশন।
শ্রমিক সংখ্যা বিবেচনায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের হার বেশি। জরিপে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন ১ হাজার ১১৩ জন শ্রমিক। তাদের মধ্যে ৮১ শতাংশ ন্যূনতম মজুরি পান বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) থাকা সব কারখানা এবং ইপিজেডের বাইরে থাকা বড় কারখানাগুলো ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেছে। যেসব কারখানা বাস্তবায়ন করেছে, তাদের ৮০ শতাংশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য।
জরিপের ফল নিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে শ্রমিক সংগঠন, উদ্যোক্তা, সরকার ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিনিধি এবং বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করেন। তারা পোশাকশিল্পের ব্যয়, শ্রমিকদের জীবনমান, তাদের ব্যয়ের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে আরও গবেষণার সুপারিশ করেন। তারা ন্যূনতম মজুরির ওপর শিল্পের অংশীজন নিয়ে সংলাপেরও পরামর্শ দেন।
জরিপে ঢাকার ১৩৫টি, গাজীপুরের ১২৮টি, নারায়ণগঞ্জের ৭১টি, চট্টগ্রামের ৪৬টি, ময়মনসিংহের ৪টি এবং কুমিল্লার ১টি কারখানাকে নমুনা হিসেবে নেওয়া হয়। শ্রমিকদের মধ্যে ৬০ শতাংশ নারী এবং ৪০ শতাংশ পুরুষ। শ্রমিকের বাইরে সরকার, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, উদ্যোক্তা, বাণিজ্য সংগঠন এবং নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তৈরি পোশাক খাতের ওপর সরকার গঠিত ন্যূনতম মজুরি বোর্ড ইপিজেডের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৮০০ টাকা নির্ধারণ করে। ইপিজেডের বাইরের কারখানার জন্য নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকা। এর আগে ২০১৮ সালে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয় ৮ হাজার টাকা। উল্লেখ্য, সব গ্রেডে আলাদা ন্যূনতম মজুরি রয়েছে। তৈরি পোশাক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শিল্প খাত। এ খাতে শ্রমিকের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি, যার অর্ধেকের বেশি নারী। কারখানার সংখ্যা চার হাজারের বেশি। এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য।
গবেষণার ফলাফলের বিষয়ে এথিকাল ট্রেডিং ইনিশিয়েটিভের পরিচালক (কর্মসূচি ও গবেষণা) মুনীর উদ্দীন শামীম সমকালকে বলেন, নমুনাভুক্ত যেসব কারখানা ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে পারেনি তার বেশির ভাগই মাঝারি বা ছোট কারখানা। অন্যদিকে ইপিজেডভুক্ত এবং বড় কারখানার বেশির ভাগ অতি অল্পসময়ে বাস্তবায়ন শুরু করতে পেরেছে। বাস্তবায়নকারী কারখানার ৮০ শতাংশ বিজিএমইএ অথবা বিকেএমইএর সদস্য। এর মানে তারা সরাসরি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত। এ প্রবণতার একটি অর্থ হচ্ছে– কারখানাগুলোর বিদ্যমান সক্ষমতা মজুরি বাস্তবায়নে একটি বড় ফ্যাক্টর।
তিনি বলেন, গবেষণায় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ উঠে এসেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো–পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, মজুরি বাড়ার হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্রেতাগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে পণ্যের দাম না বাড়ানো, প্রয়োজনীয় পুঁজির অভাব, পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যবস্থা না থাকা, সরকারি সহযোগিতার অভাব, কিছু ক্ষেত্রে মালিকদের অনিচ্ছা, নিয়মিত ও ধারাবাহিক কার্যাদেশ না থাকা ইত্যাদি। অনেকে বলেছেন, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ সেবা খাতে ক্রমাগত মূল্যস্ফীতির কারণে তাদের পরিচালন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সামগ্রিকভাবে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে। অংশীজনরা আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করেছেন। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনায় এমন মত এসেছে যে, ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে তদারকি সংস্থাগুলোর তেমন কার্যকর উদ্যোগও দেখা যায় না। এছাড়া কার্যকর শ্রমিক প্রতিনিধিত্বের অভাব রয়েছে। কারখানা পর্যায়ে একটি কার্যকর শ্রমিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা গেলে এবং মালিক-শ্রমিক পক্ষের মধ্যে কার্যকর সামাজিক সংলাপের সংস্কৃতি তৈরি করতে পারলে পারস্পরিক জবাবদিহিতার মধ্য দিয়ে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন আরও সহজতর হয়ে উঠবে বলে তারা মনে করেন।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, যারা ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করতে পারছে না, তাদের ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হলো– ক্রেতা ন্যায্য দাম দিচ্ছে না। তিনি জানান, কোনো কোনো কারখানার মালিক শ্রমিকদের নিয়োগের সময় ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের অক্ষমতার কথা আগেই বলে নেন। তবে ন্যূনতম মজুরি সব কারখানার বাস্তবায়ন করা উচিত। এ কারণে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং ব্র্যান্ড–ক্রেতাদের সংগঠনগুলোকে পোশাকের দাম বাড়ানোর জন্য মধ্যস্ততা করতে হবে।
জরিপে পাওয়া আরও কিছু তথ্য
ন্যূনতম মজুরি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন না করা কারখানার ৩৩ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের পরিচালন ব্যয় আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ২৪ শতাংশ জানিয়েছে, তারা ব্র্যান্ড ক্রেতাদের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাননি। যারা বাস্তবায়ন করেছেন, তাদের ৭৫ শতাংশ খরচ বাড়ার কথা জানিয়েছেন। জরিপের আওতায় থাকা ৮৩ শতাংশ কারখানা জানিয়েছে, নতুন মজুরি বাস্তবায়নে তারা সরকার কিংবা ক্রেতার সহযোগিতা পাননি। ইপিজেডের ১৮ শতাংশ এবং ইপিজেডের বাইরের ৩৩ শতাংশ কারখানা ক্রেতারা কিছুটা দাম বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে। শ্রমিকরা জানিয়েছেন, তাদের মজুরি বাড়লেও ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। কেননা বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে বেশি হারে। অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে নারীর বেতনের বৈষম্য রয়েছে।