অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মো. নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগ পত্র দিয়েছেন তিনি।

নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর তাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম লিখেছেন, দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসের অন্যতম ধারালো রাজনৈতিক মন নাহিদ ইসলাম। তার বয়স মাত্র ২৬ এবং ইতিমধ্যে একজন নৃশংস স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে একটি জনপ্রিয় বিদ্রোহ নেতৃত্ব দিয়েছেন।

তিনি আরও লিখেন, তিনি দেশের রাজনীতিতে আরও কয়েক দশক বড় বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকবেন। আল্লাহ জানে, একদিন তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে সদ্য পদত্যাগী নাহিদ ইসলামকে নিয়ে আগামীর যাত্রায় শুভ কামনা জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এক ফেসবুক পোস্টে লিখেন, সহকর্মী, সহযোদ্ধার সাথে সরকারে শেষ দিন। আগামীর যাত্রা শুভ হোক।

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম নাহিদ ইসলামকে ট্যাগ করে দেওয়া পোস্টে লিখেছেন, এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার। রাজপথে স্বাগতম সহযোদ্ধা।

৫০ মিনিটে সারজিসের স্ট্যাটাসে প্রায় ৮৩ হাজার রিঅ্যাক্ট এবং প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কমেন্ট পড়েছে। তার কমেন্টে বেশিরভাগ আইডি থেকে নাহিদ ইসলামকে রাজপথে স্বাগতম জানানো হচ্ছে।

এর আগে প্রধান উপদেষ্টা বরাবার পাঠানো পদত্যাগপত্রে নাহিদ ইসলাম লেখেন, আমার সশ্রদ্ধ সালাম গ্রহণ করুন। প্রথমেই আমি জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পরে ছাত্র-জনতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরিবর্তিত নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য আপনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা। বৈষম্যহীন, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত বাংলাদেশ পড়তে আপনার নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদে আমাকে সুযোগ দানের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। গত ৮ আগস্ট শপথ নেওয়া উপদেষ্টা পরিষদে আমি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাই। নানামুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যেও আপনার নেতৃত্বে দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থেকেছি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমার ছাত্র-জনতার কাতারে উপস্থিত থাকা উচিত মর্মে আমি মনে করি। ফলে আমি আমার দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়া সমীচীন মনে করছি।

এমতাবস্থায়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা পদ থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি। আমার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে মহোদয়কে সবিনয় অনুরোধ করছি।

এদিকে পদত্যাগের পর প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমি মনে করেছি সরকারে থাকার চেয়ে রাজপথে থাকা বেশি প্রয়োজন, তাই পদত্যাগ করেছি। আমি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি, সব কমিটি থেকে ইস্তফা দিয়েছি।

নাহিদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেই। তখন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করা আমাদের কাছে মনে হয়েছিল যৌক্তিক। গত সাড়ে ছয় মাসের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার কাজ করছে। হয়ত আমরা আশানুরূপ ফলাফল এখনো পাইনি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে সরকারে একটা স্ট্যাবিলিটি এসেছে।

নাহিদ আরও বলেন, ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সরকারের বাইরে দেশের যে পরিস্থিতি, সেই পরিস্থিতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তি উত্থানের জন্য আমার রাজপথে থাকা প্রয়োজন। ছাত্র-জনতার কাতারে থাকা প্রয়োজন,’ বলেন সদ্য পদত্যাগ করা এই উপদেষ্টা।

প্রসঙ্গত, ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হওয়ার কথা রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করছে। এই দলের নেতৃত্ব দেবেন নাহিদ ইসলাম। সে কারণে তিনি উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন হ দ ইসল ম পদত য গ গণঅভ য ত থ ন ন হ দ ইসল ম উপদ ষ ট র র জন ত ক সরক র র ন র জন র জন য র জপথ

এছাড়াও পড়ুন:

মাহফুজ-আসিফের পদত্যাগ কার্যকর তফসিল ঘোষণার পর

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

আরো পড়ুন:

মাহফুজ–আসিফের মঙ্গল কামনা প্রধান উপদেষ্টার

পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ

প্রেস সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম। তাদের পদত্যাগ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে। এর আগ পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।”

মাহফুজ আলম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের ৩ জন প্রতিনিধি জায়গা পান।

এর মধ্যে নাহিদ ইসলাম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম উপদেষ্টা, পরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান। পরে শ্রম উপদেষ্টার পরিবর্তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

মাহফুজ আলম শুরুতে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হন। পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাদিকে হত্যার চেষ্টায় নিন্দা ও উদ্বেগ এনসিপির 
  • মাহফুজ-আসিফের পদত্যাগ কার্যকর তফসিল ঘোষণার পর